|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বই হচ্ছে জ্ঞানের অফুরন্ত ভান্ডার। বইয়ের কালো অক্ষরে লুকিয়ে আছে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের নানাবিধ শাখা-প্রশাখার বিস্তারিত তথ্য ও তত্ত্ব; যা মানুষকে অতীতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। মানুষের কৌতূহলকে করে নিবৃত। জানার পরিধিকে করে বিস্তৃত। বই পড়ে মানুষ ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত যেমন জানতে পারে, ঠিক তেমনই পথচলার সঠিক দিকনির্দেশনা সম্পর্কেও ধারণা পেতে পারে। ভালো কিছু গ্রহণ করে মন্দকে ত্যাগ করার জ্ঞান মানুষ বই থেকে অনায়াসে লাভ করতে পারে। তাই বইকে মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু বলা হয়ে থাকে। বন্ধু তো সে-ই, যে সুখে-দুঃখে, হাসি-আনন্দে, কষ্ট-ব্যথায়, বিপদে-আপদে একান্ত আন্তরিকতায় একে অন্যকে জড়িয়ে রাখে পরম বিশ্বাস ও নির্ভরতায়। বন্ধু তো সে-ই, যে নিজেকে একেবারে উজাড় করে দেয়। রক্ত-মাংসে গড়া এমন কিছু বন্ধু হয়তো মেলে; কিন্তু বই প্রত্যেকের জন্য বিশ্বাস ও নির্ভরতার ঠিকানা। বই এমন বন্ধু, যে সব সময় পাশে থাকে। সেজন্য ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার চর্চা করা উচিত। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের উচিত নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। যদি অভিভাবকরা বই পড়েন, তাহলে সেই পরিবারের শিশু-কিশোর, তরুণদের মধ্যেও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে। কারণ শিশুরা অনুকরণপ্রিয়, দেখে দেখে শেখে।
নিয়মিত বই পড়া সুঅভ্যাস। পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক, ইতিহাস সম্পর্কিত, সায়েন্স ফিকশন, প্রবন্ধ, সাধারণজ্ঞান, গোয়েন্দা, শিশুতোষ ও সাহিত্যের নানা শাখার সুখপাঠ্য বই কিনে শিশুদের দেওয়া, যাতে তারা দেশবিদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোয় বছরের বিভিন্ন সময়ে মৌসুমি প্রতিযোগিতা, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে থাকে। এসব অনুষ্ঠানে পুরস্কারও দেওয়া হয়। সেখানে পুরস্কার হিসাবে বই নির্বাচন করা উচিত নির্বাচকমণ্ডলীর। কারণ অন্যান্য পুরস্কারের তুলনায় বই দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সেই বই পড়ে জ্ঞান লাভ করা যায়। তাই পুরস্কার হিসাবে বই-ই শ্রেষ্ঠ।
পারস্যের কবি ওমর খৈয়ামের কবিতার ভাবানুবাদ করেছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী। ওমর খৈয়ামের কবিতার একটি পঙ্ক্তি আছে এমন : রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে; কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা, যদি তেমন বই হয়। তাই সে অনন্ত যৌবনে ডুব দিতে হলে বই পড়তে হবে। বইকে করতে হবে জীবনে চলার পথে ও অবসরের সঙ্গী। যাতে অবসর সময়টা সুখকর হয়ে ওঠে। বই অজানাকে জানিয়ে দেয়, আবার স্বপ্ন দেখায়। বই সুখের দোলাচলে দোল খাওয়ায় আবার দুখের অশ্রুতে ভাসায়। বই পড়ে মানুষ যেমন নিজের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারে, তেমনি অবসর সময়টা সঠিকভাবে সৎসঙ্গে কাটাতে পারে। তাই বই-ই হোক সবার জীবনের উৎকৃষ্ট সঙ্গী। বই পড়ার প্রতি সবার আগ্রহ বাড়ুক, বাড়ুক উৎসাহ। বই পড়ার অভ্যাস সবার মধ্যে গড়ে উঠুক। মানুষ খুঁজে পাক উৎকৃষ্ট সঙ্গী।
শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক, ব্যাংকার, পটিয়া, চট্টগ্রাম
