Logo
Logo
×

বাতায়ন

বাঙালি ও বাংলা নববর্ষ

Icon

আতাহার খান

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাঙালি ও বাংলা নববর্ষ

পহেলা বৈশাখে আমরা পুরো বাঙালি বনে যাই। ঘটা করে মঙ্গল শোভাযাত্রা (এবার আনন্দ শোভাযাত্রা) করি, সকালে রমনার বটমূলে সংগীতায়োজন এবং দিনব্যাপী মেলা, বিশেষ বিশেষ জায়গায় সেমিনার-সিম্পোজিয়াম-কত অনুষ্ঠানই না করি! এ নিয়ে পুরো দিন চলে রীতিমতো হইহুল্লোড়। একদিনের জন্য এই যে বাঙালিয়ানা প্রকাশের ব্যস্ততা, তা দিয়ে আর যাই হোক, বাঙালি হওয়া যায় না।

বাংলায় কথা বলা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা, উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষার প্রচলন-এসব সন্দেহ নেই, আমাদের বড় অর্জন। কিন্তু জাতিসত্তার পরিচয়ের ভেতর দিয়ে আমরা আজও নিজেদের বাঙালি প্রমাণ করতে পারিনি। তাই পহেলা বৈশাখের দিনটি পার হয়ে গেলে আমরা বেমালুম ভুলে যাই আমাদের পরিচয়, শেকড় সন্ধানের কথা। আসলে বাঙালিয়ানা হলো মানসিকতার বিষয়, জীবনযাত্রার বিষয়। সেখানে আমরা মোটেও আন্তরিক নই। দুর্ভাগ্যই বলতে হয়, আমাদের ভাষাকে ঘিরে জাতিরাষ্ট্র গড়ে ওঠার ঐতিহাসিক ঘটনাও আমাদের বাঙালি করে রাখতে পারেনি। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন আমাদের আত্মপরিচয়কে সামনে নিয়ে এসে অসাম্প্রদায়িক সড়কের ওপর প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং পর্যায়ক্রমে শুরুও হয়েছিল সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞানের সন্ধান। সেই অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে সরে আসার কারণে আমাদের আত্মপরিচয়ের জিজ্ঞাসাও হয়ে পড়ে অস্পষ্ট। তাই একদিনের জন্য ঘটা করে আমরা বাঙালি সাজি, আর বাকি ৩৬৪ দিন থাকি তার উলটো সাজে। জাতিসত্তার প্রশ্নে এ প্রবণতা নিয়ে গর্ব করা যায় না! সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো চেষ্টা কি আমাদের আসলেই নেই?

২.

পহেলা বৈশাখে নতুন চেহারায় জেগে ওঠে প্রকৃতি। দিনটি পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের কাছে গতানুগতিক মনে হলেও এ জনপদে বসবাসকারী মানুষের কাছে সম্পূর্ণ আলাদা আবেগ-অনুভূতি-উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠা একটি দিন। শুধু সমতল ভূমির বাংলাভাষীরাই নয়, পহেলা বৈশাখ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছেও একটি বড় উৎসবের দিন। বৈসাবি উৎসব আদিবাসীদের অন্যতম প্রধান আনন্দোৎসবের দিন।

কবে থেকে, কোন সুপ্রভাতে প্রথম শুরু হয় পহেলা বৈশাখ উৎসব-এ জিজ্ঞাসা দেখা দিতেই পারে! তার উত্তর হলো, এ উৎসবের ইতিহাস বেশি দিন আগের নয়। চর্যাপদে তো বটেই, মধ্যযুগের কবিতায় কোথাও নেই পহেলা বৈশাখ উৎসবের কোনো উল্লেখ। সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের ছোঁয়া পেতে একে বহুদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। বছরের শেষদিন চৈত্রসংক্রান্তি-এ উৎসবের রেশ পরের দিন নতুন বছরের প্রথম দিন, পহেলা বৈশাখে এসে নবরূপে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। দিনটি উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রচলনও শুরু হয় ইংরেজ আমলে, জমিদার-ভূস্বামীদের পৃষ্ঠপোষকতায়। সেখানে থাকত কবিয়ালদের গান, মেলা, নানা উৎসব আয়োজন।

হ্যাঁ, প্রশ্ন উঠতে পারে, পকেটের পয়সা খরচ করে জমিদার আর ভূস্বামীরা কেন এ অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন? নিশ্চয়ই পহেলা বৈশাখের সাংস্কৃতিক উৎসবকে মহিমান্বিত করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না-তাদের লক্ষ্য ছিল খাজনা আদায়। এ উৎসবের জন্য দিনটা বেছে নেওয়ার কারণ ঘরে ঘরে ততক্ষণে নতুন ফসল উঠতে শুরু করে। পহেলা বৈশাখ উৎসবের শুরুটা ছিল এভাবেই। এ সম্পর্কে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ‘নববর্ষ উৎসব’ শিরোনামের এক রচনায় উল্লেখ করেছেন, ‘জমিদারিপ্রথা যতদিন চালু ছিল, ততদিন বাংলা নববর্ষ পুণ্যাহ হিসাবে পালিত হতো। জমিদাররা প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করত পহেলা বৈশাখ থেকে।’

তবে পহেলা বৈশাখ উৎসব উদযাপন প্রথম কীভাবে পালিত হয়, এ নিয়ে আরও পরিষ্কার কথা বলেছেন গবেষক, প্রাবন্ধিক শামসুজ্জামান খান। তিনি তার এক রচনায় বলার চেষ্টা করেছেন, পহেলা বৈশাখের উৎসব প্রথম শুরু হয় ঠাকুর পরিবারের উদ্যোগে এবং সেখান থেকেই পর্যায়ক্রমে এ উৎসব ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, হালখাতা আর নববর্ষ দুটিই আলাদা উৎসব এবং বহু আগে থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবেই হালখাতা উৎসব পালন করা হতো। হালখাতার প্রচলনের ইতিহাস বেশ পুরোনো। এর প্রধান পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন জমিদার ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু পহেলা বৈশাখ উৎসব পালন সম্পর্কে কিছু অদ্ভুত তথ্যও রয়েছে। আমরা জানি, ইংরেজ আমলে ঘটা করে এ উপমহাদেশে পালিত হতো খ্রিষ্টীয় নববর্ষ। তাদের সেই উৎসব পালন দেখে বাঙালিদের মধ্যে ধীরে ধীরে জেগে ওঠে স্বদেশিবোধ এবং জাতিরাষ্ট্র পরিচয়ের অভিজ্ঞান খুঁজে বের করার প্রবণতা। একটা সময়ে এসে শিক্ষিত বাঙালিরাও শুরু করে পহেলা বৈশাখের দিন নববর্ষ উৎসব পালন।

এক কথায় স্বীকার করতেই হবে, জমিদার আর ভূস্বামীদের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত পহেলা বৈশাখ উৎসব ছিল হিন্দুধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। গ্রাম ও শহর এলাকার হিন্দু ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো ঘিরে সাধারণত অনুষ্ঠিত হতো নববর্ষ উৎসব। চলত মিষ্টি খাওয়ার ধুম। সেখানে বৈশাখজুড়েই বসত মেলা। জমিদারিপ্রথা উচ্ছেদের পর নানা পথ মাড়িয়ে ধর্মীয় প্রভাব থেকে পহেলা বৈশাখের মুক্তি ঘটে তখনই, যখন বাংলার সর্বস্তরের মানুষের ঘরে ঘরে শুরু হয় এ উৎসবের আয়োজন। এর পরই পহেলা বৈশাখ অসাম্প্রদায়িক সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়।

ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা বৈশাখ পালনের প্রথম খবর পাওয়া যায় প্রখ্যাত সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরীর এক লেখায়। তিনি লিখেছেন, ‘সেদিনের পহেলা বৈশাখে মাহবুব আলী ইনস্টিটিউটের মঞ্চটি আমার চোখের সামনে এখনো জ্বলজ্বল করে ভাসছে। মঞ্চে অন্যদের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ও অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী।’ উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৫১ সালে ঢাকায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল ‘লেখক-শিল্পী মজলিস’ নামে একটি সংগঠন। অনুষ্ঠানটির জন্য বিভিন্নজনের কাছ থেকে তোলা হয় চাঁদা।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ঢাকাকে কেন্দ্র করে যে মুসলিম বাঙালি মধ্যবিত্তের উদ্ভব ঘটে, সেখানে তাদের চিন্তা-চেতনায় এবং ভাবনায় পহেলা বৈশাখ নিয়ে কোনো আগ্রহই ছিল না। প্রকৃত অর্থে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকেই শুরু হয় সমাজের এ অংশের মধ্যে আত্মপরিচয় সম্পর্কে নতুন জিজ্ঞাসা। তারা পর্যায়ক্রমে শুরু করতে থাকেন সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞানের সন্ধান। ভেতরে ভেতরে তাদের মধ্যে তীব্র হয়ে ওঠে পরিত্যক্ত সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান পুনরুজ্জীবনের আকাঙ্ক্ষা। মনোজগতের এ আত্মপরিচয়ের জিজ্ঞাসা তীব্র হয়ে ওঠার কারণ সাংস্কৃতিক পরিচয়কে স্পষ্ট করা, নিজ জাতিসত্তাকে প্রতিষ্ঠা করা। এ চেতনা যখন ধীরে ধীরে চারদিক ছড়িয়ে পড়ছিল, ঠিক সে সময়ই ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে পহেলা বৈশাখ সরকারি ছুটি ঘোষণার ঘটনাটি বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সামনে নিয়ে আসার সুযোগ তৈরি করে। ধর্মীয় পরিচয়ের পাশাপাশি তখন এ সমতল ভূমির অগ্রসর মানুষের কাছে ভাষাগত প্রশ্নে ‘বাঙালি’ পরিচয়টিও হয়ে ওঠে পরিষ্কার। আরও স্পষ্ট করে বলি, সরকারি ছুটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ দিনটি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে তৈরি করে দেয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকশিত হওয়ার সুযোগ। ১৯৬১ সালের তদানীন্তন সেনাশাসক আইয়ুব খানের অঙ্গুলি নির্দেশে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে না দেওয়া এবং ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানি বেতারে রবীন্দ্রসংগীত প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ-এ দুটি ঘটনা মধ্যবিত্ত বাঙালি শিক্ষিত মুসলমান সম্প্রদায় কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি, বরং তারা তাদের স্বাধীন সাংস্কৃতিক পরিচয় খুঁজে বের করার ইচ্ছা প্রচণ্ডভাবে অনুভব করতে থাকে। আত্মপরিচয় অনুসন্ধানের এ বাসনা আরও স্পষ্ট রূপ নেয় বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকজুড়ে। পহেলা বৈশাখের উৎসবকে অর্থময় করার ক্ষেত্রে ছায়ানটের ভূমিকাও কোনো অংশেই কম নয়। তাদের উদ্যোগেই ১৯৬৭ সালে রমনা বটমূলে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় সংগীতায়োজন এবং পরবর্তীকালে এ সংগীতায়োজনকে ঘিরে রমনা পার্কে বৈশাখী মেলার আয়োজন সর্বস্তরে বাঙালির শেকড় সন্ধানের চেষ্টা মোটেও ব্যর্থ হয়নি। আমরা জোর গলায় বলতে পারি, স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের সর্বশেষ অর্জন হলো পহেলা বৈশাখকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় উৎসব মর্যাদায় অভিষিক্ত করা।

৩.

ইতিহাসবেত্তারা মোগল সম্রাট আকবরের পুণ্যাহের ধারাবাহিকতার সঙ্গে নববর্ষের ঐতিহ্যের মিল খুঁজে পান। হ্যাঁ, সম্রাট আকবরের নির্দেশ অনুযায়ী, আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী ‘তারিখ-ই-ইলাহি’ চালু করেন ৯৬৩ হিজরি অর্থাৎ ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে। বর্ষপঞ্জি সংস্কারের ক্ষেত্রে সম্রাট আকবর সত্যিই দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তার এ অব্দ হলো সৌর অব্দ-আর গণনার পদ্ধতিটিও ছিল সৌরভিত্তিক। ঋতুর সঙ্গে সংগতি রেখে অব্দ আবর্তিত হয় এবং এর প্রচলন শুরু হয় সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের দিন থেকে।

বঙ্গাব্দের শুরু নিয়ে কোনো কোনো পণ্ডিত অবশ্য ভিন্নমত পোষণ করেন। তাদের মতে, রাজা শশাঙ্ক বঙ্গাব্দের প্রবর্তক। এ মতের সমর্থকরা মনে করেন, ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দের কোনো এক সময়ে চালু হয়েছিল বঙ্গাব্দ। পহেলা বৈশাখ উৎসবটি ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দুধর্মীয় প্রভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে একইদিনে উৎসবটি পালিত হয়।

নববর্ষ নিয়ে আরও একটি মত হলো, মধ্যযুগে হোসেনশাহীর আমলে প্রচলন হয় বঙ্গাব্দের। তিনি বাংলা ভাষা উন্নয়নে সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। এর অবশ্য ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে। কিন্তু বঙ্গাব্দ প্রচলনে তার সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায়নি। তাই উল্লিখিত ওই দুই মতই ঐতিহাসিক প্রমাণ, যুক্তি, তথ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের অভাবে হালে পানি পায়নি। ভারতের বিশিষ্ট জ্যোতির্পদার্থবিদ ড. মেঘনাদ সাহা মনে করেন, মোগল সম্রাট আকবরের সময় থেকেই শুরু হয় বঙ্গাব্দ।

বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম সংস্কার হয় ১৯৫২ সালে ভারতের বিশিষ্ট জ্যোতির্পদার্থবিদ ড. মেঘনাদ সাহার হাত দিয়ে। ১৯৫৭ সালে ভারত সরকার তার এ সংস্কারের সুপারিশ গ্রহণ করেন। ড. সাহার সেই সুপারিশকেই সামনে রেখে ১৯৬২-৬৩ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এরপর অনেক পথঘাট পার হয়ে ১৯৮৭ সালে এসে এরশাদ সরকারি সব কাজকর্মে ইংরেজি সাল-তারিখের পাশাপাশি বাংলা তারিখ লেখার নির্দেশ দেন এবং শহীদুল্লাহ কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করে বাংলা ক্যালেন্ডার তৈরির নির্দেশও জারি করেন। কিন্তু তখন লিপইয়ার নিয়ে দেখা দেয় সমস্যা। শহীদুল্লাহ কমিটির সেই লিপইয়ার সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে আবার নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে গঠন করা হয় বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বর্ষপঞ্জি সংস্কার কমিটি। এ কমিটি ১৪ এপ্রিলকে বাংলা বর্ষের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ বৈশাখ হিসাবে ঠিক করে। এতে অবশ্য বাংলা ও ইংরেজি সালের তারিখ নিয়ে আর কোনো সমস্যা থাকল না সত্য। কিন্তু তারপরও সমস্যা পুরো দূর করা যায়নি! বাংলাদেশের বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আগরতলায় পহেলা বৈশাখ পালিত হয় ১৫ এপ্রিল। পহেলা বৈশাখ পালন নিয়ে একদিন আগে-পিছের সমস্যাটি রয়ে গেছে বহির্বিশ্বেও।

তারপরও প্রশ্ন ঠিকই থেকে যায়-আমরা কি সত্যই পেরেছি গ্রেগরি প্রবর্তিত বর্ষপঞ্জির আধিপত্য প্রতিরোধ করতে? না, পারিনি। আমাদের প্রতিদিন তো বটেই, জাতীয় জীবনেও এ পঞ্জিকার অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ়। সরকারি এবং শিক্ষাক্ষেত্রেও দিনগণনা শুরু হয় গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী। এসব দেখে একরাশ খেদ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বাঙালির আরও একটি নববর্ষ এলো সদ্য। পালে-পার্বণে বাঙালি নিজের ট্র্যাডিশন দয়া করে স্মরণ করে আজও। হালখাতা হয়, বর্ষবরণ হয়, রবীন্দ্রগানে বৈশাখের আগমন সূচিত হয়। বাঙালির হঠাৎ মনে পড়ে, সে বাঙালি। ঘটা করে স্মরণ করে। তারপর ভুলে যেতে সময় লাগে না।’ আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাঙালি বনে যাওয়া যায় না। এজন্য দরকার হয় জীবনযাত্রা ও মানসিকতার ভেতর দিয়ে জাতিসত্তার পরিচয় স্পষ্ট করা। কিন্তু আমরা কি তা করি?

আতাহার খান : কবি, সিনিয়র সাংবাদিক

বাংলা নববর্ষ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম