Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

অস্তিত্বের সংকটে ঢাকা জিপিও

Icon

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অস্তিত্বের সংকটে ঢাকা জিপিও

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা জিপিও, সাধারণ মানুষের কাছে যেটি জিপিও (জেনারেল পোস্ট অফিস) নামে পরিচিত। মানুষের নাম-পরিচয়, আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এ জিপিও এখন চরম বাস্তবতার মুখোমুখি। বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, জিপিও ভবন সচিবালয়ে যুক্ত করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিবাদ করছেন। প্রতিবাদের মূল কারণ, জিরো পয়েন্টে অবস্থিত জিপিও ভবনটি ‘অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত’ অবস্থায় রয়েছে দাবি করে তা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়ে একটি সারসংক্ষেপ মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। ডাক বিভাগের মূল আপত্তি এখানেই। জিপিও কম্পাউন্ড একটি জনগুরুত্বপূর্ণ কেপিআইভুক্ত স্থাপনা, যেখানে ডাক বিভাগের মোট ১৪টি অপারেশনাল অফিস প্রতিদিন সক্রিয়ভাবে সেবা প্রদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া জেনারেল ফাইন্যান্সিয়াল রুলস এর ২৮০ (১)-এর যে ধারা উল্লেখ করে সরকারের এক বিভাগ থেকে জমি অন্য বিভাগে মূল্য পরিশোধ ব্যতিরেকে হস্তান্তর করার বিধান রয়েছে বলে সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, আদতে তা জমি হস্তান্তরের কোনো বিধান নয়, বরং বিধানটি জেনারেল ফাইন্যান্সিয়াল রুলসের চতুর্দশ অধ্যায়ের নিরাপত্তা জামানতগুলোর বিধান। যে বিধানে বলা আছে, যখন সরকারের কোনো জমি বা ইমারত সরকারের এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে হস্তান্তর করা হয়, তখন এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া সব ধরনের মাশুলমুক্ত হবে। অর্থাৎ, মাশুল প্রযোজ্য হবে কি না, তা নিয়ে মূলত নিরাপত্তা জামানতগুলোর বিধানে আলোকপাত করা হয়েছে। এতে এটা নির্দেশ করে না যে, উক্ত ধারার বদৌলতে সরকারের এক বিভাগের জমি অন্য বিভাগের কাছে হস্তান্তরিত হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে বলা ‘অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত’ জিপিও ভবন আসলে ঢাকা জিপিও’র পোস্ট কোড ১০০০-এর আওতাভুক্ত, যার বিলি ও ডাক সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ এই ঢাকা জিপিও’র মাধ্যমে করা হয়। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা জিপিওতে ডাক বিভাগের সর্ববৃহৎ ট্রেজারি ভল্ট অবস্থিত। প্রতিদিন জিপিও থেকে ৮০টি ডাকঘরে গড়ে দৈনিক ১৫ কোটি ও সপ্তাহে ১০০ কোটি টাকা জিপিওর নিজস্ব ক্যাশ গাড়িযোগে বিতরণ করা হয়। যে গাড়িগুলো (ক্যাশ ওয়াগন) এই ঢাকা জিপিওতেই অবস্থান করে। ঢাকা জিপিও’র ২ লক্ষাধিক সঞ্চয় ব্যাংক গ্রাহক রয়েছে এবং প্রতিদিন জিপিওর কাউন্টারগুলোতে দৈনিক গড়ে এক হাজার সেবা গ্রহীতাকে সেবা প্রদান করা হয়। প্রতিদিন জিপিও’র এরিয়াভুক্ত বিলিযোগ্য ১৫ হাজার ডাকদ্রব্য বুকিং ও সর্টিং করা হয় এখানে। এ ভবনে মাঠ পর্যায়ের দুটি সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কার্যালয় মেট্রোপলিটন সার্কেল ও কেন্দ্রীয় সার্কেলের দপ্তর যা মাঠ পর্যায়ের ডাক ব্যবস্থার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দপ্তর। এ ভবনের স্ট্যাম্পস কার্যালয় যেটি পোস্টেজ/নন পোস্টেজ সব ধরনের স্ট্যাম্পস মজুত, সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিভিল ট্রেজারিতে চাহিদার বিপরীতে স্ট্যাম্পস সরবরাহ এ কম্পাউন্ড থেকেই করা হয়। এখানে বৈদশিক ডাক, ঢাকার কার্যালয় অবস্থিত, যেটি প্রতিদিন বিদেশ থেকে আগত ও বিদেশে প্রেরিতব্য ডাকদ্রব্য নিয়ে কাজ করে। জিপিও কম্পাউন্ডে ঢাকা নগরী দক্ষিণ বিভাগ এবং বিভাগীয় মেইল মোটর গ্যারেজ অবস্থিত, যেখানে সারা দিন বিভিন্ন মেইলরুটে পরিবহণ শেষে ২৮টি বিভাগীয় মেইল গাড়ি অবস্থান করে। এছাড়াও এখানে ডাক বিভাগের কেন্দ্রীয় স্টক ডিপোর কার্যালয় অবস্থিত যেখানে সাপ্লাই আইটেম মজুত থাকে। এত কাজের পরও জিপিও ভবন কিভাবে ‘অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত’ হয় সেটা এক বড় প্রশ্ন।

ঢাকা জিপিও এবং ডাক বিভাগের মহাপরিচালকের কার্যালয় তথা সদর দপ্তর (যেটি বর্তমানে আগারগাঁওয়ে অবস্থিত) এ দুটি দপ্তর সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের মনে রাখতে হবে, জিপিও ভবন নিছক একটি ভবন নয়, এটি ডাক বিভাগের অন্তত ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রাণের আবেগের জায়গা ও ঐতিহ্যের প্রতীক। আমাদের ডাক বিভাগের রয়েছে বর্ণাঢ্য ইতিহাস। একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান, যার সঙ্গে হাজার হাজার মানুষের আবেগ জড়িত, সেই প্রতিষ্ঠানকে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে নতুন সংকটের দিকে ঠেলে দেওয়া হোক, তা আমরা সাধারণ জনগণ কামনা করি না। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার তার বিচক্ষণতা দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, কোনো ভুল তথ্যের ভিত্তিতে নয়।

প্রোগ্রামার, ডাক অধিদপ্তর, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ

জিপিও

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম