Logo
Logo
×

বাতায়ন

ইস্যু যখন উত্তর-পূর্ব ভারত

Icon

আবু রূশদ

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইস্যু যখন উত্তর-পূর্ব ভারত

বাংলাদেশে বহুদিন ধরে একটি আলোচিত ইস্যু হচ্ছে উত্তর-পূর্ব ভারত। ভারতের জন্য উত্তর-পূর্ব ভারত কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ও বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থান কীভাবে ওই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই কতগুলো রেফারেন্স টানতে পারি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পরে ভারতের প্রখ্যাত সমরবিশারদ কে সুব্রামনিয়াম স্বামী ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে তার এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের অবস্থান কৌশলগত উত্তর-পূর্ব এলাকায় ভারতের নিরাপত্তার জন্য একটি দুর্বলতার জন্ম দিয়েছে। যদি আসাম ও অন্যান্য উপজাতি অধ্যুষিত প্রদেশে অথবা এর সীমান্তে বার্মায় পরিস্থিতির অবনতি হয়, যা ওই এলাকায় ভারতের নিয়ন্ত্রণে সমস্যার সৃষ্টি করে, তাহলে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান অবশ্যই একটি জটিল সমীকরণ তৈরি করবে।’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার আনোয়ারুল আজিম খান ঢাকা কুরিয়ারের ১৫ এপ্রিল ১৯৯৪ সংখ্যায় তার লেখায় বলেন, ‘বাংলাদেশের আবির্ভাব ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী সাতটি রাজ্য তখন থেকে আজ পর্যন্ত কাশ্মীরের পরপরই সবচেয়ে বেশি গোলযোগপূর্ণ অঞ্চল...’।

১৯৯১ সালে প্রকাশিত বিস জার্নালে বাংলাদেশের অধ্যাপক নুরুজ্জামান তার ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি অফ বাংলাদেশ’ শিরোনামের নিবন্ধে উল্লেখ করেন, “১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশ এ অঞ্চলে ও বিশ্বে তার স্বকীয় চিন্তাচেতনা ও সম্পর্কের ধারণা নিয়ে একটি স্বাধীন ‘খেলোয়াড়’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।’’

এদিকে ১৯৯৬ সালের ২ এপ্রিল বাংলাদেশের দৈনিক জনকণ্ঠের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে একসময় বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার জেএন দীক্ষিত বলেন, ‘আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের আবেগ জড়িয়ে ছিল এ যুদ্ধের (১৯৭১) সঙ্গে। আমরা যদি আপনাদের সাহায্য না করতাম, এ প্রদেশ হয়তো বাঙালি জাতীয়তাবাদের আবেগ নিয়ে সাহায্যে এগিয়ে যেত, বাঙালি আত্মপরিচয়ের আকাঙ্ক্ষা থেকে প্রদেশটি হয়তো অবশেষে বিচ্ছিন্নতার দিকেও এগিয়ে যেত।...সে সময় পূর্ব পাকিস্তানকে ব্যবহার করে পূর্ব ভারতে পাকিস্তান যেসব তৎপরতা চালাচ্ছিল, তাতে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম। আর এ ধরনের একটি ভাবনা সব মহলেই গড়ে উঠেছিল যে, একটি স্বাধীন বাংলাদেশ হয়তো এসব সমস্যার সমাধান দেবে।’ ভারতের আরেকজন বিশ্লেষক শ্রীকান্ত মহাপাত্র ১৯৯১ সালের অগাস্টে তার লেখা প্রবন্ধ, ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড আর্মড ফোর্সেস ইন বাংলাদেশ’-এ তাই হয়তো বলেছিলেন, ‘ঢাকায় অর্থাৎ বাংলাদেশে কেবলমাত্র একটি বন্ধুপ্রতিম সরকারই ভারতের নিরাপত্তার এসব সংবেদনশীল প্রসঙ্গ অনুধাবন করতে পারবে।’

এখন দেখি ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ভারতের সেনাপতি জেনারেল (পরবর্তীকালে ফিল্ড মার্শাল) মানেকশ’ কী বলেছিলেন বাংলাদেশ নিয়ে। ২৯ এপ্রিল ১৯৮৮ সংখ্যা দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়, তাহলে ভারতের তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের সৈনিকরা যেদিন বাংলাদেশ মুক্ত করে সেদিনই আমি এই সত্য উপলব্ধি করি। বাংলাদেশের কখনোই ভারতের প্রতি তেমন ভালোবাসা ছিল না। জানতাম ভারতের প্রতি তাদের ভালোবাসা ক্ষণস্থায়ী। অনুপ্রেরণার জন্য তারা ভারতের দিকে না তাকিয়ে বরং মক্কা ও পাকিস্তানের দিকেই তাকাবে। আমাদের সত্যাশ্রয়ী হওয়া উচিত।’

এখন আসা যাক উত্তর-পূর্ব ভারত প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম এটি নিয়ে কথা বলে, শিলিগুড়ি করিডর নিয়ে মতামত দেয়, তা উৎসাহব্যঞ্জক। কিন্তু এ বিষয়টি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হয়তো তারা সেভাবে আঁচ করতে পারে না। পাকিস্তান আমলের শুরুর দিকে কাশ্মীর সমস্যার টিট ফর ট্যাট হিসাবে মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সীমিত পর্যায়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সেসময় চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের বিশেষ কোনো কৌশলগত সম্পর্ক ছিল না। ভারতের নাগাল্যান্ডের রাজনৈতিক নেতা ড. এজেড ফিজো সর্বপ্রথম ১৯৫৬ সালে যখন পূর্ব পাকিস্তানে এসে তার এলাকার স্বাধীনতার জন্য সহায়তা চান, তখন পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা অতি গোপনে নাগা সংগঠন-নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিলের (এনএনসি) গেরিলাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় আশ্রয় প্রদান করে। এর আগে ড. ফিজো ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার একদিন আগে অর্থাৎ পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে ভারতের পুরো নাগা অধ্যুষিত অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গঠিত হয় এনএনসি।

পরবর্তীকালে পাকিস্তানি গবেষকদের দুয়েকজনের প্রকাশিত বই ও নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ওই যুদ্ধের পরপর আইএসআই ভারতে তাদের এক গুরুত্বপূর্ণ সোর্স মারফত একটি মূল্যবান মার্কিন ডকুমেন্ট উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সেটা দিল্লির পাক হাইকমিশন থেকে সরাসরি আইয়ুব খানের কাছে পাঠানো হয়। সেই নথিটি ছিল ‘ব্যাংসাম’ (বাংলাদেশ-আসাম) প্রকল্প নিয়ে। তাতে বলা হয়, চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির সামনে হয়তো ভারত একসময় কাবু হয়ে যাবে ও উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না। অপরদিকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বহু দূরে বিচ্ছিন্ন পূর্ব পাকিস্তানও টিকতে পারবে না ভারতের প্রভাবের মুখে। এ অবস্থায় যদি বাংলা ও আসাম নিয়ে একটি বড় মুসলিম প্রধান দেশ গঠন করা যায়, তা হয়তো একসময় একটা বাফার ও ভারসাম্য হিসাবে কাজ করতে পারে। এখানে কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারতের পুরো অঞ্চলের কথা বলা হয়নি।

যদিও এ নথিটির পুরো সত্যতা সম্পর্কে ধোঁয়াশা রয়েছে এবং এর কোনো বিশেষ রেফারেন্স আজ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার প্রকাশ করেনি; তারপরও অনেকে মনে করেন, আইয়ুব খান ওই নথিটি দেখেই বুঝে যান, মার্কিনিদের মনোভাব বা গ্রান্ড স্ট্র্যাটেজি। এ সময়ে আইয়ুব সরকারের অতিদ্রুত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে জোর তৎপরতা এ ইঙ্গিত দেয় যে, হয়তো পাকিস্তান মার্কিনিদের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের আগেই নিকটতম প্রতিবেশী চীনকে সঙ্গে নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের হয়তো ধারণা জন্মে যে, এতে যেমন একদিকে কাশ্মীরের ওপর থেকে চাপ কমবে, তেমনই তিনদিক ঘেরা পূর্ব পাকিস্তান নিরাপদ থাকবে।

সেসময় পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ছিল প্রায় একশ ভাগ মার্কিন সমরাস্ত্রনির্ভর। আইয়ুব খান বিকল্প চিন্তা শুরু করেন এবং চীনের সঙ্গে অতি দ্রুত সামরিক সম্পর্ক তৈরির উদ্যোগ নেন। তার চীনপন্থি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভুট্টো এতে পালন করেন সক্রিয় ভূমিকা।

মূলত এ সময় থেকেই পুর্ণোদ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয় ভারতীয় স্বাধীনতাকামীদের প্রশিক্ষণ ও আশ্রয় প্রদান। এতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মিজোরামের মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা লালডেঙ্গা। মুক্তিযুদ্ধে কে ফোর্সের কমান্ডার খালেদ মোশাররফ যখন ক্যাপ্টেন ছিলেন; তখন তিনিও একজন প্রশিক্ষক হিসাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের গেরিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালে মুজিব বাহিনীর সংগঠক মেজর জেনারেল উবানের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারতীয় স্বাধীনতাকামীদের সব ক্যাম্প ও গোপন অস্ত্রাগারের খবর জানিয়ে দেন তিনি। ৩ ডিসেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে মেজর জেনারেল উবানের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীসহ ভারতীয় স্পেশাল ফোর্স পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন ঈগল পরিচালনা করে। তারা প্রায় প্রতিটি মিজো ও নাগা ক্যাম্প ধ্বংস করে দেয়, অস্ত্রশস্ত্র কবজা করে নিয়ে যায় ভারতে। জে. উবানের লেখা ফ্যান্টমস অব চিটাগাং গ্রন্থে এর বিবরণ রয়েছে।

লালডেঙ্গা ১৯৭১ সালেও পূর্ব পাকিস্তানে ছিলেন; কিন্তু পরিস্থিতির অবনতি হলে আইএসআই তাকে থাইল্যান্ডে নিয়ে যায়, সেখান থেকে তিনি পাকিস্তানে চলে যান। শেষজীবনে এসে লালডেঙ্গা ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেন ও ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সালে মৃত্যু পর্যন্ত মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

বলা যায়, পূর্ব পাকিস্তানের ভূমি ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। তবে এটি ভারতের জন্য তীব্র নিরাপত্তা সংকট তৈরি করে ও একটি পূর্ণ যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশ বানিয়ে সেই সংকট দূর করতে হয়। ভারত যত না বাংলাদেশিদের প্রতি মানবিকতার কারণে যুদ্ধ করেছে, তারচেয়ে এক বিশাল এলাকা হাতছাড়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা ছিল তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই এ এলাকায় হাত দেওয়ার অর্থ হলো, ভারত তার অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে যুদ্ধ করবে যে কোনোভাবেই হোক। এখন দেখার বিষয়, কৌশলগত স্বার্থের জন্য পাকিস্তান এত বড় ঝুঁকি নিয়েছিল এবং এর জন্য বাংলাদেশ তৈরিকে ভারত মনে করেছিল সেই ঝুঁকি থেকে বেরিয়ে আসার প্রকৃষ্ট সমাধান। চীন সঙ্গে থাকায় পাকিস্তানের মধ্যে ধারণা জন্মেছিল, ভারত হয়তো অলআউট ওয়ারে যাবে না, গেলেও চীন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু পাকিস্তানের অস্তিত্ব সংকটের সময় চীন কি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, না বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল? না, সম্ভব ছিল না। ইট ওয়াজ অনলি আ হাফ ডান এফোর্ট। চীন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে কিছু ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, রাইফেল, মেশিনগান দেওয়া ছাড়া সরাসরি সামরিক কোনো সহায়তায় এগিয়ে আসেনি, আসতে পারেনি। বিপরীতে সোভিয়েত রাশিয়া তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল ইস্পাতের প্রাচীরের মতো।

এদিকে কারও কী মনে পড়ে ২০০৪ সালে দশ ট্রাক অস্ত্রের যে ইস্যু তৈরি হয়েছিল, তা সতেরো বছর বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে। যে বিদেশি শক্তি ওই অস্ত্রগুলো বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব ভারতে পাঠাতে চেয়েছিল, তারা কিন্তু ওই ঘটনায় ভারতের তীব্র চাপের মুখে কাবু বিএনপি-জামায়াত সরকারকে কখনোই রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। ওই অস্ত্রগুলো কোন দেশের তৈরি, তা সেগুলোর গায়ে লেখা ছিল। যার জানার তিনি জেনে নিতে পারেন। বলে রাখা ভালো, দশ ট্রাক অস্ত্র ভারতে প্রেরণে তদানীন্তন সরকারের কোনো অনুমোদন ছিল না, অপারেশনের বিষয়টি তারা জানতও না। অথচ এত বড় একটি অপারেশনের মাধ্যমে বিদেশি শক্তি বিএনপি সরকারকে বিপদে ফেলে দিল ঠিকই; কিন্তু একবারও সেই অস্ত্র প্রস্তুতকারী দেশ এগিয়ে আসতে পারল না সহায়তার হাত বাড়িয়ে। তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? নিঃসন্দেহে বলা যায়, যদি কোনো বৃহৎ শক্তি চায়, তাহলে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদের আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে; তবে ছোট দেশ বাংলাদেশ এককভাবে তা পারে না। পশ্চিম রণাঙ্গনের পাকিস্তান সীমান্ত থেকেও উত্তর-পূর্ব এলাকায় কোনো অঘটন ভারতের জন্য বড় সিকিউরিটি থ্রেট। তারা আগেও এজন্য যুদ্ধের রিস্ক নিয়েছে, বাঁচা-মরার লড়াই হিসাবে ভবিষ্যতেও নেবে।

কখনোই উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সংগঠন, তা টিকিয়ে রাখা ও ভারতের বিশাল সামরিক চাপ প্রতিহত করা বাংলাদেশের মতো একটি ক্ষুদ্র দেশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রশ্ন হলো-বাংলাদেশ কেন অন্য কোনো শক্তির স্বার্থে তার ভূমি ব্যবহার করতে দেবে বা ব্যবহৃত হবে? বিশেষ করে সেই বৃহৎ শক্তি যদি বিপদে বাংলাদেশের পাশে শক্তভাবে না দাঁড়ায়, যখন আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।

চীন যদি ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল নিয়ে খেলতে চায়, সে খেলুক। মার্কিনিরাও যদি খেলতে চায়, খেলুক। তবে তাদের নিজ উদ্যোগে খেলুক। কেবল যদি সরাসরি সামরিক চুক্তি বা জোট থাকে কোনো বৃহৎ শক্তির সঙ্গে ও তাদের সামরিক ঘাঁটি থাকে বাংলাদেশে, তখন সমীকরণটি হতে পারে ভিন্ন। আমরা কি কোনো দেশের সঙ্গে সামরিক জোটে যেতে প্রস্তুত? মনে তো হয় না। তাই বলব, বাংলাদেশের কারও উচিত হবে না, উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে কোনো প্ররোচনায় সাথি হতে, ভরসা করতে। ১৯৭১ সালের আগে পাকিস্তান চরম বিপদে সহায়তা পায়নি, দেশের একটা অঞ্চল হারিয়েছে। বাংলাদেশ কার আশায় এই মরীচিকার পেছনে ছুটবে? কার কোন ভরসায় ঝুঁকি নেবে?

বরং বাংলাদেশের উচিত, নিজ সামরিক ক্ষমতাকে সুসংহত করা, বিশ্বস্ত কোনো বন্ধু খুঁজে নেওয়া যে বিপদে সবরকমের সহায়তা দেবে। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান যেভাবে বৃহৎ চীনের পাশে অপর বৃহৎ শক্তি আমেরিকার সহায়তা নিয়ে টিকে আছে, অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে, তা হতে পারে বাংলাদেশের জন্য উদাহরণ। আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা, আক্রান্ত হলে সর্বশক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করা ও সম্মানজনক একটা সমাধানে আসার সক্ষমতা অর্জন করা হলো বাংলাদেশের জন্য সর্বোত্তম পথ।

আবু রূশদ : সাবেক সেনা কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের সম্পাদক

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম