Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

পরিবার থেকেই শুরু হোক শিশুর নৈতিক শিক্ষা

Icon

লায়লা আরজুমান্দ বানু

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একটি সুন্দর সমাজ ও আর্দশ রাষ্ট্র গঠনের জন্য সুনাগরিকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুনাগরিক হওয়ার পেছনে পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে সমাজের নাগরিকরা নৈতিকতার মানে যতটুকু উত্তীর্ণ, সে সমাজে ন্যায়নীতির বাস্তবায়ন ততটা সুন্দর হয়। অনৈতিক চর্চা সমাজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন ও শান্তিপূর্ণ বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টিতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

শিশুকাল থেকে প্রতিটি পরিবারেই শিশুদের জন্য নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। নৈতিক শিক্ষা হলো সেই শিক্ষা, যা মানুষকে ভালো ও মন্দ; ন্যায় ও অন্যায়; শুভ ও অশুভের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে তার জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। যেসব পরিবারে পিতামাতা নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত, তাদের সন্তান স্বাভাবিকভাবে শিশুকাল থেকেই সে শিক্ষা তাদের মানসপটে গ্রহণ করে। সুকুমার মানবিক গুণাবলি শিশুকাল থেকেই পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হয়। এ বয়সে শিশু যে শিক্ষাটি পেয়ে থাকে, সেটি তার সারা জীবনের পথ চলায় পাথেয় হয় এবং জীবনকে সহজ করে দেয়।

শিশুদের নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার একক বা যৌথ যে কোনো প্রকারের হতে পারে। শিশুর মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ, মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটে মূলত পরিবারের সদস্যদের সংস্পর্শে থেকে। পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই শিশুদের সৎভাবে জীবনযাপনের শিক্ষা, সততার শিক্ষা দেওয়া উচিত। তারা যে কোনো ভুল করুক না কেন, সত্য বলায় উৎসাহিত করতে হবে। এজন্য বাড়ির বড়দেরও শিশুর সামনে মিথ্যা বলা বা চর্চা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

পরিবারের গুরুজনসহ সবাইকে সম্মান করা শেখাতে হবে ছোটবেলা থেকেই। পরিবারে যে গৃহকর্মী, তাকেও সম্মান করতে শেখানো পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব। শিশুর সামনে অন্যদের হেয় করা বা কটাক্ষ করা থেকে বড়দের নিবৃত্ত থাকতে হবে। এতে করে শিশুরা তাদের শৈশবকাল থেকেই বড়দের কাছ থেকে নৈতিক আচরণের শিক্ষা পাবে। প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো আচরণ করা, তাদের সমস্যায় এগিয়ে যাওয়া, তাদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকার বিষয়ে শিশুকে মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে। শিশুরা যেহেতু অনুকরণপ্রিয়, তাই বড়রা যা করে; তারা তা শেখে। এজন্য অভিভাবকদের আচরণ হতে হবে মার্জিত, সুন্দর ও শিক্ষণীয়।

জীবনে সাফল্য লাভ করতে হলে ধৈর্যশীল হওয়ার বিকল্প নেই। শিশুর মধ্যে ধৈর্যধারণ করার প্রবণতা তৈরি করতে হবে। কোনো কাজে বিফল হলে হতাশ না হয়ে তাকে ধৈর্যশীল হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। পরিবারে শুধু বাবা-মা বা পরিবারের সদস্যদের জন্য ভালোবাসা নয়; ছোটবড়, ধনী-গরিব, পশুপাখির প্রতিও ভালোবাসা শেখাতে হবে। অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতামূলক মনোভাব শৈশবেই গড়ে তুলতে হবে।

ছোটবেলা থেকেই শিশুকে ধর্মীয় চর্চার শিক্ষা দিতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যেই নৈতিকতার বীজ প্রোথিত থাকে। শুধু তার নিজের ধর্ম নয়, অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াও শেখাতে হবে। ধর্ম যার যার, কিন্তু ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠানে সবার অংশগ্রহণে সমান অধিকার-এ শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই তার মননে স্থাপন করতে হবে।

নম্র বা বিনয়ী হওয়া নৈতিকতা শিক্ষার মধ্যে অন্যতম। ছোটবেলা থেকেই শিশুকে নম্র বা বিনয়ী হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে, যেন তার মধ্যে অহংকারবোধের জন্ম না নেয়। শিশুকে বুঝিয়ে দিতে হবে, নম্র ও বিনয়ী আচরণের মধ্য দিয়ে সে সবার কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। পিতামাতার উচিত, আর্থিক সামর্থ্যরে বাইরে গিয়ে শিশুর কোনো চাহিদা পূরণ না করা। শিশু যেন বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে না পড়ে, সেদিকে যেমন খেয়াল রাখতে হবে; তেমনি বাবা-মার প্রকৃত আর্থিক সামর্থ্য কতটুকু, তা শিশুকে বুঝিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া টিভি, মোবাইল, ভিডিও গেমসে শিশু যেন আসক্ত না হয়ে পড়ে, সেদিকে পিতা-মাতার সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো পরিবারের প্রত্যেক সদস্য মেনে চললে পরিবারে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করবে। এতে করে শিশুর নৈতিক শিক্ষা লাভের পাশাপাশি তাদের মধ্যে মানবিক গুণাবলিও সুন্দরভাবে প্রস্ফুটিত হবে। শিশুরা এ দেশ ও সমাজের জন্য সুনাগরিক রূপে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে। সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় শুদ্ধাচার নীতিমালার মাধ্যমে সবাইকে নৈতিকতার শিক্ষা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এ শুদ্ধাচার কর্মসূচি তখনই সফল হবে, যখন শিশুরা পরিবার থেকে নৈতিকতার শিক্ষায় আলোকিত হয়ে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমাদের শিশুরা শুদ্ধাচারী হয়ে বেড়ে উঠলে তবেই সফল হবে আমাদের সব শুদ্ধাচার চর্চা। (পিআইডি ফিচার)

সিনিয়র তথ্য অফিসার, পিআইডি, ঢাকা

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম