|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পৃথিবী পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনের সেই ধারাবাহিকতায় অনেক কিছু যেমন সংযোজন হচ্ছে, তেমনি অনেক কিছু হারিয়েও যাচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে। বহমান সময়ে হারিয়ে যাওয়া এমন একটি প্রয়োজনীয় বস্তু ছিল, নাম তার হারিকেন। হারিকেন ছিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যেরই একটি অংশ। দিনের শেষে সন্ধ্যা নেমে এলেই ঘরে ঘরে জ্বলে উঠত হারিকেনের আলো। অন্ধকার ভেদ করে দূর থেকে দেখা যেত সেই মিটিমিটি জ্বলে থাকা আলো। সেই মায়াবী আলোয় চলত ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, ঘর-গৃহস্থালির কাজ। শুধু ঘরবাড়িতে নয়, হারিকেন দিয়ে বাইরের কাজও চলত। সাপ্তাহিক হাঁটগুলোতে রাতে জ্বালানো হতো হারিকেন, দূর গাঁয়ের লোকজন বাজারে আসতেন হারিকেন নিয়ে। এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি, এ পাড়া থেকে ও পাড়া যাতায়াতে হারিকেনই তখন ভরসা। দোকানিও বেচাকেনা করতেন হারিকেনের আলোয়। ডাকপিয়ন চিঠি নিয়ে ছুটতেন এ হারিকেনের আলোকে সাথী করে। হারিকেনের আলো ঝড় বাতাসে সহজে নিভে না যাওয়ায় সব স্থানেই এটির ব্যবহার ছিল নিরাপদ।
বিদ্যুতের আলো আসায় হারিকেন আজ হারিয়ে গেছে। গ্রামগঞ্জেও এখন আর দেখা মেলে না হারিকেনের। যদিও বা থেকে থাকে, হয়তো কারও ঘরের কোনো কোনায় পড়ে আছে সেটি জংধরা অবস্থায়। সব জায়গায় বিদ্যুৎ আসায় কদর হারিয়েছে সে। অথচ কিছুদিন আগেও বিদ্যুৎ গেলেও বিকল্প হিসাবে জ্বালানো হতো হারিকেন। প্রযুক্তির উন্নয়নে এখন আইপিএস, সোলার প্যানেল ঘরে ঘরে। এতকিছুর পরও সেই ছোট্ট আলোর মায়া হৃদয়ে জড়িয়ে আছে আজও পরম মমতায়। নতুন প্রজন্মের হয়তো জানাই নেই হারিকেন কী ও কেমন। কোনোদিন হয়তো তারা ইতিহাস থেকে জানার চেষ্টা করবে এ হারিকেন সম্পর্কে।
হারিকেনের ইতিহাস অনেক পুরোনো ও সমৃদ্ধ। নবম শতাব্দীর পার্সিয়ান অ্যালকেমিস্ট আল-রাজির ‘আল-আসবার’ বইয়ে এমন তেলের প্রদীপের বর্ণনা পাওয়া যায়। যার নাম ছিল নাফাতাহ। ১৫০০ শতাব্দীর দিকে পারস্যে ব্যাপকভাবে হারিকেনের ব্যবহার শুরু হয়। মধ্যযুগে ইউরোপের বড় বড় শহরে রাতে পাহারাদাররা এক ধরনের তেলের বাতি ব্যবহার করতেন, যা ছিল হারিকেনেরই আদি সংস্করণ। আমাদের গ্রামবাংলা থেকে হারিকেন বিলুপ্তপ্রায়। যা-ও বা দু-একটার দেখা মেলে, তা কোনো রিকশাওয়ালা রিকশায় বা ভ্যানওয়ালার ভ্যানের নিচে বাঁধা, অন্ধকার পথের সাথী হয় মানুষকে পথ দেখাতে।
প্রাবন্ধিক
