রাজনৈতিক সৌন্দর্য
এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যে কোনো সরকারি দলের ওপর চাপ প্রয়োগ করার অনুশীলন পরখ করেছি। বিশ্বময় রাজনীতির প্রাণই তা। জনস্বার্থে ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো তা করতে পারলে রাজনীতিকে তখন উপভোগ করাও যায়। তাগিদ আসে তখন সরকারি দলের। মনে হয়, আরও ভালো কিছু করতে হবে দেশের জন্য। মানুষের জন্য। বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর গণমুখী কর্মসূচি নেই।
সেসব রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের চেয়ে উন্নত চিন্তা করতে পারেনি, পারছে না। এটা তাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা। এ কারণে সাধারণ মানুষ তাদের কথিত রাজনৈতিক আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসে না। জনশ্রেণি শেখ হাসিনায় আস্থা রাখে, তারা মনেই করে যে, তার বিকল্প নেতৃত্ব বাংলাদেশে অনুপস্থিত।
সমসাময়িক রাজনীতিতে দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে কেউ চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অর্থবহ চাপ সৃষ্টি করতে পারছে না। অথচ আওয়ামী লীগ প্রত্যাশা করে, জনগণের দল হয়ে দেশের প্রায় চল্লিশটি রাজনৈতিক দল তাদের চাপে রাখুক। কিন্তু হতাশ হতে হয়, যা এখানে চলছে, তা হলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য লক্ষ্যহীন লক্ষ্য এবং তা রাজনৈতিক অপশক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
রাজনৈতিক সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখতেও আওয়ামী লীগ উদারতার অনুশীলনে যেতে পেরেছে। গেল বছর দেশের নামধারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সব বিভাগে রাজনৈতিক সমাবেশ করতে পেরেছে; যা গণতান্ত্রিক ধারায় সৌন্দর্য হয়ে সুবাস ছড়ালেও বিএনপি কাজে লাগাতে পারেনি। তারা কী কী জনস্বার্থে লড়ছে, তা প্রমাণ করতে পারেনি। সভাগুলোয় বক্তার অভাব ছিল এবং প্রধানত, উদ্দেশ্য বিক্ষিপ্ত হওয়ায় বোঝাই গেছে তা ছিল লোকদেখানো কর্মসূচি।
বিএনপি আহূত সাম্প্রতিক সময়ের সমাবেশগুলোয় শুধু তাদের শীর্ষনেতাদের মামলা থেকে মুক্তি দাবি করা এবং জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে কেয়ারটেকার সরকারের প্রত্যাশা করার অহেতুক দাবি তাদের জনগণের দল হিসাবে দাঁড় করায়নি। বরং তারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের চেয়েও অতি উন্নত কিছু চিন্তা করছে-এমনটি তুলে ধরতে পারলে মানুষের প্রাথমিক বিশ্বাস অর্জন করার পর্যায়ে চলে যেতে পারত। কিন্তু তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সমর্থকদের দ্বারা সমাবেশস্থল পরিপূর্ণ করার পর পুরোনো ও যুক্তিহীন কুতর্ক করেছে মঞ্চে। এ মঞ্চ থেকে তারা গণতন্ত্রের জন্য লড়বে বলে দাবি করলেও তাদের নিজেদের দলের মধ্যেই যে গণতন্ত্র নেই, তা ভুলে গেছে।
আওয়ামী লীগ গেল ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে দলের শীর্ষনেতাকে বেছে নিয়েছে। অথচ বিএনপি তাদের দণ্ডিত দুই শীর্ষ ব্যক্তি দ্বারাই দল পরিচালনা করছে, যা নিজেদের কথিত আন্দোলনের প্রকৃতি ও পরিধিকে খর্ব করে। দেশের জন্য গণতন্ত্র চাইতে হলে আগে নিজ দলের মধ্যেও গণতান্ত্রিক অনুশীলন করতে হবে। তাদের একটি ক্রেডিবল কাউন্সিল করে দল পুনর্গঠন করাও উচিত।
আমি বিশ্বাস করি, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা তেমন উদ্যোগে যাবেন। তবে দলটি লন্ডনভিত্তিক হওয়ায় পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক অপশক্তির মতো করে আচরণ করছে। যেখানে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সম্ভাব্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত প্রধান সম্বল হতে পারে-তেমন বাস্তবতায় খোশমেজাজে আছে দেশের বুর্জোয়া রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি। উপরন্তু, দেশের সুবিধাভোগী সুশীল সমাজ ও পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের কতিপয় উদ্যোক্তা বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় বিরাজনীতিকরণ ধরা দিক তেমন স্বপ্নে বিভোর হওয়ায় সার্বিক চিন্তায় আওয়ামী লীগ পরিবেষ্টিত আছে।
রাজনীতির সোজা পথে পথিক হয়ে রাজনৈতিক দল কিংবা কোনো মানবকণ্ঠ নেই; যা দেখতে পারলে প্রীত হওয়া যেত। বাঁকা রাস্তায় হেঁটে প্রতিবিপ্লবের গাথায় ভর করে ওদের শাসক হতে চাওয়াকে ঔদ্ধত্য বলে। দার্শনিক প্লেটোর সেই নিকৃষ্ট শাসক, যারা জোর করে শুধু ক্ষমতা চায়, জনগণের জন্য পরিকল্পনা থাকে না যাদের। উদাহরণ দিয়েই বলছি, তারা কথিত রাষ্ট্র মেরামতের জন্য যে ২৭ দফা প্রদান করল, তার ফলোআপ সভা কিংবা সেমিনার কোথায়? অর্থাৎ, তুমি দেশের জন্য যা যা করতে চাও, তা দিনের পর দিন তুলে ধরতে সংগ্রাম আবহে কর্মসূচি দিচ্ছ না কেন?
এর অর্থ হলো, তা শুধুই মানুষকে দেখানোর একটি ছলজাতীয় রাজনৈতিক সূচি ছাড়া আর কিছু নয়। তারা যদি প্রত্যহ ওই ২৭ দফা নিয়ে মেতে থাকত, তাহলে আমি নিজেই খণ্ডন করে বলতে পারতাম তোমাদের ওই ২৭ দফায় কী কী ভুল আছে, কোন দফা নিজেদের উপযোগী শাসনব্যবস্থা কায়েমে অনুপযুক্ত; কিংবা কোন দফাগুলো যুক্তিযুক্তও বটে! সেখানেই তো রাজনৈতিক সৌন্দর্য।
খুব স্পষ্ট করে বললে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ইস্যুতে ২০২৩ সালেও কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। চ্যালেঞ্জ আছে বাংলার মানুষগুলোর জন্য। কীভাবে ওদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব, সেই প্রশ্নে। বিশ্বসেরা নেত্রী শেখ হাসিনা তার নেতৃত্বের অনন্য বিকাশে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে নির্ভার রেখে এগিয়ে যাবেন, এমন পরিপূর্ণ বিশ্বাস দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আছে। তার সাংস্কৃতিক পথচলার গভীরতা প্রখর হওয়ায় বাংলাদেশ দিকভ্রষ্ট হবে না, পথ হারাবে না।
এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন : সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
