Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

মুসলিম উচ্ছেদ অভিযান : আসাম মডেল

Icon

পামেলা ফিলিপোস

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মুসলিম উচ্ছেদ অভিযান : আসাম মডেল

বিজেপিশাসিত রাজ্য আসামে অনেক কিছু ঘটছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা, যিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে তিনি সংবিধানের ঊর্ধ্বে। তিনজন ‘অভিযোগকারীর’ দায়ের করা আবেদনের ভিত্তিতে, যাদের মধ্যে অন্তত দুজন বিজেপির সদস্য, আসাম পুলিশ মে মাসের গোড়ার দিকে দি ওয়্যারের সিদ্ধার্থ বরদরাজন এবং করণ থাপারের বিরুদ্ধে ‘অস্থিরতা উসকে দেওয়া, জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষুণ্ন করা এবং শত্রুভাবাপন্ন স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত বিবরণ ছড়িয়ে দেওয়ার’ জন্য, অথবা অন্য কথায়, আসাম রাজ্য যে সাম্প্রদায়িকভাবে চলছে তার বিশ্লেষণ, মন্তব্য ও নথিপত্র প্রকাশের কাজ করার জন্য এফআইআর দায়ের করে।

কাকতালীয়ভাবে বা সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবে, এফআইআরগুলো এমন একসময়ে করা হয়েছিল, যখন মুখ্যমন্ত্রী তার রাজ্যের একাধিক সীমান্তবর্তী জেলায় ‘মিয়া’ নামকরণ করা একশ্রেণির মানুষকে উচ্ছেদ করার জন্য একটি অভিযান শুরু করার প্রক্রিয়ায় ছিলেন।

এই ‘মিয়া’ শব্দটি মুসলমানদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় স্থান হয়ে উঠেছে, যারা কয়েক দশক ধরে এ অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। কিন্তু এখন ক্ষমতাসীন দল তাদের সন্দেহের চোখে দেখছে। এখন তাদের সহজেই ‘বিদেশি’, এমনকি ‘ঘুসপায়ি’ (অনুপ্রবেশকারী) হিসাবে অভিহিত করা হতে পারে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা যেখানে বসতি স্থাপন করেছিল, কখনো সেখান থেকে তাদের সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। এটি করার জন্য যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তা একই সঙ্গে বর্বরোচিত এবং চরমভাবে বেআইনি। জনসাধারণের উদ্দেশে উচ্ছেদের ঘোষণা করা হয় এবং বিনা নোটিশে বুলডোজার আসে, যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের বাসস্থানকে ধুলায় পরিণত করে। প্রকৃতিও তাদের প্রতি সদয় হয়নি, রাজ্যজুড়ে দ্রুত প্রবাহিত নদীর পানি প্রায়ই মাটি ভাসিয়ে নিয়ে যায়, যার ওপর একসময় তাদের ঘরবাড়ি ছিল। এ পরিস্থিতিতে তাদের পারিবারিক নথিপত্র টিকিয়ে রাখাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

বেঁচে থাকার জন্য উঁচু স্থানে যেতে বাধ্য হয়ে কখনো কখনো তাদের সরকারি জমিতে বসতি স্থাপন করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। ফলে তারা রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে সন্ত্রাস-আক্রান্ত জনগণকে বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে ঠেলে দেওয়ার আগে তাদের মামলার প্রতিনিধিত্ব করার জন্যও কোনো সুযোগ দেয়নি আসাম রাজ্য। যার ফলস্বরূপ প্রায়ই তাদের দুই দেশের মধ্যে অবস্থিত নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নিতে হয়।

আসামের এই অসাংবিধানিক, নিষ্ঠুর মডেলের প্রতি করপোরেট মিডিয়ার আচরণ বিবেচনা করতে হবে। এসব ঘটছে এমন একসময়ে, যখন আসামের লাখ লাখ প্রান্তিক মানুষের জীবনের জাল ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। আসামের গণমাধ্যমগুলো ভিত্তিহীন এই অযৌক্তিক চিৎকারকে আরও বাড়িয়ে তুলছে যে, বাংলাদেশ থেকে আসা হাজার হাজার মুসলিম অনুপ্রবেশকারী এই রাজ্যে জড়ো হচ্ছে। অসমিয়া ভাষা ও সংস্কৃতির আসন্ন ধ্বংসের কথা বলে এই সাম্প্রদায়িক মেরূকরণ এবং সাংস্কৃতিক উদ্বেগ প্রচারের মাধ্যমে কর্মজীবন গড়ে তোলা শর্মার মতো রাজনীতিকদের জন্য এর চেয়ে বেশি কাঙ্ক্ষিত আর কিছু হতে পারে না, বিশেষ করে রাজ্য নির্বাচনের সময়।

চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে গোডি মিডিয়ায় আস্থাশীলদের মধ্যে এ কথা ছড়িয়ে পড়ে যে, তাদের পরবর্তী কাজ পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য সৈয়দা হামিদকে আক্রমণ করা। কারণ তিনি তথ্যানুসন্ধানকারী প্রতিনিধিদলের অংশ হিসাবে আসামে এ কথা বলার সাহস করেছিলেন যে, নাগরিক নির্বিশেষে ভারতের প্রত্যেক মানুষের জীবনের অধিকার ভোগ করার বিষয়টি সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে অন্তর্নিহিত একটি নীতি।

২৬ আগস্ট দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস এবং কারওয়ান-ই-মহবাত আয়োজিত ‘পিপলস ট্রাইব্যুনাল অন অসম ইভিশনস, ডিটেনশনস অ্যান্ড দ্য রাইট টু বিলং’-এ সৈয়দা হামিদের যখন বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল, তখন তাকে তরুণ সাংবাদিকদের চিৎকারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যারা জানতে চেয়েছিল-কেন তিনি ‘ঘুসপায়িদের’ (অনুপ্রবেশকারী) সমর্থন করছেন। তিনি শ্রোতাদের জানিয়েছিলেন, যখন এই লটটি তাদের মাইক্রোফোনগুলো তার মুখে ছুরির মতো করে ধরেছিল, তখন তিনি কেমন অনুভব করেছিলেন। দাবি করেছিলেন, তিনি অবিলম্বে নিজেকে ব্যাখ্যা করবেন।

পরে সেই সন্ধ্যায়, প্রাইম টাইম চ্যাটটি আনপুল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এই তরুণ-তরুণীরা তাদের চ্যানেল ও অ্যাঙ্করদের নিছক হাতের পুতুল ছিল।

দি ওয়্যার থেকে ভাষান্তরিত

পামেলা ফিলিপোজ : ভারতীয় সাংবাদিক

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম