Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

দূষণমুক্ত পরিবেশ ও নির্মল বাতাসে বাঁচতে চাই

Icon

রফিউল কলিম রিফাত

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য কয়েকটি অপরিহার্য উপাদানের মধ্যে বায়ু অন্যতম। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্ত পরিবেশ ও নির্মল বাতাস। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বায়ু খুব সহজলভ্য একটি উপাদান; কিন্তু আমাদের দেশে দিনদিন নির্মল বায়ু বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে। সে কারণে জনস্বাস্থ্য এখন হুমকির মুখে। শীতের কুয়াশার মতো ধুলায় আচ্ছাদিত রাস্তা। চলন্ত যানবাহনের পেছনে কুণ্ডলী পাকিয়ে বাতাসে উড়ছে ধুলা-বালু। সড়কের দুই পাশের দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি ঘর ধুলায় সয়লাব। এর ফলে বিশ্বের আর সব দূষিত বায়ুর শহরকে পেছনে ফেলে গত ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি পরপর দুই দিন এক নম্বরে উঠে এসেছে রাজধানী ঢাকা। বিশেষজ্ঞরা জানান, ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা সম্প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫-এর কারণেই ঢাকায় দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীসহ সবার মাস্ক ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়ুমান নির্ণয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বা একিউআই একটি শহরের বাতাস মানুষের জন্য কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার ঢাকার একিউআই স্কোর ছিল ২১০, রোববার ২০৩, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। এ সময় স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ নগরবাসীর প্রত্যেকের জন্য জরুরি অবস্থা হিসাবে বিবেচিত হয়। বায়ুদূষণের কারণে প্রথমেই প্রভাব পড়ে শ্বাসযন্ত্রের উপরে। বিশ্বব্যাপী যেসব অসংক্রামক রোগে মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে, তার অধিকাংশই বায়ুদূষণজনিত। ধূলিকণা নিশ্বাসের সঙ্গে সহসাই রক্তে মিশে গিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এ সময় নানা অসুখে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ জন্য ধূলিকণা প্রতিরোধক ব্যবস্থা যে কোনো মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সর্দি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কাশি, অ্যাজমার মতো রোগের প্রকোপ বাড়বে। বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুসের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রজনন স্বাস্থ্য; বিশেষ করে গর্ভপাত, জন্মগত ত্রুটি, শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে বায়ুদূষণ বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হচ্ছেন রাস্তায় দায়িত্বরত পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশের সদস্য, ভ্যানগাড়ি, রিকশা চালকসহ গণপরিবহণের চালক ও যাত্রীরা।

ঢাকায় ঘিঞ্জি পরিবেশের কারণে বাতাস চারদিকে ছড়াতে পারে না। এতে বাতাসে ধূলিকণার উপস্থিতি ভারী হচ্ছে। সম্প্রতি দেশে পরিচালিত এক জরিপে জানা গেছে, ১৮টি জেলার বায়ু আদর্শ মানের চেয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় দূষিত। এ ১৮টি জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হয়েছে গাজীপুরে, এরপরই রয়েছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ। ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশে যেন বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে ২০২০ সালে বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বাস্তবে উচ্চ আদালতের এসব নির্দেশনা প্রতিপালন করতে পারলে বায়ুদূষণের মাত্রা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ছাড়া পরিকল্পিতভাবে কারখানাগুলোর ধোঁয়া কমিয়ে আনা, ট্রাফিক জ্যামের সমাধান, উন্নত জ্বালানি ব্যবহার করা, বাড়িঘর ও আবাসিক এলাকাগুলো পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা-যেখানে উদ্যান ও পুকুর থাকবে, রাস্তায় ধুলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাক ব্যবহার করা, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির সেন্ড ব্লকের প্রচলন বাড়ানো ইত্যাদি বিষয়গুলোর ওপর নজর দিতে হবে। একইসঙ্গে নির্মল বায়ু আইনের বাস্তবায়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে বাজেটের ওপর গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

উদ্বেগজনক হলো, দূষণ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান যেমন-পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, রাজউক বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করছে না। বাস্তবে দুই সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো নিয়োজিত ঠিকাদারদের ধুলা নিয়ন্ত্রণে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে শুধু ওই আইটেমের বিল প্রদান করা বন্ধ রাখলে ধুলা নিয়ন্ত্রণ করা অনেকাংশেই সম্ভব হবে। যদিও দুই সিটি করপোরেশনের তরফে প্রতিদিনই কম-বেশি ধুলা নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানো হয়; কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। এ কারণে উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে পানি ছিটানোর পরিমাণ যেমন বৃদ্ধি করতে হবে, তেমনি উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত ইট, সুরকি, বালু ইত্যাদি টিন দিয়ে ঘিরে রেখে কাজ করতে হবে।

বায়ুদূষণ রোধ করা গেলে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রকোপ রোধে ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা’ হবে। বায়ুদূষণ হ্রাস করা গেলে নিজেদের আর্থিক সাশ্রয় যেমন হবে, তেমনি জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে। মানুষের অসুস্থতা কমবে, গড় আয়ু বাড়বে, সময় সাশ্রয় হবে, পাশাপাশি বেড়ে যাবে জিডিপিও। বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করতে হবে এবং সচেতন করে তুলতে হবে; বিশেষ করে বায়ুদূষণের জন্য যেসব উৎস চিহ্নিত হয়েছে, সেগুলো বন্ধের পাশাপাশি নতুন করে যেন কোনো উৎস থেকে বায়ুদূষণ না ঘটে সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে নীরব ঘাতককে প্রতিহত করা ছাড়া আর অন্য কোনো বিকল্প নেই।

যন্ত্রকৌশল বিভাগ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম