চাই সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নারী নেতৃত্ব
এ কে এম রেজাউল করিম
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আজ যখন দেশে নারী নেতৃত্বের কথা বলা হচ্ছে, তখন আমাদের ভাবতে হবে-এ নেতৃত্বটি আসলে কোথা থেকে আসছে? নারী কি সত্যিকার অর্থেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন, নাকি তারা হয়ে উঠেছেন রাজনৈতিক কোটার অলংকার মাত্র? বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে বর্তমানে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে। এগুলোয় সরাসরি ভোট হয় না। রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ আসনে তাদের অর্জিত সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে একটি ভাগ পায় এবং নিজের পছন্দের নারীকে মনোনয়ন দিয়ে এমপি বানায়। অনেকাংশে এটি হয় ত্যাগী নেত্রীদের অবহেলার মঞ্চ এবং প্রভাবশালী স্বামীদের স্ত্রীর জন্য সংরক্ষিত ট্রফি। এ পদ্ধতি যে কতটা অযৌক্তিক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জুলাই ’২৪-এর গণ-আন্দোলন আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ কোটানির্ভর পলিসি চায় না। তারা চায় মেধা, শ্রম এবং জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে নেতৃত্ব গড়ে উঠুক। সংরক্ষিত নারী আসন এখন আর নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক নয়।
সরকার চাইলে নারী নেতৃত্ব বিকাশে বাস্তবমুখী ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে। যেমন-প্রতি তিনটি সাধারণ আসন মিলিয়ে একটি নারী আসনের জন্য নতুন এলাকা নির্ধারণ করা। এ আসনে শুধু নারী প্রার্থী দাঁড়াতে পারবেন এবং ভোটার হবেন জনগণ। একই সঙ্গে সাধারণ আসনের জন্য একজন প্রার্থী ও নারী কোটা আসনের জন্য একজন নারী প্রার্থী, দুজনের জন্য পৃথক ব্যালট রাখা যেতে পারে। এতে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নারী এমপি নির্বাচন করা সম্ভব। প্রতিটি দলকে নির্বাচন কমিশনের নিয়মে বাধ্য করা যেতে পারে, যাতে তারা ন্যূনতম ১/৩ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। এতে নারী প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসে ভোট নিয়ে সংসদে প্রবেশ করবেন, যা সম্মানজনক ও টেকসই নেতৃত্ব নিশ্চিত করবে। একজন নারী সংসদ-সদস্য যদি ভোট না নিয়ে পরিচয়ের জোরে আসেন, তাহলে তার নিজেরই আত্মবিশ্বাস ও গণমান্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ে। তাদের দায়বদ্ধতাও থাকে না ভোটারদের কাছে। এ ধারাকে থামাতে হলে কোটাভিত্তিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সবাইকে সংসদে ঢুকিয়ে দিয়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। দরকার এমন একটি সরকার, যারা এক্সটার্নাল স্টেকহোল্ডারদের নারী সংগঠন, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষক, শ্রমিক, পেশাজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়। সংসদ যেন শুধু এমপি রাখার জায়গা না হয়, বরং হয়ে উঠুক সৎ, জনপ্রিয় ও কাজ জানা প্রতিনিধিদের মঞ্চ। আমি ব্যক্তিগতভাবে সংরক্ষিত নারী আসন ব্যবস্থার বিলুপ্তির পক্ষে। অন্তত প্রথম ধাপে এটিকে সরাসরি নির্বাচনের আওতায় আনুন। নারী প্রার্থীরা জনগণের কাছে যান, ভোট চান, বিতর্কে অংশ নেন, মাঠে থাকেন; তাহলে তিনিই হবেন আমাদের প্রাপ্য নারী নেতৃত্ব। আসুন, নারীর ক্ষমতায়নের নামে কৃত্রিম অলংকার নয়, প্রকৃত নেতৃত্বকে স্বাগত জানাই।
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র
