Logo
Logo
×

বাতায়ন

কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

Icon

ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। ছোট আয়তন, ভৌগোলিক অবস্থান, অপ্রতুল প্রাকৃতিক সম্পদ, জনসংখ্যার চাপ ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতির কারণে এ সংকটের প্রভাব বেড়ে চলছে। জলবায়ু বলতে সাধারণত কোনো স্থানের ৩০ বছরের বেশি সময়ের আবহাওয়া অর্থাৎ বায়ু, তাপ, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির গড়কে বোঝানো হয়ে থাকে। গত শতাব্দীতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ২৩ শতাংশ, নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ ১৯ শতাংশ এবং মিথেনের পরিমাণ শতভাগ বেড়েছে। বায়ুমণ্ডল ও সমুদ্রের উষ্ণায়ন, তুষারপাত, বরফ গলা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ জলবায়ুসংশ্লিষ্ট দুর্যোগগুলো সৃষ্টির কারণ হিসাবে মানবসৃষ্ট বিভিন্ন বিষয়কে দায়ী করা হচ্ছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কৃষিক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সব থেকে বেশি। খরা, লবণাক্ততা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, নদীভাঙনসহ নানারকম দুর্যোগের ভেতরে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, শীতকালে তীব্র শীত কিংবা এ সময়ে মুষলধারে অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি, নয়তো বর্ষাকালে কম বৃষ্টি, অকাল বন্যা, বন্যার দীর্ঘস্থায়িতা, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি এ দেশের আবহাওয়ার পরিবর্তনের সরাসরি ফল। জলবায়ুর এরূপ পরিবর্তনের কারণে কৃষিজমির উর্বরতাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের তথ্য অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষি খাতের অবদান প্রায় ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। শ্রমশক্তির প্রায় ৪১ শতাংশ কৃষি খাতে বিভিন্নভাবে নিয়োজিত। আর দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল।

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘জার্মান ওয়াচে’ প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক-২০২১’ অনুযায়ী, দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এখনই কমানো না গেলে বিশ্ববাসীকে খুব শিগ্গির এর খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হবে। সেদিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা মোটেই সুবিধাজনক নয়। বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, পৃথিবীর মোট গ্রিনহাউজ গ্যাসের মাত্র শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ নিঃসরিত হয় বাংলাদেশে। মূলত ভৌগোলিকভাবে এ দেশের অবস্থান, অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও সামাজিক সুরক্ষার অপর্যাপ্ততা বাংলাদেশকে আরও ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। উন্নত দেশগুলো ৮৬ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো মাত্র ১৪ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে আগামী দিনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর একটি হচ্ছে কৃষি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণেই জিডিপির ২ শতাংশ হারাবে বাংলাদেশ।

কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জীবন-জীবিকা চারটি খুঁটির ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে, যার অন্যতম হচ্ছে কৃষি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠ সর্বোচ্চ ১ মিটার উঁচু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে; যে কারণে বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হতে পারে। এ পূর্বাভাস সত্যি হলে তা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে ফেলবে। ২০০০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্ট মতে, কক্সবাজার উপকূলে বছরে ৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার হারে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। গত চার দশকে ভোলো দ্বীপের প্রায় ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা সমুদ্রের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষও রয়েছে নানা বিপদের আশঙ্কায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬৭ সেন্টিমিটার বাড়লে পুরো সুন্দরবনই পানিতে তলিয়ে যাবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্রমতে, রাজশাহীর উচ্চ বরেন্দ্র এলাকাগুলোয় ১৯৯১ সালে পানির স্তর ছিল ৪৮ ফুট। ২০০০ ও ২০০৭ সালে তা নেমে গিয়ে যথাক্রমে ৬২ ও ৯৩ দশমিক ৩৪ ফুট হয়। বর্তমানে এ স্তর আরও নিচে নামছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১১-১৫ শতাংশ অনায়াসে পানির নিচে তলিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ক্রমাগত গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত হওয়ার কারণে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আগের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে গড় বৃষ্টিপাত ২৩০০ মিলিমিটার, যা কি না অঞ্চলভেদে বিভিন্ন সময়ে ১২০০ থেকে ৫০০০ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফলস্বরূপ নিকট অতীতে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিল দেশ। গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের এ পরিমাণ ২০৩০ সাল নাগাদ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশেরও বেশি জমি বন্যাপ্রবণ। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ১ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নানা সময়ে আকস্মিক বন্যার শিকার হয়ে থাকে। জোয়ারের কারণে সৃষ্ট বন্যা উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক আকারে ক্ষতিসাধন করে। বর্তমানে প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ১৫ লাখ হেক্টর জমি বন্যাকবলিত। ২০২২ সালে হওয়া বন্যায় দেশের ৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা। এ বন্যায় ৭৩ লাখ মানুষের পাশাপাশি প্রায় ১০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নদীপ্রবাহ সর্বনিু ১৬ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের কৃষিতে। জলবায়ু পরিবর্তিত হওয়ায় সারা দেশে বর্ষাকালে পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে ওই সময়ে মেঘনা অববাহিকার হাওড় অঞ্চলেও আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। পাহাড়ি এলাকায় অতিবর্ষণের সময় উঁচু এলাকার উপরিভাগের উর্বর মাটি ক্ষয় হয়ে যায়, ফলে এসব এলাকার মাটি ক্রমান্বয়ে উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ধীরে ধীরে ফসল উৎপাদনের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে ফসল উৎপাদনের আরেকটি অন্যতম অন্তরায় হলো খরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যা দিনদিন প্রকট আকার ধারণ করছে। কোনো এলাকায় বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীকরণের মাত্রা বেশি হলে সেখানে খরা দেখা দেয়। প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রার খরায় আক্রান্ত হয়। খরাপ্রবণ এলাকায় খরার তীব্রতা ও স্থিতিকালের ওপর ফসলের ফলন নির্ভর করে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খরার তীব্রতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে বিভিন্ন মাত্রার খরায় আক্রান্ত ৮৩ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমির ৬০ শতাংশ জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়। এছাড়া খরার প্রভাবে আউশ ও বোরো ধান, পাট, ডাল, তেল ফসল, আলু, আখ এবং শীতকালীন সবজি চাষাবাদ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে এর অববাহিকায় খরার তীব্রতা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষিক্ষেত্রটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাত হিসাবেও বিবেচিত। কারণ এর উৎপাদনশীলতা পুরোপুরি নির্ভর করে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, সূর্যের বিকিরণ, রৌদ্রের সময়কাল এবং জলবায়ু সম্পৃক্ত কারণগুলোর ওপর। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল ও শীতকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পাশাপাশি তাপমাত্রার হ্রাস বৃদ্ধির অস্বাভাবিক আচরণও লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেক সময় গ্রীষ্মকালে অতি উচ্চ তাপমাত্রা এবং শীতকালে অত্যধিক শীত পড়তে দেখা যাচ্ছে। তাপমাত্রা পরিবর্তনের এরূপ আচরণের ফলে ফসল চাষে নানাবিধ সমস্যা দেখা যায়। শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে তাপমাত্রার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এরূপ বৈচিত্র্যের জন্য আলুসহ অন্যান্য শীতকালীন ফসল উৎপাদনে ধস নামার আশঙ্কা থেকে যায়। গম চাষেও নানান রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়। ধানের জন্য অসহ্য গরম তাপমাত্রা হলো ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা এর সমান অথবা বেশি হলে ধানে চিটার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে নিু তাপমাত্রার কারণে ধানগাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও চারা দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি এর প্রভাবে ফসলের জীবনকালও বেড়ে যায়, ফলে সঠিক সময়ে ফলনপ্রাপ্তি বিলম্ব হয়। হঠাৎ করে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হলে সরিষা, মসুর, ছোলা ইত্যাদি ফসলের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং এসব ফসলের পরাগায়নও ব্যাহত হয়। অতিরিক্ত তাপ এবং আর্দ্রতা গাছের বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসাবে কাজ করে। সম্প্রতি দেশে উষ্ণতা ও শৈত্যপ্রবাহ উভয়েরই মাত্রা বেড়েছে।

জলবায়ু পরির্তনের কারণে নদীভাঙন বাড়ছে। ফলে প্রচুর উৎপাদনশীল কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরিপ অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১২০০ কিলোমিটার নদীতীর ভেঙে গেছে এবং আরও ৫০০ কিলোমিটার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। অনিয়মিত ও অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচের পানির অপর্যাপ্ততা, উপকূলীয় অঞ্চলে বর্ষা মৌসুম ছাড়াও বিভিন্ন সময় বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া, পানিতে জমি ডুবে যাওয়ার মতো নানাবিধ সমস্যায় বাংলাদেশের কৃষি হুমকির মুখে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের জন্য যতটা না দায়ী, তার চেয়ে ফল ভোগ করছে বেশি। এর প্রভাবে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হচ্ছে।

দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলন ‘কপ-২৮’ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ নিজের অবস্থান ঘোষণা করেছে। সেখানে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, বিশ্বের তাপমাত্রা এ শতাব্দীর মধ্যে যাতে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে, সেই লক্ষ্যে শিল্পোন্নত দেশগুলোয় কার্বন নিঃসরণ কমানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। ধনী দেশগুলোর কারণে বিশ্বের দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, ধনী দেশগুলো এ ক্ষতির দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। ২০২১ সালে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অতিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সেখানে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম এবং ভালনারেবল-২০ গ্রুপ অব মিনিস্টারস অব ফাইন্যান্সের সভাপতি হিসাবে বাংলাদেশের ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা দশক-২০৩০’-এর কার্যক্রম শুরুর বিষয়টিও অবগত করেছেন। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জলবায়ুকে বিবেচনায় নিয়ে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০২২-২০৪১’-এর খসড়া ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নতুন নতুন বেসরকারি অর্থায়নের মাধ্যমে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণকে সহজ করবে। এছাড়াও এটি বাংলাদেশের ‘৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২৫)’, ‘ভিশন-২০৪১’ এবং জলবায়ু পরিবর্তন কৌশলপত্র ও কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয়কৃত ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ অর্জনের বিষয়ে বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করবে। জলবায়ুর কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হবে, সেগুলো যেন সরকারের বিশেষ নজর ও অগ্রাধিকার পায়, সেটা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

কৃষিতে জলবায়ুর প্রভাব আজ আর তেমন অজানা কথা নয়। জলবায়ুর এ বিরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন অভিযোজন কলাকৌশল রপ্ত করতে হবে, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কৃষিকে মুক্ত রাখা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ব্যাপক হারে কমাতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষিকে টেকসই অবস্থানে টিকিয়ে রাখতে হলে সহনশীল জাত উন্নয়নে জোর দিতে হবে। সেই সঙ্গে সব কৃষি উপকরণ যেন কৃষকের হাতের নাগালে পৌঁছায় এবং সর্বশেষ কৃষিপ্রযুক্তি যেন তাদের কাছে সহজলভ্য হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অন্যথায় সামগ্রিক জনজীবনে, বিশেষ করে বাংলাদেশের কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।

ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম : প্রফেসর, কৃষিব্যবসা ও বিপণন বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন : সহকারী গবেষক, কৃষিব্যবসা ও বিপণন বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

কৃষি জলবায়ু পরিবর্তন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম