Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

ভ্রাতৃদ্বিতীয়া

Icon

প্রকাশ ঘোষ বিধান

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভাইফোঁটা হিন্দুদের একটি উৎসব। এ উৎসবকে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া অনুষ্ঠান বলা হয়। ভাই-বোনের সম্পর্ক পৃথিবীর মধুর সম্পর্কগুলোর মধ্যে অন্যতম। ছোটবেলায় মারামারি, ঝগড়া, খুনশুটি-সবকিছু স্মৃতির পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। বড় হওয়ার পরও ভাই-বোনের সম্পর্কে ভাটা পড়ে না। কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয়া তিথিতে কালীপূজার দুদিন পরে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালি হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এ উৎসব কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ২য় দিনে উদ্যাপিত হয়। মাঝেমধ্যে এটি শুক্লপক্ষের ১ম দিনেও উদ্যাপিত হয়ে থাকে। পশ্চিম ভারতে এ উৎসব ‘ভাইদুজ’ নামেও পরিচিত। সেখানে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পাঁচ দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের দিন শেষ হয়। আবার মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে বলে ‘ভাইবিজ’। নেপাল ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংসহ পার্বত্য অঞ্চলে এ উৎসব পরিচিত ‘ভাইটিকা’ নামে। সেখানে বিজয়াদশমীর পর এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব।

ভাইফোঁটা হলো একটি ঘরোয়া উৎসব। এদিন বোনেরা ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে একটি ছড়া বলে তাদের দীর্ঘজীবন কামনা করে। অন্যদিকে ভাইয়েরা বোনদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। শঙ্খ বা উলু বাজানো হয় এ সময়। বোনেদের পছন্দমতো উপহার দেয় ভাইয়েরা। এছাড়া ভাই-বোনদের পছন্দের সব সুস্বাদু খাবারও তৈরি করা হয়। ভাইবোনরা একসঙ্গে মিলে উৎসবটি পালন করে। এ উৎসবের আরও একটি নাম হলো যমদ্বিতীয়া। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, ধর্ম ও মৃত্যুর দেবতা যম তার বোন যমুনা বা যমির ঘরে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যান। কার্তিক মাসের দ্বিতীয় তিথিতে শুভ ক্ষণে দাদার কপালে তিলক লাগিয়ে তার আরতি করে ঘরে আমন্ত্রণ জানান যমুনা। যত্ন করে তাকে খাওয়ান। বোনের রন্ধন কুশলতায় এবং আতিথেয়তায় অত্যন্ত খুশি হয়ে যম তাকে আশীর্বাদ করেন, এই শুভদিনে যারা বোনের হাত থেকে ফোঁটা নেবে, তারা নরকযাত্রা থেকে মুক্তি পাবেন।

ভাইফোঁটার দিন বোনেরা তাদের ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দিয়ে ছড়া কেটে বলে-ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা/যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা/আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা/ যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হলো অমর/আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর।

ভাইফোঁটা নিয়ে মহাভারতে আরও একটি কাহিনি বর্ণিত আছে। নরকাসুর নামে এক দানবকে বধ করার পর দ্বারকায় ফেরেন কৃষ্ণ। দাদার আগমনে সুভদ্রা বিশেষ পূজা করেছিলেন। কৃষ্ণের কপালে পূজার তিলক লাগিয়ে তাকে বরণ করেন সুভদ্রা। সেদিনও ছিল কার্তিক মাসের দ্বিতীয় তিথি। সেই থেকে এই উৎসব সারা দেশে পালন করা শুরু হয়।

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ভাইফোঁটা একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠান হলেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়। পশ্চিম ভারতের ‘ভাইবিজ’ একটি আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান। সেখানে এ উপলক্ষ্যে পারিবারিক সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয়। মহারাষ্ট্রে মেয়েদের ‘ভাইবিজ’ পালন অবশ্য কর্তব্য। এমনকি, যেসব মেয়েদের ভাই নেই, তাদেরও চন্দ্র দেবতাকে ভাই মনে করে ‘ভাইবিজ’ পালন করতে হয়।

পাইকগাছা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম