পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের পাশে দাঁড়ান
ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। কৃষি দেশের জিডিপিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আর মৌসুমের রবিশস্যের মধ্যে অন্যতম একটি ফসল হচ্ছে পেঁয়াজ। দেশের অর্থকরী ও জনপ্রিয় মসলাজাতীয় এ ফসল অতি গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্যও বটে। মানবসভ্যতার ইতিহাসের আদিযুগ থেকেই পেঁয়াজের ব্যবহার হয়ে আসছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের সমাজেই রান্নার ক্ষেত্রে পেঁয়াজের ব্যবহার দেখা যায়। খাবার তৈরিতে পেঁয়াজের জুড়ি নেই। বিশেষ করে পেঁয়াজ বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ব্যবহৃত মসলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। পেঁয়াজের বৈজ্ঞানিক নাম হলো-Allium cepa. পেঁয়াজের পাতা ও কলি ভিটামিন ‘এ’ এবং ডাঁটা ভিটামিন-‘সি’ ও ‘ক্যালসিয়াম’ সমৃদ্ধ থাকে। এতে আমিষ, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও সালফার ইত্যাদি খাদ্য উপাদানও রয়েছে। আর খাবার দ্রুত হজমকারক ও রুচিবর্ধক হিসাবেও এর জুড়ি নেই। অন্যদিকে পেঁয়াজ সাধারণত মসলা হিসাবে ব্যবহৃত হলেও সবজি ও সালাদ হিসাবেও পেঁয়াজ ব্যবহারের প্রচলন দেশে রয়েছে। এক্ষেত্রে অন্য অনেক মসলার মতো পেঁয়াজ খাদ্যদ্রব্যকে আকর্ষণীয় করে। সেই সঙ্গে খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণও অনেকাংশে বৃদ্ধি করে। এর ঔষধি গুণও রয়েছে অপরিসীম।
উল্লেখ্য, পেঁয়াজ উৎপাদনে শীর্ষ ১০টি দেশের অবস্থান বিবেচনা করা হলে দেখা যায় প্রথম স্থানে রয়েছে চীন। অন্যদিকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। আর তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশটিতে পেঁয়াজের দাম একটু সহনীয় পর্যায়ে থাকে বলে সেখানকার মানুষের কাছে চাহিদাও বেশি। ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশেও আমদানি হয়ে থাকে। অবশ্য বর্তমানে বিরাজমান রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে আপাতত ভারতের পণ্য আমদানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে পেঁয়াজের প্রায় ২৬ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়ে থাকে প্রায় ২৯ লাখ টন। বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় হলেও কেন আমদানি করা হয়ে থাকে, এ প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানাভাবে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যায়।
পেঁয়াজের সংগ্রহ পরবর্তী ক্ষতি হ্রাস করার জন্য সংগ্রহ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করা আর পেঁয়াজ সংরক্ষণের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসাবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পাশাপাশি প্রধান প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকায় কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজের আধুনিক সংরক্ষণাগার নির্মাণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর জন্য স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা উচিত। মৌসুমে চার মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখলে দেশের পেঁয়াজ চাষিরা লাভবান হবেন। এছাড়া আপৎকালীন কৃষকদের কাছে থেকে সরকারিভাবে পেঁয়াজ ক্রয় ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঘাটতির সময় বাজারে সরবরাহের মাধ্যমে পেঁয়াজের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখা যেতে পারে, বিশেষত বছরের যে সময় পেঁয়াজের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। সে তাই সময়কে চিহ্নিত করে পূর্ব থেকেই প্রয়োজনীয় আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে, সে ব্যাপারে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
লেখক ও গবেষক
