শীতের শুরুতে শিশুর স্বাস্থ্যে চাই বাড়তি যত্ন
এমদাদুর রহমান উদয়
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শীতকাল বাংলাদেশের আবহমান ঋতুচক্রের একটি মনোরম অধ্যায়। গাছপালার সবুজ রূপে নতুন মাত্রা যোগ হয় কুয়াশার চাদরে, সকালে শিশিরভেজা ঘাসে নরম আলোর ছোঁয়া-সবকিছুই যেন প্রকৃতিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলে। কিন্তু এই শীতের সৌন্দর্যের মাঝেই লুকিয়ে থাকে এক নীরব বিপদ-বিশেষ করে শিশুর জন্য। তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন, শুষ্ক বাতাস, সূর্যালোকের অভাব এবং ভাইরাসজনিত সংক্রমণ শীতের শুরুতেই ছোটদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ সময়টাতে শিশুর যত্নে বাড়তি সচেতনতা অপরিহার্য।
শীতের শুরুতে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সক্রিয়তা বেড়ে যায়। বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় শ্বাসযন্ত্রের শুষ্কতা তৈরি হয়, যা সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসযন্ত্রের রোগ ডেকে আনে। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে। সামান্য ঠান্ডা লাগা থেকেও শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়ার মতো জটিল অবস্থা তৈরি হতে পারে। অনেক সময় অভিভাবকরা ছোটখাটো জ্বর বা কাশিকে হালকাভাবে নেন, যা পরে বিপজ্জনক হিসাবে রূপ নেয়। তাই শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হলে বা জ্বর তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শীতের শুরুতে শিশুদের শরীরকে উষ্ণ ও শক্ত রাখতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে খাদ্যাভ্যাসে। শিশুর খাবারে ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ ও পর্যাপ্ত তরল থাকা জরুরি। শীতের সবজি যেমন গাজর, বিট, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, পালংশাক-এগুলোয় প্রচুর ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি ও আয়রন থাকে, যা রোগ প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর। অনেক সময় ঠান্ডার কারণে শিশু পানি খেতে চায় না। কিন্তু শরীরে পানি কমে গেলে হজমে সমস্যা ও ত্বকের শুষ্কতা বাড়ে। তাই গরম পানি বা স্যুপজাতীয় খাবার খাওয়ানো উচিত। এছাড়া ডিম, দুধ, মাছ, গোশত ও ফলমূল নিয়মিত খাওয়ালে শিশু শারীরিকভাবে শক্তিশালী হয় এবং ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। শীতের সময় পোশাক শিশুর স্বাস্থ্যের বড় নিয়ামক। অতিরিক্ত ভারী বা আঁটোসাঁটো পোশাকের বদলে শিশুকে এমনভাবে জামা পরানো উচিত যাতে সহজে তাপমাত্রা সামঞ্জস্য করা যায়। তবে শিশুকে অতিরিক্ত কাপড়ে মোড়ানোও বিপজ্জনক, এতে ঘাম জমে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। শিশুর বয়স ও শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা নেওয়া উচিত।
শীত প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ালেও শিশুদের জন্য তা হতে পারে নানা রোগের মৌসুম। তাই শীতের শুরুতেই তাদের জন্য প্রয়োজন বাড়তি যত্ন, সঠিক পুষ্টি, পর্যাপ্ত পানি, উপযুক্ত পোশাক, পরিচ্ছন্নতা এবং সময়মতো চিকিৎসা। একজন সচেতন অভিভাবকই পারেন শিশুর শৈশবকে সুরক্ষিত রাখতে-যাতে শীত হয় আনন্দের, নয় অসুস্থতার বার্তা।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
