জেলা পরিষদের কর্মীদেরও পেনশন চাই
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জেলা পরিষদ। কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি জেলা পরিষদ জেলার স্থানীয় উন্নয়ন, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডসহ মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো পূরণে যুগ যুগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মাঠ পর্যায়ের প্রকল্প তদারকি, রাস্তাঘাট ও জনসেবামূলক অবকাঠামো নির্মাণ, স্থানীয় বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্রিজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরসহ সার্বিক উন্নয়ন এবং দুর্যোগ মোকাবিলা, অসচ্ছল ব্যক্তিদের অনুদান প্রদান, সরকারের সব নির্দেশনাসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে। এ ছাড়াও প্রাচীনতম ডাকবাংলো, যাত্রীছাউনি সেবা দিয়ে আসছে। অথচ সরকারি কর্মচারীদের মতো জেলা পরিষদ কর্মচারীদের অবসরের পর কোনো স্থায়ী আর্থিক সুবিধার নিশ্চয়তা নেই। কারণ, এখন পর্যন্ত জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সরকারি পেনশন সুবিধার আওতায় আসেনি। দীর্ঘদিন চাকরি শেষে এককালীন সামান্য অর্থ বা অনুদান পেয়ে তারা কর্মজীবনের পরবর্তী সময়ে আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হন। স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটি সৃষ্টির পর থেকে জেলা পরিষদের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসর নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন।
পেনশন সুবিধা না থাকার কারণ হিসাবে বলা হয়, জেলা পরিষদ চাকরি ‘স্থানীয় সরকার পরিষদ’ হিসাবে বিবেচিত হয়, সরাসরি সরকারি চাকরি নয়। পেনশন কেবল একটি আর্থিক সুবিধা নয়। এটি কর্মজীবনের পরিশ্রমের স্বীকৃতি এবং অবসরের পর মর্যাদাপূর্ণ জীবনের নিশ্চয়তা। সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক বাহিনী, এমনকি অনেক স্থানীয় সংস্থার কর্মচারীরাও এখন পেনশন পাচ্ছেন; অথচ জেলা পরিষদের কর্মচারীরা পুরোপুরি এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এতে করে জেলা পরিষদের কর্মীদের মনোবল ও প্রশাসনিক দক্ষতায় চরমভাবে প্রভাব ফেলছে। এ বৈষম্যের অবসান হওয়া জরুরি।
জেলা পরিষদের পেনশন সুবিধা চালু করার জন্য সরকারের নীতিগত পদক্ষেপ হিসাবে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন, ২০০০-এ সংশোধন এনে জেলা পরিষদ কর্মচারীদের জন্য পেনশন বিধান সংযোজন করা যেতে পারে। একই সঙ্গে একটি ‘জেলা পরিষদ কর্মকর্তা-কর্মচারী (পেনশন) বিধিমালা’ প্রণয়ন করাও প্রয়োজন। যেখানে চাকরির মেয়াদ, অবসরকালীন সুবিধা, পেনশন হিসাবের ধরন ইত্যাদি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, জেলা পরিষদের পূর্বতম প্রতিষ্ঠান ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে এলজিডি, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়ে তাদের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা পেনশন পেলেও জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেনশন থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন টেকসই করতে হলে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা জরুরি। জেলা পরিষদ সেই কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। আর এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেই স্তম্ভের ভিত্তি। তাদের জীবনের পরবর্তী সময়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত প্রকৃত বিকেন্দ্রীকরণ ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়।
জেলা পরিষদের পেনশন সুবিধা চালু করার জন্য দুটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। ১. সরকারি কোষাগার থেকে অর্থায়ন অর্থাৎ সরকারি পেনশন কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করা। ২. জেলা পরিষদ পেনশন তহবিল গঠন করে পরিষদের নিজস্ব আয় ও সরকারি অনুদান থেকে অর্থ সংগ্রহ করা। জেলা পরিষদে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেবা রেকর্ড ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি প্রত্যেকের চাকরির ধরন, যোগদানের তারিখ ও অবসরের বয়স অনুযায়ী পেনশন হিসাব তৈরি করা যেতে পারে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত কাজ তদারকি করার জন্য একটি পেনশন সেল গঠন করা যেতে পারে।
জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি কার্যকর পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তন সময়ের দাবি। সরকারের সদয় দৃষ্টি ও দ্রুত নীতিগত সিদ্ধান্তই পারে দীর্ঘদিনের জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বঞ্চনার অবসান ঘটাতে।
লেখক ও সংগঠক
