Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

বাংলাদেশে করোনা ও ডেন্টাল সার্জনদের অবস্থান

Icon

মোস্তাফিজুর রহমান

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে করোনা ও ডেন্টাল সার্জনদের অবস্থান

প্রতীকী ছবি

ষাটের দশকে শুরু হওয়া ডেন্টাল প্রফেশন এখনও বামুন রয়ে গেছে কাদের অবহেলায়, এ এক বিরাট প্রশ্ন। খেয়াল করুন- ‘বামন’ বলিনি; ‘বামুন’ বলেছি। মানে, এর শানশওকত যতটা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল; তার কতটা বেড়েছে, তা একমাত্র ওয়াকিবহাল ব্যক্তিমাত্রই বলতে পারবেন।

আমজনতার বোঝার জন্য এই প্রফেশনের লকডাউনটা সীমিত পরিসরে একটু ওপেন করে দিই। এই বঙ্গদেশে মানে আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশে ডেন্টাল শিক্ষার আঁতুড়ঘর ‘ঢাকা ডেন্টাল কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬১ সালে।

সেই সময়ে যারা ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হতেন, তাদের কাউকেই চাকরির জন্য কপালে ভাঁজ ফেলতে হতো না। কথিত আছে, ডেন্টালে পড়ে যারা ডাক্তার হতেন, বাজারের সবচেয়ে বড় মাছটা নাকি মাছ বিক্রেতারা তাদের জন্য রেখে দিতেন। কিন্তু সেসব ‘বাকওয়াজ’ এখন মনে করে শুধু আফসোসই করতে হয়।

কালের পরিক্রমায় সেই ডেন্টাল প্রফেশন এখন এক মস্তবড় ‘কোয়েশ্চেন মার্ক’ এঁকে দিয়েছে। চরম অব্যবস্থাপনা আর অবহেলায় এ সেক্টরটি ধুঁকে ধুঁকে আজ এ পর্যন্ত এসে দাঁড়িয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই, অবহেলার এ ব্যাপারটি প্রাতিষ্ঠানিক এবং সামাজিকভাবে গেঁথে দিয়েছেন আমাদেরই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যুক্ত কিছু শিক্ষক এবং কর্তাব্যক্তিরা। এতে করে তাদের কী লাভ হয়েছে, জানা নেই। তবে সমগ্র জাতিকে যে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বা হচ্ছে, এ কথা আলবত বলা যায়। দেশের ১৮ কোটি জনগণের বিপরীতে সরকারিভাবে ডেন্টাল সার্জনের পদসংখ্যা মাত্র ১ হাজার ২৯৬টি (সূত্র : স্বাস্থ্য অধিদফতর)।

ক্লাস টুয়ে পড়ুয়া আমার মেয়েও ভাগ করে বলে দিতে পারে, প্রায় দেড় লাখ মানুষের জন্য রয়েছেন মাত্র একজন দাঁতের ডাক্তার! আবার কিছু উপজেলায় মানুষের এ সংখ্যাটা চার থেকে পাঁচ লাখ! অথচ প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র একজন ডেন্টাল সার্জনের পোস্ট! লে হালুয়া।

আরেকটি পরিসংখ্যান দিচ্ছি- দেশে এখন প্রতি বছর ডেন্টাল থেকে ডাক্তারি পাস করেন প্রায় দেড় হাজারের মতো। অথচ প্রতি বছর সরকার যে পরিমাণ ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেয়, সেই সংখ্যাটা আমাদের ক্রিকেট টিম এই কয়েক বছর আগেও যেমন পারফর্ম করত অনেকটা সে রকমই। এখন পর্যন্ত ৪০টি বিসিএসের সার্কুলার ঘাঁটলেই এ প্রফেশনের দৈন্যদশা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। নবম বিসিএস থেকে চল্লিশ, যার মধ্যে ১৫টিতেই ডেন্টাল সার্জনের কোনো পোস্ট ছিল না! আর এখন অবধি নিয়োগ সংখ্যাটা মনে আছে তো? মাত্র ১,২৯৬!

সম্প্রতি করোনা মহামারীতে ইতোমধ্যে দু’হাজার ডাক্তার জরুরি ভিত্তিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখানেও কোনো ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ পাননি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল ডাক্তার নিয়োগ। বিএমডিসি আইন অনুযায়ী এমবিবিএস এবং বিডিএস ডিগ্রিধারীরা ডাক্তার হিসেবে গণ্য হলেও নিয়োগে কৌশলে ডেন্টাল ডাক্তারদের কেন বঞ্চিত করা হল- সেটি কর্তাবাবুরা ভালো বলতে পারবেন।

যারা মনে মনে নামতা গুনছেন, করোনায় ডেন্টাল ডাক্তারদের ভূমিকা কী- তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, গবেষণাপত্রগুলোয় একটু চোখের ব্যায়াম সারুন। দেখবেন, করোনা ম্যানেজমেন্টে বিশ্বের অনেক দেশ ডেন্টাল সার্জনদের ইনক্লুড করেছে। ডেন্টাল সার্জনরা এক্ষেত্রে খুব ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন। তাছাড়া এই করোনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মতো ডেন্টাল ডাক্তার আক্রান্ত হয়েছেন। মাত্র একজন ডেন্টাল ডাক্তার নিয়োগ থাকার কারণে তাদের অসুস্থতায় উপজেলাগুলোতে লাখ লাখ দাঁতের রোগীর চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অথচ এক উপজেলায় কমপক্ষে চারজন ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেয়া এখন সময়ের দাবি।

এ অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, ৩৯তম বিসিএসের ২৫৩ জনসহ মোট ৩০০ জন (পূর্বাপর বিসিএসে কোয়ালিফাই করা) সব নন-ক্যাডার ডেন্টাল ডাক্তারদের অবিলম্বে নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন মাইলফলক উন্মোচন করা হোক।

পাদটীকা : এতকিছুর পরও ডেন্টাল ডাক্তাররা তাদের ক্যারিশমাটিক মেধা এবং যোগ্যতার কারণে দেশ-বিদেশে অসংখ্য রোগীদের আস্থার প্রতীক হিসেবে নিজেদের ‘সিগনেচার’ রাখতে পেরেছে। বলে রাখা দরকার, দেশে যেসব রোগী, যারা সাধারণ দাঁতের রোগ কিংবা মুখের ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে ভোগেন, তাদের বেশির ভাগই এ দেশেরই ডেন্টাল চিকিৎসকদের ওপর নির্দ্বিধায় আস্থা রাখেন।

সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগ, নিটোর

ডেন্টাল

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম