বিচ্ছেদের দায় কি শুধুই নারীর?
আফসানা সাথী
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিচ্ছেদের প্রসঙ্গ এলেই সবার আগে একটা কথা মাথায় আসে। একবিংশ শতাব্দীর কর্মজীবী নারীরা বিচ্ছেদের পথে বেশি হাঁটছেন; কিন্তু কেন নারীরা এমন দলবেঁধে বিচ্ছেদ চাইছেন? কোনো অঞ্চলে অপরাধ বেড়ে গেলে আমাদের বলা উচিত, ওই অঞ্চলে অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে; কিন্তু আমরা তা না বলে বলছি, ওই অঞ্চলে অপরাধীদের নিয়ে অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিচ্ছেদের পথে নারীরা বেশি হাঁটছেন তার মানে কি বিচ্ছেদের পেছনে নারীর ভূমিকা বেশি? স্বামী হিসাবে পুরুষ অবহেলা করলে নারী বিচ্ছেদের পথে হাঁটলে সে দায় কি নারীর? আমি বলছি না নারীর ভূমিকা নেই, তবে এর পেছনে পুরুষের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকাগুলো কেন সব সময় আড়ালে থেকে যাচ্ছে? শহরের নারীরা এখন অধিকাংশই চাকরিজীবী ও আত্মনির্ভরশীল। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ ভয়াবহ সময়টাতে পুরুষের বিবাহের ক্ষেত্রে পছন্দের শীর্ষে রয়েছে কর্মজীবী নারী। তারা চান নারীরা অফিস, ঘরে-বাইরে সমান তালে সব সামলাবেন। কর্মজীবী একজন নারীর প্রতি পুরুষেরও যে একটু বাড়তি সুবিধা, বাড়তি যত্নের প্রয়োজন আছে, তা কখনোই ভাবতে চান না। দায়িত্ব পালনের কথা তো অনেক দূর। নারীরা ঘরে-বাইরে সমানভাবে কাজ করার জন্য যুদ্ধ করছেন প্রতিনিয়ত; কিন্তু পান থেকে চুন খসলেই শুনতে হয় সংসারে মন নেই নারীর। তাহলে সংসার কি নারীর একার? সারা দিন অফিসের ব্যস্ততায় ছোটাছুটির পর অনেকেই নারীর দিকে উড়নচণ্ডী বলে প্রশ্ন ছুড়ে দেন। অন্যদিকে অফিস শেষে পুরুষ বাসায় এলে তার জন্য যেমন বাড়তি যত্নের আয়োজন সাজিয়ে বসে থাকা হয়, কজন অফিস ফেরত নারী এ আয়োজন পান?
বিচ্ছেদ হওয়া বেশকিছু পরিবারের ঘটনা পর্যালোচনা করে জানা গেছে, বিচ্ছেদের কারণ হিসাবে নারী বা পুরুষের পরকীয়া বা সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় কারও প্রবেশ কিংবা পারস্পরিক বোঝাপড়াহীনতাই অনেক বেশি দায়ী। এখনকার পুরুষদের প্রথম পছন্দ পশ্চিমা দেশের মতো আধুনিক কর্মজীবী নারী; কিন্তু আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে তাকে হতে হবে আশির দশকের আমাদের নানি-দাদিদের মতো পরিবারের প্রতি সব দায়িত্বে কর্তব্যে বদ্ধপরিকর এবং গৃহকর্মে নিপুণা। একই সঙ্গে দুদিকে অনন্য হওয়া একজন নারীর জন্য আদৌ কি সম্ভব?
নারীদের কাজে যেমন পরিবর্তন এসেছে, একইভাবে পুরুষেরও মানসিকতায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তাদের মধ্যে এ মানসিকতার উন্নয়ন ঘটানো দরকার যে, খাবার প্রস্তুত করা শুধু নারীর কাজ নয় বরং এটা জীবন ধারণের জন্য অতি দরকারি একটা কাজ। যে কাজের জন্য নির্দিষ্ট লিঙ্গের মানুষ হওয়ার প্রয়োজন নেই। যে কারও নিজের প্রয়োজনে খাবার প্রস্তুত করে খেতে পারার সক্ষমতা অর্জন করা উচিত। স্ত্রী যেদিন অফিস থেকে দেরিতে ফিরবে, স্বামী সেদিন রান্নাঘরের চৌকাঠ অতিক্রম করলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। সন্তানের ভেজা ন্যাপকিন পরিবর্তন করা শুধুই মায়ের দায়িত্ব নয়, বরং এটি পিতা-মাতা নির্বিশেষে কর্তব্য। রাতের বেলা সন্তান কাঁদলে মাকেই কেন সব সময় ঘুম থেকে উঠে সন্তানের কান্না থামাতে এঘর থেকে ওঘর পায়চারি করতে হবে? মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা সি-সেকশনের যন্ত্রণা নিয়ে মাকেও তো ভোরে ঘুম থেকে উঠে সংসারের অন্য কাজগুলো করতে হয়, তাহলে কেন রাতে কান্নারত শিশুকে সামলানোর দায়িত্ব শুধুই মায়ের।
একটা শিশু পৃথিবীতে এলেই একজন নারী মা হন, কিন্তু একজন পুরুষ পিতা হন যখন ওই শিশু বাবা বলে ডাকতে শেখে। কর্মজীবী নারীদের বিবাহবিচ্ছেদ ঠেকাতে পুরুষদেরও সন্তানের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বাবার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। মায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চা এবং সংসারের খেয়াল রাখা শুরু করতে হবে। আমাদের কর্মজীবী নারীদের প্রতি আরেকটু নমনীয় কি আমরা হতে পারি না?
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
