Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

লাগামহীন খেলাপি ঋণ পরিত্রাণের উপায় কী

Icon

মো. রেজাউল ইসলাম

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

লাগামহীন খেলাপি ঋণ পরিত্রাণের উপায় কী

যখন কোনো কারণে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর কোনো ঋণ বা ঋণের কিস্তি ফেরত পাওয়া যায় না বা সম্ভব হয় না; তখন ওই ঋণকে খেলাপি ঋণ বলে।

বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা এই খেলাপি ঋণ। অনেক পদ্ধতি, কৌশল ও প্রচেষ্টা অবলম্বনের পরও তা আজও হাতের নাগালের বাইরে।

সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, ব্যাংক খাতের ১২-১৩ শতাংশই ঋণ খেলাপি হয়েছে, যা টাকার অঙ্কে লাখো কোটিতে পৌঁছেছে অনেক আগেই। আর এই লাগামহীন খেলাপি ঋণের জন্যই অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে একধরনের বন্ধ্যত্ব।

খেলাপি ঋণের জন্য সাধারণত ব্যাংকে যখন টাকার পরিমাণ কমে যায়, আমরা সেটাকে তারল্য সংকট বলি। আর যখন তারল্য সংকট হয় তখন ব্যাংকের ঋণ দেয়ার সক্ষমতাও কমে যায়।

তখন যারা বিনিয়োগে যেতে চান; তারা ঋণ পান না, তাই বিনিয়োগে যেতে পারেন না। আর বিনিয়োগ কমে গেলে অর্থনীতির ওপর নানা প্রভাব পড়ে। ফলে অর্থনীতির ‘গ্রোথ’ কমে যায়। কমে যায় কর্মসংস্থানের সুযোগ।

এমনকি অবকাঠামোগত উন্নয়নেও পড়ে এর বিরূপ প্রভাব। সামান্য মাত্রায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও পরিবর্তন করতে গেলেও তখন অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। অথচ আকাশচুম্বী এই খেলাপি ঋণ যদি না থাকত তাহলে কিন্তু আমরা অনায়াসে বড় বড় প্রকল্প কোনো প্রকার বিদেশি ঋণ বা সাহায্য ছাড়াই সম্পন্ন করতে পারতাম।

আমাদের অর্থনীতিতে অভিশপ্ত খেলাপি ঋণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। কী কারণে সৃষ্টি হয়েছে এই খেলাপি ঋণের; আসুন, সে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক- ১. রাজনৈতিক নেতা ও ব্যাংকের পরিচালকদের প্রভাব; ২. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা; ৩. পর্যাপ্ত জামানতের অভাব; ৪. খরা-বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ; ৫. প্রকল্পের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ বিবেচনা না করা; ৬. পর্যাপ্ত আইনের অভাব; ৭. মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতা; ৮. সরকারের ট্যারিফ নীতি; ৯. বন্ধকি সম্পত্তির বিক্রয়জনিত জটিলতা ইত্যাদি।

তাহলে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? কীভাবে আমরা এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে পারি; এবার আসুন, সে সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেয়া যাক-

১. নৈতিকতার চর্চা করা; ২. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক নেতা এবং ব্যাংক পরিচালকদের প্রভাবমুক্ত করা; ৩. সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে; ৪. কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সব ব্যাংককে শুধু খেলাপি ঋণসাপেক্ষে আলাদা করে মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে; ৫. যাচাই-বাছাই করে ঋণ প্রদান এবং বিতর্কিত ঋণের যথাযথ পর্যবেক্ষণ; ৬. সুশাসন নিশ্চিত করা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা; ৭. ঋণ প্রদানে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা; ৮. অর্থ ঋণ আদালতসহ আইনি প্রক্রিয়া আরও উন্নত ও সংস্কার করা; ৯. খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের কালো তালিকা প্রকাশ এবং ভবিষ্যতে ঋণ প্রদানে বিরত থাকা; ১০. ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তির সঠিক চলতি বাজারমূল্য নিরূপণ করা; ১১. একই খাতে বেশি ঋণ না দিয়ে বিভিন্ন খাতে ঋণ প্রদান করা ইত্যাদি।

শিক্ষার্থী, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

mdreyaulislam629@gmail.com

খেলাপি ঋণ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম