Logo
Logo
×

বাতায়ন

যেভাবে বরণ করা হয় বঙ্গবন্ধুকে

Icon

সোহেল সানি

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যেভাবে বরণ করা হয় বঙ্গবন্ধুকে

‘রক্ত দিয়েই যদি স্বাধীনতার মূল্য নিরূপণ করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে।

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এমন স্বাধীনতা অর্জন পৃথিবীর কয়টা দেশ-জাতি পেরেছে, আমার জানা নেই, যার মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।’

ব্রিটেনের বিখ্যাত সংবাদপত্র New Statesmen-এর সম্পাদক কিংসলি মার্টিন তার স্বনামে প্রকাশিত এক বিশেষ সম্পাদকীয়তে উপর্যুক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন।

অথচ তখনো রমনার রেসকোর্স ময়দানে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণে পূর্বদিগন্তে বিজয়-নিশান উড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেনি।

ওই রেসকোর্স ময়দান থেকেই ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু মুক্তির ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়ে জ্বালাময়ী ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা কর।’ সেই রেসকোর্স ময়দানেই জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে পাকবাহিনীর ৯০ হাজার সৈন্যের আত্মসমর্পণের দৃশ্য মঞ্চস্থ হলো।

কিন্তু বিজয় এলেও বাঙালির সার্বিক মুক্তি তখনো অপূর্ণ থেকে যায় জাতির পিতা পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির কারাগারে বন্দি থাকায়। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ঘরে-বাইরে তখনো উৎকণ্ঠা আর নানা গুজব।

মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও মুজিব বাহিনীর দ্বন্দ্ব উৎকণ্ঠা ও গুজবকে আরও প্রকট করে তুলছিল। মুজিব বাহিনী রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে জনসভা করারও ঘোষণা দেয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর মুক্তির ব্যাপারে আন্তরিক নন-এমন গুজবও রটে যায়।

এ পরিস্থিতিতে তাজউদ্দীন ছুটে যান বেগম মুজিবের কাছে-ধানমন্ডির ১৮ নম্বরের বাড়িতে। তিনি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির বিষয়ে সরকারের সার্বিক তৎপরতা সম্পর্কে বেগম মুজিবকে অবহিত করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে চাপ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ৬৭টি দেশের সরকারপ্রধানকে চিঠি দেন। তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি করেন। কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারা শেখ মুজিবের কিছু হলে ফলাফল ভয়াবহ হবে বলেও হুমকি দেয়। ৮ জানুয়ারি সকাল ৭টায় বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে প্রচারিত খবরে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বিমানযোগে লন্ডনে আসছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।’ অবতরণের পরপরই ব্রিটিশ বৈদেশিক দপ্তরের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান। ব্রিটিশ সরকারের সম্মানিত অতিথি হিসাবে লন্ডনের ক্ল্যারিজেস হোটেলে নিয়ে আসা হয় তাকে। বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতির কথা জেনে হাজার হাজার বাঙালি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে লন্ডনের আকাশ-বাতাস মুখর করে তোলে। দুপুরের দিকে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এক মুহূর্তের জন্যও আমি বাংলাদেশের কথা ভুলিনি। আমি ধরে নিয়েছিলাম ওরা আমাকে হত্যা করবে। আমি আপনাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাব না। কিন্তু আমার জনগণ মুক্তি অর্জন করবে।’

বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডনে পৌঁছান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথ তখন ছিলেন লন্ডনের বাইরে। বঙ্গবন্ধুর পৌঁছানোর কথা শুনে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী হিথ ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ছুটে আসেন এবং বঙ্গবন্ধুকে নজিরবিহীন সম্মান দেখান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের বাইরে এসে গাড়ির দরজা খুলে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন, যতক্ষণ না বঙ্গবন্ধু গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। ৮ জানুয়ারি রাতে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে অ্যাডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বীকৃতির বিষয়টি উত্থাপন করেন।

৯ জানুয়ারি সকালে লন্ডনে বসেই টেলিফোনে ইন্দিরা গান্ধী-বঙ্গবন্ধুর মধ্যে আধঘণ্টা আলোচনা হয়। বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানান ইন্দিরা গান্ধী এবং অনুরোধ করেন ঢাকার পথে যেন তিনি দিল্লিতে যাত্রাবিরতি করেন। বঙ্গবন্ধু আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং দিল্লির উদ্দেশে রওয়ানা হন।

দিল্লির ‘এক্সপ্রেস’ পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, ‘কালো-ধূসর ওভারকোট পরে বঙ্গবন্ধু উড়োজাহাজের সিঁড়ি বেয়ে নামলেন। প্রেসিডেন্ট ভিভি গিরি বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করলেন। পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বাগত জানাচ্ছিলেন। তখন ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানানো হয়। শুভেচ্ছা পর্ব শেষে বঙ্গবন্ধু তিন বাহিনীর ১৫০ সদস্যের গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেন এবং পরে ভিআইপি প্যান্ডেলে যান। সেখানে তাকে ফুল ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি লন্ডন থেকে বঙ্গবন্ধুর সহযাত্রী হন। তিনি লিখেছেন, ‘৯ জানুয়ারি ১৯৭২, ভোর ৬টা। লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে পৌঁছান বঙ্গবন্ধু। তাকে স্বাগত জানালেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিভাগের কর্মকর্তা ইয়ান সাদারল্যান্ড ও লন্ডনে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার আপা বি পন্থ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথের সঙ্গে শেখ মুজিবের বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেন ইয়ান। আর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার যোগাযোগ করিয়ে দেন আপা বি পন্থ। ফেরার পথে বিমানের সিটে সামনের টেবিলে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সুগন্ধময় এরিনমোর তামাক, আর সেই বিখ্যাত পাইপ রাখা ছিল। দেশে ফেরার জন্য উৎফুল্ল মুজিবের তখন তর সইছে না।’ আপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলে উঠলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।’ তিনি বললেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যদের ৩১ মার্চের (১৯৭২) মধ্যে ভারতকে ফেরত নিতে হবে। ভারতীয় মিত্রবাহিনী চলে গেলে ব্রিটিশ সরকার স্বীকৃতি দেবে। শশাঙ্ক ব্যানার্জি লিখেছেন, ‘উড়োজাহাজ আকাশে থাকতেই বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে গাইতে লাগলেন, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।

এদিকে বঙ্গবন্ধু একটি চার্টার্ড বিমানে করে লন্ডনের পথে রয়েছেন-৭ জানুয়ারি রাতে বিবিসির এই খবরে মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ওইদিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেছার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন বেগম মুজিবকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশে ফেরার সময়সূচি জানান।

বঙ্গবন্ধু ৯ জানুয়ারি রাতে লন্ডন ত্যাগ করে পরদিন দিল্লিতে পৌঁছে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। ভারতীয় একটি বিমানে কলকাতায় এক ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করে বিকাল ৪টার দিকে তিনি ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। বেগম মুজিব প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনকে অনুরোধ করে বলেন, দিল্লিতে বিমানে পরিবর্তন করলে ব্রিটেন মনঃক্ষুণ্ন হতে পারে। তার ব্রিটিশ বিমানেই ঢাকায় আসা উচিত। ততক্ষণে তাজউদ্দীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ডিপি ধরকে ফোন করে বেগম মুজিবের পরামর্শ জানিয়ে দেন। সে অনুযায়ী ১০ জানুয়ারি দুপুরের দিকে ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান ‘কমেট’ দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ইন্দিরা গান্ধী ও তার মন্ত্রিসভা বিশাল অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। লাখ লাখ ভারতীয়ের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এক বিরাট সংকল্প নিয়ে আমি ফিরে যাচ্ছি আমার দেশে-বাংলাদেশে। সামনে যে পথ আমরা রচনা করব, তা হবে শান্তির এবং প্রগতির পথ। কারও জন্যে কোনো ঘৃণা বুকে নিয়ে আমি ফিরছি না। মিথ্যার ওপরে সত্যের জয়, অশুচিতার ওপরে শুচিতার জয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জয় এবং সর্বোপরি অশুভ ও অসত্যের ওপরে সর্বজনীন সত্যের বিজয়ের প্রেক্ষাপটে আমি ফিরে যাচ্ছি আমার নিজের দেশে।’

১০ জানুয়ারি দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে তেজগাঁও বিমানবন্দরে নামেন জাতির পিতা। সেখানকার জনসমুদ্র সাঁতরে রাজনীতির মহাকবি পৌঁছে যান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। লাখো জনতা সেখানে তাকে স্বাগত জানায়। ব্রিটিশ রাজকীয় সাদা কমেট বিমান থেকে অবতরণের সিঁড়ির মুখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রিয় নেতাকে অভিবাদন জানাতে আসা উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম কামারুজ্জামান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, পদচ্যুত মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে মাল্যভূষিত করেন। এরপর মুজিববাহিনীর চার অধিনায়ক শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ এবং মুক্তিযুদ্ধের খলিফাখ্যাত স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আব্দুর রব, শাজাহান সিরাজ ও আবদুল কুদ্দুস মাখন বঙ্গবন্ধুকে মাল্যভূষিত করেন। তারা ডজ ট্রাকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাত্রা করেন রেসকোর্স ময়দান অভিমুখে। ছাত্রনেতাদের নিয়ন্ত্রিত ট্রাকটিতে গাদাগাদি করে দণ্ডায়মান ছিলেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।

ছাত্রলীগ নেতারা ব্যূহের মতো করে মঞ্চের কাছে নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধুকে। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদের কণ্ঠ মাইকে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে গর্জে উঠে শোনায় বঙ্গবন্ধুর আগমনি বার্তা। তোফায়েল আহমেদ রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে বলেন, ভাইসব, বঙ্গবন্ধু মঞ্চের দিকে আসছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি ভাষণ দেবেন। কিন্তু তার আগে বঙ্গবন্ধুর এবং আমাদের নিরাপত্তার জন্য দয়া করে সবাই বসে পড়ুন। হাত দুটোকে মাটির ওপর রাখুন। সঙ্গে সঙ্গে নজর রাখুন আশপাশের প্রত্যেকের ওপর। খুনির হাত যে কোনো জায়গা থেকে উঠে আসতে পারে। কড়া নজর রাখবেন। তোফায়েল আহমেদের এ ঘোষণার মধ্যেই চোখের পলকে বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ মানুষের উপচেপড়া ভিড় ঠেলে সভামঞ্চে উঠে আসেন। গগনবিদারী জয়বাংলা স্লোগানে মুখরিত তখন ময়দানের জনস্রোত। তিনি দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিথর হয়ে থাকলেন। ময়দানে উত্তেজনার উদ্বেল আনন্দ ধ্বনি। বঙ্গবন্ধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘‘১৯৭১ সালের ৭ মার্চ আমি বলেছিলাম, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলুন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, আপনারা বাংলাদেশের মানুষ সেই স্বাধীনতা জয় করে এনেছেন।’’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার ফাঁসি হুকুম হয়েছিল, আমার সেলের পাশে আমার কবর খোঁড়া হয়েছিল, আমি মুসলমান, আমি জানি মুসলমান একবারই মরে, তাই আমি ঠিক করেছিলাম, আমি তাদের কাছে নতিস্বীকার করব না। ভুট্টোকে আমি বলেছি, বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এখন যদি কেউ সেই স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে চায়, তাহলে এই স্বাধীনতা রক্ষার করার জন্য শেখ মুজিব সর্বপ্রথম প্রাণ দেবে।’

বঙ্গবন্ধু জনসভা শেষ করে সদলবলে ছুটে যান শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দীর মাজারে। মাজার জিয়ারত করে ওখান থেকে যান শহিদ মিনারে। ততক্ষণে সন্ধ্যা। ওখান থেকে ৩২ নম্বরের সড়কের ধানমন্ডির বাড়িতে, যে বাড়ি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে তাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। সেখানে ফিরে আসেন বাবা, মা, ভাইবোন স্ত্রী, পুত্র-কন্যার মাঝে।

১৮ জানুয়ারি নিউইয়র্ক টাইমসের শ্যানবার্গকে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাকে গ্রেফতার করে জাতীয় পরিষদ ভবনে নেওয়া হয়। সামরিক ছাউনির একটি স্কুলের নোংরা ও অন্ধকার ঘরে রাখা হয় ছয় দিন। মধ্যরাতে জেনারেল টিক্কা খানের ঘরে। ১ এপ্রিল বিমানে করে রাওয়ালপিন্ডিতে। তারপর মিয়ানওয়ালির কারাগারে। আমাকে রাখা হয় ফাঁসির আসামিদের সেলে।’

পাকিস্তান তার বিরুদ্ধে ১২টি অভিযোগে ‘বিচার’ শুরু করে। ছয়টির দণ্ড ছিল মৃত্যুদণ্ড। বিচার শেষ হয় ৪ ডিসেম্বর। ‘ইয়াহিয়া শেখ মুজিবকে হত্যার নির্দেশ দেন।’ ৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুকে মিয়ানওয়ালিতে নেওয়া হয়। ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের আগে ভোরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নির্ধারিত সময়ের দুঘণ্টা আগে জেল সুপার বঙ্গবন্ধুর সেলে ঢোকেন দরজা খুলে। বঙ্গবন্ধু জানতে চান, ‘আমাকে কি ফাঁসির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?’ জেল সুপার জানালেন, তাকে ফাঁসির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না।

বঙ্গবন্ধুকে কয়েক মাইল দূরে এক অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে দেন জেল সুপার। সেখানে নয় দিন কাটে। ১৯ ডিসেম্বর জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করেন। ২৪ ডিসেম্বর ও ৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেষ দেখা করেন ভুট্টো। বঙ্গবন্ধু তাকে বলেন, ‘আজ রাতেই আমাকে মুক্তি দিন অথবা মেরে ফেলুন।’ শেষ পর্যন্ত ভুট্টোকে মুক্তিই দিতে হয়।

সোহেল সানি : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক

 

যেভাবে বরণ .বঙ্গবন্ধু.

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম