Logo
Logo
×

বাতায়ন

হালফিল বয়ান

পাক-ভারত যুদ্ধের বিভীষিকা কে থামাবে?

Icon

ড. মাহফুজ পারভেজ

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শেষবার ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০২৫ সালের মে মাসে আবার দুই দেশ মুখোমুখি হয়েছে। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম পাকিস্তানে স্থল, নৌ ও আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ভারত। পক্ষান্তরে নতুন করে ভারতে হামলা চালাতে সেনাবাহিনীকে অনুমতি দিয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি। ফলে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পাক-ভারত যুদ্ধের বিভীষিকা কে থামাবে? যুদ্ধ বা যুদ্ধাবস্থার কারণে উভয় দেশের নিরীহ সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি কে ঠেকাবে? উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে?

নিশ্চয় যুদ্ধবাজরা এসব জরুরি মানবিক দায়িত্ব পালন করবে না। তাদের কাজ হিংসা ছড়ানো ও ধ্বংস করা-নির্মাণ ও স্থিতি নয়। এক্ষেত্রে যুদ্ধবিরোধী শান্তিকামী মানুষের একটি জোরালো প্রতিবাদ জরুরি। তা না হলে যুদ্ধবাজদের পাল্লায় পড়ে সবারই বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে যারা শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন দেখেন, যুদ্ধের বিরুদ্ধে তাদের সরব হতেই হবে, নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকার অবকাশ নেই।

ঐতিহাসিকভাবে উপমহাদেশের বিবদমান দুদেশের জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উসকে দিতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতারা প্রায়ই এমন যুদ্ধের আবহ তৈরি করেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের। বিশেষত, ভোটের আগে জনপ্রিয়তা বাড়াতে এবং ক্ষমতা সংহত করতে এক ধরনের অন্ধ জাতীয়তাবাদী উন্মাদনার দরকার হয়। মানুষকে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় আবেগে উদ্বেলিত করে বাধ্য ও বশীভূত রাখতে উত্তেজনা বড়ই কার্যকর দাওয়াই। এক্ষেত্রে ভারতে পাকিস্তানের বিরোধিতা এবং পাকিস্তানে ভারতের বিরোধিতা একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি, যা বারবার প্রয়োগ করা হয়েছে ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে। দারিদ্র্য বিমোচন, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা প্রসার বা নতুন নতুন চাকরি সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আড়াল করতে তৈরি করা হয় এমন জাতীয়তাবাদী উন্মত্ততার পটভূমিতে নির্মিত যুদ্ধের বাতাবরণ। বাস্তবে ভারত ও পাকিস্তান সেটাই করছে। ফলে সংঘাত ও যুদ্ধাবস্থা জিইয়ে রয়েছে উপমহাদেশে।

নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, বর্তমানে চলমান ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত যুক্তরাষ্ট্র-চীনের লড়াইয়ে পরিণত হবে। কারণ পশ্চিমারা ও ইসরাইল সামরিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে ভারতকে। আর চীন ও তুরস্ক দিচ্ছে পাকিস্তানকে। এ সামরিক সাহায্য দিন দিন বাড়ছে। এসব লক্ষণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিকভাবে কে কার পাশে রয়েছে। এরই ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে মেরুকরণ ও ক্ষমতার ভারসাম্য। যার প্রভাব পড়ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ও আঞ্চলিক পরিসরে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে আঞ্চলিক সহযোগিতা, অর্থনৈতিক যোগাযোগ, শান্তি ও স্থিতিশীলতা এ দুই দেশের বৈরী সম্পর্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন, বিমান চলাচল ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উভয় দেশেই সামাজিক পরিসরের একদিকে বিরাজ করছে উত্তেজনা, আরেক দিকে আতঙ্ক। সুতরাং যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধাবস্থা আরও বেশি দীর্ঘায়িত হলে শুধু দুটি পক্ষই নয়, গোটা অঞ্চলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এ অঞ্চলের অপরাপর দেশগুলোও নানা সমস্যার সম্মুখীন হবে।

সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সংঘাতে লিপ্ত উভয়পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মনে করে, কূটনৈতিক দিক থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা উচিত। তাছাড়া ভারত ও পাকিস্তান সংঘাতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য সীমান্ত জেলাগুলোর পুলিশ সুপারদের সতর্ক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক। তথাপি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যেই কুড়িগ্রাম ও খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে শতাধিক মানুষকে পুশইনের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ বলেছে, ভারত যেভাবে লোকজনকে ঠেলে দিচ্ছে, তা ঠিক নয়। সীমান্ত পরিস্থিতি কত ভয়াবহ তার একটি বিবরণ রয়েছে যুগান্তরে ৮ মে (২০২৫) প্রকাশিত ইকবাল হাসান ফরিদের বিশেষ প্রতিবেদনে, ‘সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে হত্যাকাণ্ড থামছেই না। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যার চিত্র যেন এক অমীমাংসিত প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একের পর এক বৈঠক, আলোচনা, প্রতিশ্রুতি কিছুতেই কাজে আসছে না। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে না বলে এলেও তাদের কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই। বরং সীমান্তে ৯৫ শতাংশ মৃত্যুই হচ্ছে বিএসএফের গুলিতে। ১০ বছরে সীমান্তে নিহত ৩১৩ বাংলাদেশি, আহত ৩৩০ জন। যুদ্ধের আবহে সীমান্ত হত্যা ও লোকজনকে ঠেলে পাঠানোর ঘটনা আরও বাড়তে পারে। এতে বাংলাদেশ ও অন্য নিরপেক্ষ দেশও সমস্যার সম্মুখীন হবে।

ফলে ভারত ও পাকিস্তানের শান্তিকামী সাধারণ মানুষ এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোর নিরাপত্তাগত স্বার্থও বিঘ্নিত হচ্ছে যুদ্ধবাজদের উন্মত্ততার কারণে। উভয় দেশেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাধারণ মানুষ মারা গেছেন সংঘাতের প্রাথমিক ধাক্কায়। মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং মানবিক আইনের আওতায় নিজেদের দায়িত্ব পালন করে এবং নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি বলেছে, উভয় দেশকেই সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয় এবং প্রাণহানি ও কষ্ট যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা যায়। সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটি আরও সতর্ক করে জানায়, যখন দুই দেশের বাহিনী সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে, তখন আরও বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারানোর মতো মর্মান্তিক ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে নিরাপত্তা কিংবা ন্যায়বিচার কোনোটিই অর্জিত হবে না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উভয় দেশকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ বেছে নিতে এবং সংঘর্ষে জড়িত সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।

এসব আবেদন সাধু উদ্যোগ হলেও বাস্তবতা ভিন্ন, ‘চোরে না শোনে ধর্মের কথা।’ যুদ্ধবাজরা শোনে না শান্তির কথা। যুদ্ধের নেপথ্যে যখন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে আমজনতাকে উত্তেজিত করে ক্ষমতায় থাকার এবং অপকর্ম ঢেকে রাখার মতলব কাজ করে, তখন তা থামানো দুষ্কর। যুদ্ধের আগুনে অকাতরে মানুষ মারা গেলেও ক্ষমতাসীন যুদ্ধবাজরা থাকে নির্বিকার। অতীতের যুদ্ধ ও ধ্বংসের অভিজ্ঞতাও তাদের বিচলিত করে না।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ২০ বছর স্থায়ী ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিল ২০ শতকের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘ সামরিক সংঘর্ষ। এ যুদ্ধে প্রায় ৩.৮ মিলিয়ন মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং এটি দক্ষিণ ভিয়েতনামের মার্কিন সমর্থিত সরকারের পরাজয় এবং উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট বাহিনীর বিজয়ের মাধ্যমে শেষ হয়। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবাই যুদ্ধের মহাবিভীষিকা, বিশেষত পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ দেখে মনে করেছিলেন, বিশ্ব বোধহয় আর কোনো যুদ্ধে জড়াবে না, তথাপি ভিয়েতনাম যুদ্ধ মানুষের সেই আশা বিনষ্ট করে দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, ভিয়েতনাম যুদ্ধের ৫০ বছর পরও বিশ্বযুদ্ধ ও সংঘাতে জর্জরিত। খোদ জাতিসংঘের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, শুধু ২০২৩ সালেই ১৭০টির বেশি সশস্ত্র সংঘাত ঘটেছে। সেই বছরের শেষে পৃথিবীর ১২ কোটি মানুষকে জোর করে উৎখাত করা হয়েছে তাদের বাসভূমি থেকে যুদ্ধ কিংবা সংঘাতের মাধ্যমে। সেসব সংঘাতে সামগ্রিকভাবে প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপরও বিশাল কুপ্রভাব পড়ছে।

সভ্যতার ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বিনাশী হিসাবে চিহ্নিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তাতে সেনা ও সাধারণ নাগরিক মিলিয়ে প্রায় ৮ কোটি ৫০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল এবং সেই যুদ্ধ থেকেই পরমাণু বিস্ফোরক তথা বোমা এবং নানাবিধ রাসায়নিকের যে ব্যবহার শুরু হয়, তা পরবর্তী বছরগুলোতে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। এখন যুদ্ধে ড্রোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদির ব্যবহার বাড়ছে। এগুলো অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষের বিরুদ্ধে। মানুষের পাশাপাশি বিশ্ব পরিবেশের ওপর এক অনিবার্য ও চিরস্থায়ী কুপ্রভাব ফেলেছে যুদ্ধ ও সংঘাত।

এত কুফলের পরও যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ উপমহাদেশসহ বিশ্বে একাধিক যুদ্ধ ও সংঘাত চলছে এবং বহু স্থানেই যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। বাস্তবতা হলো, যুদ্ধ মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক অবিচ্ছিন্ন, কিন্তু ভয়াবহ অনুষঙ্গ। যুগে যুগে প্রযুক্তি যত অগ্রসর হয়েছে, যুদ্ধও তত ভয়ংকর ও ব্যাপক হয়ে উঠেছে। একদিকে চলেছে আধুনিকতা, উন্নয়ন ও বিজ্ঞানের জয়গান, অন্যদিকে ধ্বংসের নিনাদ। পৃথিবীর বহু প্রান্তে মানুষ বোমা ও অস্ত্রের আঘাতে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে কিংবা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। একই সঙ্গে নির্মূল হচ্ছে পরিবেশ, প্রকৃতি এবং জনজীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। যে লেবানন, ফিলিস্তিন ছিল ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী চিরবসন্তের চিরসবুজ জনপদ, যেখানে গভীর নীল আকাশের তলে নির্মল বাতাসে খেলা করত ওলিভ ও সিডর গাছের ডালপালা, সেখানে এখন ধ্বংসের মাতম। সভ্যতার প্রাচীন কেন্দ্র ইরাক, সিরিয়ায় মৃত্যুর হাতছানি। এমনকি আমাদের দেশের পর্যটন আকর্ষণ কক্সবাজারের প্রান্তিক পাহাড়ি অঞ্চলগুলো মিয়ানমারের সংঘাতের কারণে সৃষ্ট শরণার্থী সমস্যায় জর্জরিত। পাক-ভারত যুদ্ধের ডঙ্কায় ভূস্বর্গ কাশ্মীরসহ অন্য অঞ্চলে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বর্তমানে গাজা, ইউক্রেন বা অন্যান্য যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়, কেবল মানুষ নয়, প্রকৃতিও যুদ্ধের ত্রাসে রক্তাক্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গাজার মতো অঞ্চলে মাত্র তিন মাসের মধ্যে শিশুদের মধ্যে মারাত্মক শ্বাসজনিত সংক্রমণ ও ডায়রিয়ার মতো রোগ ছড়িয়েছে, যার মূল কারণ যুদ্ধসৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয়। বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা ১৯১৪ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১৯৩টি কেস স্টাডি বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, যুদ্ধের ফলে মানুষের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বনভূমি (৩৪ শতাংশ) এবং ভূমি (২৩ শতাংশ)।

যুদ্ধ কেবল তাৎক্ষণিক হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাই ঘটায় না-যুদ্ধের কারণে ধ্বংস হয় জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা, একই সঙ্গে দেখা দেয় বিশুদ্ধ পানীয় জলের মারাত্মক সংকট। এছাড়া আরও দেখা দেয় খাদ্য সংকট, বায়ুদূষণসহ নানামুখী সংকট। পরমাণু অস্ত্র, রাসায়নিক বোমা কিংবা উচ্চমাত্রার বিস্ফোরকদ্রব্য-এসব কিছুর প্রভাবে জল, মাটি, বাতাসের মধ্যে এমন সব বিষাক্ত উপাদান ছড়িয়ে পড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বিপন্ন করে। বর্তমানে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ঝুঁকিকে আরও বাড়াচ্ছে যুদ্ধ ও সংঘাত। যুদ্ধ ও সংঘাতজনিত দূষণ ও উষ্ণতা বৈশ্বিক জলবায়ু বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ রূপে চিহ্নিত হচ্ছে। আধুনিক অস্ত্র ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ দূষণ নিঃসরণ হয়, তা পৃথিবীর উষ্ণায়নে সরাসরি অবদান রাখছে। যুদ্ধের কারণে অকাতরে বন ধ্বংস হচ্ছে, সবুজ হ্রাস পাচ্ছে, যা আবার কার্বন শোষণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এ প্রক্রিয়াই আমাদের বর্তমানকে কলুষিত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাচ্ছে এক বিপজ্জনক ও অনিশ্চিত পৃথিবী।

এ কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না, মানবতা থেকে বিচ্যুতি যুদ্ধোন্মাদনার প্রধান কারণ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আধুনিক তত্ত্বগুলো আমাদের উন্মাদনা থেকে বিরত রাখতে পারছে না কেন? বর্তমানে ‘আধুনিক ও উন্নত’ সভ্যতার নামে পৃথিবী কি সত্যিই এগোচ্ছে, নাকি অন্ধকারতম কোনো গহ্বরে প্রবেশ করছে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজকের ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা গাজায় গণহত্যা, প্রতিটি যুদ্ধেই মানবতাহীনতা প্রকটতর হয়ে সামনে এসেছে এবং ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি প্রকৃতি ও অবকাঠামো ধ্বংসের নৃশংসতম চিত্র দেখা গিয়েছে। যুদ্ধ এখন আর শুধু জয় বা পরাজয়ের বিষয়ই নয়, মানুষ ও প্রকৃতি ধ্বংসের বিষয়ও। যুদ্ধ ও সংঘাত আজকের পৃথিবী ও মানবতাকে কোন অন্ধকারে নিয়ে যাচ্ছে? এ অন্ধকারের দিকে এগিয়ে চলা সভ্যতাকে কে থামাবে? কে শোনাবে শান্তি ও সদিচ্ছার বাণী?

এর উত্তর আমরা কেউই জানি না। তারপরও নতুন নতুন যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুতি করছি আমরা। বাড়ির পাশে দেখছি, দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাত। এ অবস্থায় আমরা প্রত্যাশা করি, যুদ্ধ ও সংঘাত বন্ধ হোক। ক্ষমতালোভী যুদ্ধবাজরা নিবৃত্ত হোক। মানুষ ও প্রকৃতি বেঁচে থাকুক। যুদ্ধবাজদের হিংসা, ঘৃণা, উন্মাদনার বিরুদ্ধে মানবতা, ভালোবাসা, শান্তি ও সম্প্রীতির জয় হোক।

প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ : চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম