Logo
Logo
×

বাতায়ন

স্বদেশ ভাবনা

নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা প্রসঙ্গে

Icon

আবদুল লতিফ মন্ডল

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা প্রসঙ্গে

গত ১৯ ডিসেম্বর বিএনপি ঘোষিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে’র ২৭ দফা রূপরেখার অন্যতম হলো ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি, সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন।’

বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক নির্বাহী বিভাগ বলতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে বোঝায়। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বরে গৃহীত সংবিধান (অতঃপর যা মূল সংবিধান নামে অভিহিত) ছিল প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে আবর্তিত।

১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান রাষ্ট্রপতিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে, যা ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর ফলে আবার প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে।

মূল সংবিধানের ৫৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বা তার কর্তৃত্বে এ সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হবে। তাছাড়া এ সংবিধানে রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার সীমারেখা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ওই সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়, কেবল প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্র ছাড়া রাষ্ট্রপতি তার অন্যসব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।

১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় সংসদীয় সরকার পদ্ধতির জায়গায় একদলীয় রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করলে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত হয়। এতে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত হবে এবং এ সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রত্যক্ষভাবে অথবা তার অধীনস্থ কর্মচারীর মাধ্যমে প্রযুক্ত হবে [চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংশোধিত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৬(১)]। এ ব্যবস্থা ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনী পর্যন্ত বহাল থাকে। সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় সংসদীয় সরকার পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন করা হয় এবং মূল সংবিধানের ৫৫(২) অনুচ্ছেদ পুনরুজ্জীবিত করে নির্বাহী কর্তৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত করা হয়। তাছাড়া এ সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা সামান্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতির নিয়োগও রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার আওতাভুক্ত করা হয় এবং তা এখন পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি প্রজাতন্ত্রের প্রধান নির্বাহী। তিনি মন্ত্রিসভার নেতা। তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করেন। তার ইচ্ছানুযায়ী মন্ত্রীরা (‘মন্ত্রী’ বলতে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকেও বোঝাবে) নিয়োজিত হন এবং তার সন্তুষ্টির ওপর তাদের মন্ত্রী পদে বহাল থাকা নির্ভর করে। সংসদ নেতা হিসাবে সংসদের কার‌্যাবলির ওপর থাকে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগে তার সুপারিশ অনুযায়ী বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের মধ্যম ও উচ্চ পর্যায়ের পদে পদোন্নতি, পদায়ন তার কর্তৃত্বাধীন। কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ ছাড়া অন্যসব দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন। এমনকি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা হিসাবে তিনি যাকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেন, জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন দল বা জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এক কথায়, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সবকিছুই প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে আবর্তিত।

রাষ্ট্রপতির পদটি অলঙ্কারিক হিসাবে স্বীকৃত। সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কেবল প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তার অন্যসব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগে রাষ্ট্রপতির কোনো স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা নেই। সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী দল বা জোট যে সংসদ সদস্যকে তাদের নেতা হিসাবে নির্বাচিত করেন, তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেওয়া ছাড়া রাষ্ট্রপতির আর কিছু করণীয় থাকে না। অনুরূপভাবে আপিল বিভাগের যে বিচারককে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগের জন্য আইনমন্ত্রী সুপারিশ করেন, তাকে নিয়োগ প্রদান ছাড়া রাষ্ট্রপতির আর কিছু করণীয় থাকে না। আর আইনমন্ত্রী যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে তার সম্মতিতে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ প্রেরণ করেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশে চলমান সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতা প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন থাকেন। বরং বলা যায়, তিনি একটু বেশি পরিমাণে সচেতন থাকেন। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সুপারিশকৃত কোনো প্রস্তাবে কোনো পয়েন্টে তথ্য বা স্পষ্টিকরণ চাওয়ার যৌক্তিকতা থাকলেও রাষ্ট্রপতি তা করেন না। ফলে কোনো প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রদান নিছক আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে আমি এটি লক্ষ করেছি। একাধিক কারণে এটি হয়ে থাকে। এক. সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের নির্দেশনা। দুই. ক্ষমতাসীন দল মনোনীত সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলে তার পক্ষে দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করা সম্ভব হয় না। তিন. বিএনপির শাসনামলে একজন রাষ্ট্রপতি কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে গিয়ে কীভাবে নাজেহাল হন এবং ইমপিচমেন্টের ভয়ে ক্ষোভে-দুঃখে পদত্যাগ করেন সেটি স্মরণে রেখে আর কোনো রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাসীন দল বা জোটের বিরাগভাজন হতে চান না।

ভারত বা ব্রিটেনের রাষ্ট্রপ্রধানের মতো বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ক্ষমতা ভোগ করেন না। সংসদীয় পদ্ধতির একনিষ্ঠ অনুসারী ভারতের সংবিধান প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত করেছে এবং রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তার অধীন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন (অনুচ্ছেদ ৫৩)। রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির ওপর মন্ত্রী পদে বহাল থাকা নির্ভর করে [অনুচ্ছেদ ৭৫(২)]। রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার কোনো সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য মন্ত্রিসভাকে অনুরোধ জানাতে পারেন এবং মন্ত্রিসভার পুনর্বিবেচিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেন। রাষ্ট্রপতি, লোকসভা ও রাজ্যসভা নিয়ে ভারতের পার্লামেন্ট গঠিত।

সংসদীয় সরকার পদ্ধতির সূতিকাগার ব্রিটেনের রাজা বা রানি রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে অনেক ক্ষমতা ভোগ করেন। আইন প্রণয়নে তার সম্মতি প্রয়োজন হয়। তিনি কোনো বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন বা পরামর্শ প্রদান করতে পারেন। রাজা বা রানি এবং হাউজ অব কমন্স ও হাউজ অব লর্ডস নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট গঠিত।

ভারতের রাষ্ট্রপতির মতো বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের প্রধান নির্বাহী নন। ভারতের রাষ্ট্রপতির মতো বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভাকে কোনো সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করতে পারেন না। ভারতের রাষ্ট্রপতি বা ব্রিটেনের রাজা/রানির মতো বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদের অংশ নন।

আমাদের সংবিধানের ৫৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি মন্ত্রিসভা থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রী নিয়ে এ মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি কার‌্যাবলি বণ্টন বা পরিচালনার জন্য প্রণীত বিধিসমূহ বা রুলস অব বিজনেসে বলা হয়েছে কী কী বিষয় মন্ত্রিসভার বিবেচনার জন্য উপস্থাপিত হবে। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো-১. অধ্যাদেশ জারিসহ আইন প্রণয়ন; ২. যুদ্ধ ঘোষণা বা বন্ধ; ৩. ১৯৫৬ সালের কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট অনুসরণে কমিশন অব ইনকোয়ারি নিয়োগ; ৪. জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও বাণী; ৫. জরুরি অবস্থা ঘোষণা বা প্রত্যাহার; ৬. সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো করপোরেশন গঠন; ৭. গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক নীতিনির্ধারণী বিষয়।

আওয়ামী লীগ তার দীর্ঘ শাসনামলে কখনো নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেনি। দেশ শাসনকারী অন্য দুটি দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে কখনো নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার কথা বলেনি। বিএনপি প্রথমবারের মতো নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলে ২০১৬ সালে, যখন দলটি রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে অনুষ্ঠিত বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধনকালে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে সংবিধানে সংশোধনী এনে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতায় ভারসাম্য আনবে। এরপর ২০১৭ সালের ১০ মে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণাকালে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। দেশ শাসনকারী আরেকটি দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে কিছু দিন আগেও প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতার সমালোচনা করতে দেখা গেছে।

তবে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার দাবি অনেক আগেই উঠেছে। ২০০৪ সালের নভেম্বরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে জনপ্রশাসন সংস্কার : বাস্তবায়নযোগ্য কর্মসূচির অন্বেষণে’ শীর্ষক এক সেমিনারে রাষ্ট্রপতিকে সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়। এতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতিকে যেভাবে ক্ষমতাহীন করা হয়েছে, তার নজির পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় নেই। তাই দেশের সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য আনতে প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না করে তা যুক্তিসংগতভাবে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে বণ্টন করা। ২০১৫ সালের ৬ মার্চ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইপিএসএ) যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘রিথিংকিং ডেমোক্রেটাইজেশন : কনসেনসাস বিল্ডিং ফর রেজাল্টস’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন। তাছাড়া সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, সাউথ এশিয়ান লিগ্যাল ইনস্টিটিউট, টিআইবি ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এবং মিডিয়া অনেক দিন ধরে নির্বাহী বিভাগে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার দাবি জানিয়ে আসছে।

নির্বাহী বিভাগে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা গেলে তা সুফল বয়ে আনবে বলে অনেকে মনে করেন। প্রবাদ আছে, ‘Power tends to corrupt and absolute power corrupts absolutely’ অর্থাৎ ক্ষমতা দুর্নীতির প্রবণতা রাখে এবং পরম ক্ষমতা একেবারেই দুর্নীতি করে। নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য এ প্রবণতাকে বহুলাংশে বাধাগ্রস্ত করবে। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হলে তা দেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে সহায়ক হবে। তৃতীয়ত, নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হলে এবং কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির মতো একাদিক্রমে দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হতে না পারলে শাসনব্যবস্থায় পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নিরুৎসাহিত হবে। চতুর্থত, নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হলে শাসনব্যবস্থায় ‘আমিত্ব’ প্রতিষ্ঠা পাবে না।

বিএনপি কীভাবে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে চায়, দলটির ২৭ দফার রূপরেখায় তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। জনগণকে তা বিস্তারিতভাবে জানাতে হবে। জনগণ তা জানার পর বিএনপির প্রস্তাব সমর্থন করবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক সচিব, কলাম লেখক

latifm43@gmail.com

 

নির্বাহী ক্ষমতা.

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম