Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

শীতে হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়ান

Icon

মুহাম্মদ আবদুল হামিদ

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শীতে হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়ান

প্রকৃতির নিয়মে ঋতুর পালাবদল ঘটে। ঋতুবদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির রূপও বদলে যায়। শীতের প্রকৃতি শুকনো ও জড়সড়। শীত মানেই হিমহিম কনকনে ঠাণ্ডার অনুভূতি। রাতের আকাশে কুয়াশার অবরণ আর দিনে মিষ্টি রোদের হালকা ছোঁয়া শীতের প্রকৃতিতে নিয়ে আসে আলাদা আমেজ।

ঋতুবৈচিত্র্যের ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর শীতকাল বাংলাদেশে বাড়তি আনন্দ নিয়ে আসে। কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে কনকনে শীতেও আমরা পাই শাকসবজি-তরিতরকারির অফুরন্ত সম্ভার। এগুলো যেন শীতঋতুর বিশেষ উপহার। লাউ, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, পালংশাক, শালগম, বেগুন, টমেটো, মেটেআলু, পেঁয়াজের কলি ইত্যাদি রাশি রাশি তরিতরকারি। হাওড়, বিল, ডোবা, ছোট নদী ইত্যাদির পানি কমতে থাকে। এগুলোতে ধরা পড়ে কই, শোল, বোয়াল, টেংরা, পুঁটি ইত্যাদি নানা স্বাদের দেশীয় মাছ। বস্তুত আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামতে ভরপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি প্রিয় বাংলাদেশ।

শীতকালে নানা ধরনের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে। শীতের পিঠা খাওয়ার যে আনন্দ, তা অন্যসব আনন্দকে ছাড়িয়ে যায়। হেমন্তের শেষদিকে শীতের শুরুতে আমন ধান কাটার পর রকমারি পিঠা তৈরির ধুম পড়ে ঘরে ঘরে। নবান্নের আমেজে নানা স্বাদের পিঠা চারপাশে উৎসবের সমারোহ তৈরি করে। গ্রামের মতো এখন শহরেও দেখা যায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে চিতই আর ভাপা পিঠা তৈরি হচ্ছে। বিক্রিও হয় প্রচুর। সব মিলিয়ে শীতকাল খুবই উপভোগ্য। এ যেন মহান প্রভুর দেওয়া অতুলনীয় উপহার।

শীতের শুরুতেই শহরের ধনাঢ্য মানুষের মধ্যে নানা রঙের ফ্যাশনদুরস্ত গরম কাপড় কেনার ধুম পড়ে; ইট-কাঠ-পাথরের দেওয়াল আর অহরহ গাড়ির অবিরাম ছোটাছুটি, কলকারখানা, গ্যাসের চুলা ও অতিরিক্ত ঘনবসতির কারণে শহরের মানুষ বুঝতেই পারে না হাড় কাঁপানো শীত কারে কয়। তবে বস্তি, ফুটপাত ও রেলস্টেশনের খোলা জায়গায় যেসব হতদরিদ্র মানুষ ঠাঁই নেয়, ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য পর্যাপ্ত গরম কাপড় নেই তাদের। তারা শীতে ঠক ঠক করে কাঁপতে থাকে।

বিগত কয়েক বছর থেকে দেশে শীতকাল স্বল্পমেয়াদি হলেও দুই-তিনটা হালকা ও মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের কোনো কোনো এলাকায় তাপমাত্রা অস্বাভাবিক রকম কমে যাওয়ার রেকর্ডও আছে। এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় শীত একটু বেশিই অনুভূত হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে, এবার শীতের প্রকোপ বেশি হবে। শীতের তীব্রতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশও করেছেন আবহাওয়াবিদরা।

ইউরোপ, আমেরিকা বা অন্য শীতপ্রধান দেশের তুলনায় আমাদের দেশে শীত অনেকটাই সহনীয়। শীতকালে আমাদের এখানে বরফ পড়ে না। ভয়াবহ তুষার-ঝড় প্রকৃতিকে লণ্ডভণ্ড করে দেয় না। তাপমাত্রাও হিমাঙ্কের ওপরই থাকে। তবে ইদানীংকালে জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে দেশের আবহাওয়া অনেকটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। অনাবৃষ্টি, অকালবৃষ্টি, অকালবন্যা, অকালশীত, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, তীব্র দাবদাহ ইত্যাদি আবহাওয়ার বৈরী আচরণ প্রায়ই সহ্য করতে হচ্ছে। শীতকালে, বিশেষ করে পৌষ ও মাঘ মাসের কনকনে শীতে দেশের অনেক হতদরিদ্র মানুষ কষ্ট পায়। এমন কী শীতের প্রকোপে কোনো কোনো বছর মানুষজনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া যায়।

বিত্তবানরা শীতবস্ত্র ব্যবহার করে শীত থেকে রেহাই পেলেও দরিদ্ররা শীতবস্ত্রের অভাবে সীমাহীন কষ্টে দিনাতিপাত করে। কনকনে হিমেল হাওয়া ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হতদরিদ্র মানুষের অসহায়ত্বকে প্রকট করে তোলে। সমাজের সচ্ছল মানুষের কাছে শীত আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে এলেও দেশের হতদরিদ্র মানুষের জীবনে বেদনার বার্তাবাহক মাত্র। যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তাদের দুরবস্থা যে সর্বাধিক, সে কথা বলাই বাহুল্য। হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশা থেকে বাঁচার জন্য দরিদ্র মানুষের প্রয়োজন পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র। শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন সুচিকিৎসা ও ওষুধপথ্য। হাড়কাঁপানো শীতে যে বিপুল জনগোষ্ঠী বর্ণনাতীত দুঃখ-কষ্ট, অনাহার-অর্ধাহারে দিনযাপন করছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো ধর্মপ্রাণ মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।

আমরা একটু সচেতন হলে হতদরিদ্র মানুষকে সাহায্যের মাধ্যমে শীতের আনন্দ-উপহারগুলো ভাগাভাগি করে উপভোগ করার পাশাপাশি ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি লাভ করতে পারব। একটি শীতবস্ত্র একজন হতদরিদ্রকে কিনে দেওয়ার সামর্থ্য অশাকরি পাঠক সমাজের প্রত্যেকেরই আছে। তাছাড়া আমাদের অনেকের ঘরে ব্যবহারযোগ্য অনেক পুরাতন শীতবস্ত্র পড়ে থাকে। অনেকদিন পড়ে থেকে এক সময় এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আমরা চাইলে এগুলো একজন হতদরিদ্র মানুষকে দিয়ে তাকে শীতের কষ্ট থেকে বাঁচাতে পারি। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার মুসিবতগুলো দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দেবে, আল্লাহ তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দেবেন এবং আল্লাহপাক বান্দাকে সাহায্য করবেন, যদি বান্দা তার ভাইকে সাহায্য করে।’ (সহিহ মুসলিম)। অন্য হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়ায় কোনো মানুষকে বস্ত্র দান করবে, তাকে কিয়ামতের দিন বস্ত্র পরিধান করিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করা হবে।’ সুতরাং নিজের জাগতিক ও পারলৌকিক কল্যাণের জন্য প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মানুষেরই মানবতাবোধ ও উদার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন।

আমরা প্রত্যেকেই যদি একজন শীতার্তকে একটি করে শীতবস্ত্র দান করি, তাহলে আশাকরি আমাদের সমাজে ঠাণ্ডাজনিত কারণে কাউকে কষ্ট করতে হবে না। এ হতদরিদ্র মানুষগুলোকে খুঁজে পেতে আপনাকে-আমাকে খুব কষ্ট করতে হবে না। আপনার-আমার পাশেই এদের অবস্থান। চেয়ে দেখবেন, হতদরিদ্র মানুষগুলো হাত পেতে আপনাকে-আমাকে ডাকছে আর অপেক্ষা করছে, কখন আপনি একটা শীতবস্ত্র তাকে দান করবেন।

মানবতার সেবায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা মানবিক দায়িত্ব। নিঃস্বার্থভাবে শীতার্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করাই মানবতার সেবা। দেশের ধনাঢ্য ও বিত্তবানদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা চলতি শীত মৌসুমে শীতার্ত গরিব অসহায় মানুষকে নতুন বা পুরাতন কিছু শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসুন।

শিক্ষক, জামেয়া ইসলামিয়া আনওয়ারে মদিনা মাদ্রাসা, ইসলামপুর, সিলেট

hamidsylbd@gmail.com

শীত

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম