ভালোবাসার নাম ফায়ার সার্ভিস
আনোয়ার বারী পিন্টু
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কোথায় যেন পড়েছিলাম- দমকল বাহিনী ‘সেভ ইউরসেলফ ফার্স্ট, দেন সেভ আদারস’ মন্ত্রে দীক্ষিত হলেও এ নিয়ম ভাঙতে তারা পারদর্শী।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃত্যুকবলিত মানুষকে বাঁচানোর প্রাণান্ত চেষ্টায় নামে তারা। সম্প্রতি এমনটিই ঘটেছে ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোহেলের ক্ষেত্রে।
বনানী এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় উদ্ধার অভিযানে আহত হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোহেল রানা। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে।
মানুষের প্রাণ বাঁচানোর আত্মতৃপ্তি ছাড়া তেমন একটা পাওনা নেই ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। তাদের কোনো বাড়তি বেতন নেই, নেই বোনাস, নেই কোনো সম্মাননা! তবু লড়ছে তারা।
নানা সংকটের বৃত্ত ভেঙে সর্বনিম্ন এক মিনিটের মধ্যেই বেরিয়ে যান গন্তব্যে। দুর্যোগের ঘূর্ণিপাকে দাঁড়িয়ে গড়ে দেন জীবনের নানা গল্প। মৃত্যুমুখী মানুষদের প্রায় থাবা মেরে ছিনিয়ে আনার লড়াইয়ে রত হন। সম্ভবত এই মুহূর্তে মানুষের হৃদয় মণিতে বিশাল স্থান দখল করে নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বিভাগ এবং এর কর্মী সোহেল রানা।
এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর খন্দকার আবদুল জলিল বলেছেন, ‘আগুন লাগা একটি ঘরের ভেতর একজন ব্যক্তি আটকা পড়েছে, আগুন উপেক্ষা করে তাকে বাঁচাতে গেলে নিজের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রবল। এ অবস্থায় যদি ফায়ার ফাইটারদের জিজ্ঞেস করা হয়, কে যেতে চাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে?
অন্তত ১০০ জওয়ান হাত তুলে এগিয়ে আসবে। তখন মুশকিল হয়ে যায়- কাকে রেখে কাকে পাঠানো হবে ভেতরে?’ স্মৃতিচারণ করতে এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত আগুন লাগার ঘটনায় আটকে পড়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের হতাহত হওয়ার ঘটনাও কম ঘটেনি। শুধু তাই নয়, চোখের সামনে মানুষকে মরতে দেখে শক খেয়ে পাগল হয়ে গেছেন অনেকেই।
অনেকে আবার পোস্ট ট্রামাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)-এ ভুগে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য হয়েছেন।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অবদান নিঃসন্দেহে তুলনাহীন। তবে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক সম্মাননা এক ধরনের প্রাপ্তি বা তৃপ্তিদায়ক শক্তি হতে পারে।
এমন উপলব্ধি থেকে গত পাঁচ বছর থেকেই উদ্ধারকর্মীদের দল ‘হোয়াইট হেলমেট’ বেশ আলোচিত হয়েছিল নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে এ সংস্থাটি ৯৯ হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে।
আমাদের ‘ফায়ার সার্ভিস’ মানবিক এবং সামাজিক সংহতির লড়াইয়ে ‘হোয়াইট হেলমেট’ থেকে খুব বেশি দূরে নয়। একদিন ‘হোয়াইট হেলমেট’ শান্তিতে নোবেল পাবে, এটি আমরা বিশ্বাস করি। একই সঙ্গে বিশ্বাস করি, শান্তি-ভালোবাসায় অনন্য বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সও একদিন বিশ্বসেরা শান্তি পুরস্কার নিয়ে আসবে। সেই দিন বেশি দূরে নয়।
সংবাদকর্মী, ঢাকা
