তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি
এমদাদুর রহমান উদয়
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বর্তমানে দেশে চলছে প্রচণ্ড গরমের প্রভাব। দিনের বেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে অনেক স্থানে। এ অস্বাভাবিক তাপমাত্রা জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এর ফলে হিটস্ট্রোকজনিত সমস্যার ঝুঁকি বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সতর্ক না হলে এ পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
হিটস্ট্রোক হচ্ছে মূলত শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার একটি অবস্থা, যেখানে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় এবং তা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তারও বেশি হতে পারে। তাৎক্ষণিক ও যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া না হলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল ও মে মাসজুড়ে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে তীব্র দাবদাহ বয়ে গেছে। শুধু গত সপ্তাহেই হিটস্ট্রোকজনিত কারণে অন্তত ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, শিশু, বৃদ্ধ এবং যাদের আগে থেকেই হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ বা ডায়াবেটিস আছে, তারা সবচেয়ে বেশি হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাছাড়া যারা রোদে কাজ করেন, যেমন-নির্মাণ শ্রমিক, কৃষক, রিকশাচালক কিংবা ট্রাফিক পুলিশ-তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি।
হিটস্ট্রোক থেকে মুক্ত থাকতে হলে এর লক্ষ্মণগুলো জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। হিটস্ট্রোকের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি, বিভ্রান্তি বা অচেতন হয়ে যাওয়া, শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, ঝিমঝিম ভাব বা অতিশয় দুর্বলতা অনুভব করা ইত্যাদি। এ লক্ষণগুলো কারও মধ্যে দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ছায়াযুক্ত ও ঠান্ডা স্থানে নিয়ে যেতে হবে এবং দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সময়ে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে শরীরে পানির ঘাটতি হতে না দেওয়া। এজন্য প্রতিদিন অন্তত ৩-৪ লিটার পানি পান করতে হবে এবং সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলতে হবে।
হিটস্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য; কিন্তু একবার আক্রান্ত হলে, তা দ্রুত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে তাই সচেতন থাকা জরুরি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়া বিভাগ থেকে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা, সরাসরি রোদে বের না হওয়া, প্রয়োজনে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করা, হালকা রঙের ঢিলেঢালা ও সুতি কাপড় পরিধান করা। ফলমূল ও পানিসমৃদ্ধ খাবার যেমন-তরমুজ, শসা, ডাবের পানি বেশি বেশি খাওয়া। তাছাড়া নিজ ঘরে থাকলেও পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়েও জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে বিশুদ্ধ খাবার পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন, পাশাপাশি ছায়াযুক্ত বিশ্রামকেন্দ্র স্থাপন, শ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট বিরতির ব্যবস্থা রাখা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম বেগমান করা।
তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্য সচেতনতা, ব্যক্তিগত সতর্কতা এবং সরকারের তৎপরতা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখনই যদি আমরা সতর্ক না হই, ভবিষ্যতে এর পরিণতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে।
শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
