ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ। বারোটি মাসে ঘুরে ঋতুগুলো নতুন রূপে আমাদের মাঝে হাজির হয়। ঋতু পরিবর্তনের ধারায় আমাদের মাঝে বর্ষাকাল বিরাজ করছে। বর্ষাকাল মানেই অন্য রকম অনুভূতি, অন্য এক ভালোলাগা। বর্ষায় নদী-নালা, খাল-বিল-ঝিল, পুকুর কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় বৃষ্টির পানিতে। তেমনি গাছপালা লতাপাতাও ফিরে পায় প্রকৃত সজীবতা। প্রকৃতির অপরূপ এ শোভা উপচে পড়ে গ্রাম থেকে শহরে। গ্রামের মেঠোপথে-মাঠ-ঘাটে মনোরম এক রূপের দেখা মেলে বর্ষাকালে। কদম ফুলের বাহারে চোখ জুড়িয়ে যায়। বৃষ্টির ছন্দে কদম ফুলের দোলে মন হারিয়ে যেতে চায় বারবার। বিলে-ঝিলে শাপলা ফুলের মনোরম দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে যায়। পুকুরের থইথই পানিতে সাঁতার কাটা, বৃষ্টিতে ভেজা, খাল-বিল থেকে দেশীয় মাছ ধরা, বৃষ্টির পানি পেয়ে জমিতে লাঙল দেওয়া, প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রামের মানুষও নব উদ্যমে মেতে ওঠে এ সময়। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বাড়ি বাড়ি আড্ডা। গ্রামের মুরব্বিরা সব এক জায়গায় বসে মেতে ওঠেন বিভিন্ন গল্পে। ছোটরাও পাঁচঘুঁটি, লুডু, দাবা, ক্যারম অর্থাৎ যার যা পছন্দ ঘরে বসেই খেলে। প্রাণে প্রাণে মিলন ঘটে তাদের মাঝে। বাইরে ধুম বৃষ্টিতে ঘরে হাঁসের মাংসের সঙ্গে খিচুড়িযোগে চলে ভোজনের আয়োজন। অথবা নানা রকম ভর্তায় জমে ওঠে খিচুড়ি। গ্রামের মতো গাছপালা শহরে না থাকলেও বৃষ্টির অপেক্ষায় মানুষ থাকে। গ্রীষ্মকালের গরমের পর একটু বৃষ্টি, বর্ষাকালে মানুষের চরম কাঙ্ক্ষিত হয়ে যায়। তবে বৃষ্টির সে ভালোলাগা বেশিক্ষণ উপভোগ করতে পারে না শহরের লোকজন। শহরের অধিকাংশ রাস্তা সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায়। সামান্য নিচু কিংবা বাঁধ এলাকায় অল্প বৃষ্টিতে ঘরে পানি ঢুকে যায়। বৃষ্টির পানিতে ভিজতে ভালো লাগে কিন্তু শহরে বৃষ্টির পানির সঙ্গে যোগ হয় ড্রেনের ময়লা পানি। যা পয়ঃনিষ্কাশন ও বিভিন্ন কলকারখানার কেমিক্যাল যুক্ত। এসব পানিতে থাকে কোটি কোটি রোগজীবাণু। এ ময়লা পানি দ্বারা সৃষ্টি হয় দীর্ঘ জলাবদ্ধতার। এতে চলাচল করে স্কুলগামী বাচ্চারা চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তার ওপর আছে মশার উপদ্রব। দেখা দেয় মশাবাহিত রোগের প্রকোপ। বর্ষাকাল শুরু হলেই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের বিস্তার বেড়ে যায় বহুগুণে। জলাবদ্ধতার কারণে ফুটপাতের বা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। শহরে বসবাসকারী কর্মজীবী মানুষগুলোর কাছে বর্ষা আনন্দের না হয়ে বিরক্তিকর হয়ে ওঠে তখন। বর্ষা আসে প্রকৃতিকে অপরূপ সাজে সাজাতে, মানুষের মনকে ভিন্ন আবেশে রাঙাতে। আমাদের জনপ্রতিনিধি, নীতি-নির্ধারকরা যদি সদয় হয়ে এ সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেন তাহলে গ্রামের মতো শহরের মানুষের কাছেও বর্ষাকাল হয়ে উঠবে আনন্দ ও সুখাবেশে ভরা এক ঋতু।

ভাইস চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ