সমাজ ও মানুষের মনের দর্পণ বেতার
মো. জিল্লুর রহমান
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
১৩ ফেব্রুয়ারি পালিত হলো বিশ্ব বেতার দিবস। এ দিবসের লক্ষ্য, সবার মধ্যে বেতারের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের বেতারের মাধ্যমে তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং বেতার সম্প্রচারকদের মধ্যবর্তী আন্তর্জাতিক সহায়তা ও পারস্পরিক মতামত ও তথ্য বিনিময় জোরদার করা। ইউনেস্কো প্রতিবছর সারা বিশ্বের সম্প্রচারক, সংস্থা এবং সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় বেতার দিবস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জানা যায়, প্রথমবার ২০১০ সালে স্পেন রেডিও সংস্থার পক্ষ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেতার দিবস উদ্যাপন করার প্রস্তাব আসে। এরপর ২০১১ সালে এটি ইউনেস্কোর সদস্য দেশগুলো ঘোষণা করে এবং ২০১২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কো প্রথম এই দিনটি বিশ্ব বেতার দিবস হিসাবে পালন শুরু করে।
আমাদের অনেকেরই ধারণা, ইন্টারনেটের অগ্রযাত্রার এ সময়ে রেডিও তার গুরুত্ব হারিয়েছে। ধারণাটি মোটেও সঠিক নয়। কারণ সময় যেমন বদলেছে, ঠিক তেমনি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রচারণার ধরনও বদলে গেছে। এখনো বহু মানুষ বেতার শোনে। এখনো অনেক মানুষ বেতারের ওপর নির্ভর করে। সারা বিশ্বে বেতার এখনো অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম। বেতারের রয়েছে পৃথিবীর দুর্গম স্থানে পৌঁছানোর শক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রসারের ফলে সম্প্রচার জগতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিযোগিতাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। তবে গ্রামগঞ্জ ও দুর্গম এলাকায় বেতার এখনো তথ্য আদান-প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিশালী গণমাধ্যম। অধিকন্তু, জরুরি অবস্থাকালীন যোগাযোগ ও বিপর্যয়কালীন ত্রাণকর্মে বেতার একটি শক্তিশালী ও নির্দিষ্ট ভূমিকা রাখে। বর্তমানে বেতার সেবাগুলোও প্রযুক্তির নতুন নতুন রূপের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, মুঠোফোন, এফএম, কমিউনিটি ও ট্যাবলেটে ভিন্ন ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হচ্ছে।
রেডিও আমাদের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এখনো সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করতে বেতার শক্তিশালী হাতিয়ার। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ সম্পাদন করা এবং দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় বেতারের ভূমিকা অনন্য। তারবিহীন যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো বেতার বা রেডিও। সবচেয়ে প্রাচীন, সহজলভ্য ও একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসাবেও বেতার পৃথিবীব্যাপী বহুল পরিচিত। প্রবল প্রযুক্তিনির্ভর এ সমাজেও বেতার তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ধরে রেখে এগিয়ে চলছে। সহজলভ্যতা ও বহনযোগ্যতার কারণেই বিশ্বব্যাপী বেতার সগৌরবে টিকে আছে এবং সর্বজনীন গণমাধ্যম হিসাবে থাকবে অনন্তকাল। বেতারকে বলা হয় মানুষ ও সমাজের দর্পণ। কারণ, সমাজের এমন কিছু নেই যা বেতারে তুলে ধরা হয় না। মানুষ ও সমাজের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার প্রতিচ্ছবি হচ্ছে বেতার। এ কারণে পুরোনো গণমাধ্যম হিসাবে রেডিওকে বাঁচিয়ে রাখা শ্রোতা ও পাঠকদের দায়িত্ব।
ব্যাংকার, ঢাকা
