বাইফোকাল লেন্স
বর্বরতার আইনি বৈধতাও দিচ্ছে ভারত!
একেএম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর অমানবিক নির্যাতন এখন যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিজেপি সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়েই এসব জঘন্য ঘটনা ঘটে চলেছে। নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালেই মুসলিম নিধনের যে মিশন শুরু করেছিলেন; ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও সেই ধারা তিনি বজায় রেখেছেন। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, মোদি সরকার খুব পরিকল্পিতভাবেই সে দেশের মানুষের মনে মুসলিমবিদ্বেষী বীজ বপন করতে সক্ষম হয়েছেন। পরিস্থিতি এমন হয়েছে, একের পর এক মানবতাবিরোধী অপরাধ করেও ভারতকে কারও কাছেই জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। রাষ্ট্রযন্ত্রকে পূর্ণ ব্যবহার করেই এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সে দেশের আইন-আদালতও এসব ঘটনায় সহায়কের ভূমিকা পালন করছে। শুধু সংখ্যালঘু মুসলমান নয়, একই জ্ঞাতিগোষ্ঠী, একই ধর্মবিশ্বাসী নিম্নবর্ণ হিন্দুদের সঙ্গেও যে আচরণ করা হচ্ছে, তাতে ভারতের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার লেবাস খসে পড়েছে। যে দেশে একই ধর্মে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মন্দিরে প্রবেশ করা নিষেধ, সে দেশে অন্য ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের প্রতি হিন্দুদের কতটুকু সহানুভূতি থাকতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। ২০১৪ সালে মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতে যে মুসলিমবিরোধী ধর্মীয় উন্মাদনা শুরু হয়েছে, তা যে ধীরে ধীরে সমাজকে গ্রাস করেছে, ভারতব্যাপী মুসলিম নিধনের ঘটনাবলীই তার প্রমাণ বহন করে। বর্তমানে ভারতজুড়ে মুসলমানদের প্রতি অমানবিক অত্যাচার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২৪ মে গাড়িতে গরুর মাংস বহন করা হচ্ছে, এ সন্দেহে ভারতের উত্তরপ্রদেশের আলিগড় জেলায় চারজন মুসলিম যুবককে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করেছে সেখানকার হিন্দুজঙ্গি গোষ্ঠীর কিছু সদস্য। ওই যুবকদের ওপর অকথ্য নির্যাতনের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মুসলিম যুবকদের জামা-কাপড় খুলে প্রায় নগ্ন করে পেটানো হচ্ছে। মারধরের সময় হিন্দুজঙ্গিরা লোহার রড, কাটারির মতো অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছিল। মুসলিম এ যুবকরা আলিগড় শহরের ‘আল আম্মার ফ্রোজেন ফুডস মিট ফ্যাক্টরি’ থেকে মহিষের মাংস ক্রয় করে স্থানীয় বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে যখন হরদুয়াগঞ্জ পুলিশ স্টেশনের খুব কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন হিন্দুজঙ্গি গোষ্ঠী গরুর মাংস আছে, এ সন্দেহে গাড়ি থামায় এবং গাড়িতে থাকা চার যুবকের মুসলিম ধর্মপরিচয় জানামাত্র গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে বিবস্ত্র করে এমন নৃশংসভাবে মারধর করে যে, রাস্তা রক্তে ভিজে যায়। পরে হিন্দুজঙ্গিরা গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। রক্তাক্ত আহত যুবকদের হাসপাতালে নিয়ে যেতেও তারা বাধা দেয়।
অবর্ণনীয় এ নির্যাতনের সময় মুসলিম যুবকদের উদ্ধারে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন থেকে কোনো পুলিশ সদস্য এগিয়ে আসেনি। মারধরের পর পুলিশ সেখানে হাজির হয়ে আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। অথচ আক্রমণকারীদের হাতের কাছে পেয়েও তারা কাউকে গ্রেফতার করেনি। অপরদিকে দেখা গেছে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিকভাবে নিন্দার কোনো ঝড়ও উঠেনি। অর্থাৎ এ হিন্দুজঙ্গি গোষ্ঠীর প্ররোচনায় পা দেওয়া উন্মত্ত মানুষ ও পুলিশ প্রশাসন সবাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে একই কাতারে দাঁড়িয়ে পড়েছে। আলিগড়ের এ ঘটনা ধর্মান্ধতায় উন্মত্ত একদল মানুষের পশুসুলভ নিষ্ঠুরতাকে সার্বিক বৈধতা দেওয়ার প্রবণতাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে গরুর মাংস বহন বা বিক্রি নিষিদ্ধ। অথচ আলিগড়ের যে ফ্যাক্টরি থেকে মাংস কিনে মুসলিম যুবকরা ফিরছিলেন, সেটি মহিষের মাংস বিক্রি করার জন্যই সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত। গরুর মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও উত্তরপ্রদেশে মহিষের মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা নেই। ঘটনার পর ফরেনসিক ল্যাব টেস্টেও জানা যায়, গাড়িতে বহনকৃত মাংস গরুর মাংস ছিল না।
২০২৩ সালে ভারতের হরিয়ানায় একই ধরনের ঘটনায় দুজন মুসলিম যুবককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। জুনায়েদ ও নাসির নামক রাজস্থানের দুই মুসলিম যুবক বেআইনিভাবে গরু পাচার করছিল অভিযোগে সে বছর ফেব্রুয়ারিতে হরিয়ানার ভিওয়ানি নামক স্থানে এ দুজন যুবককে পিক্যাপ ভ্যান গাড়ির ভেতর রেখেই জীবন্ত জ্বালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। অথচ পরবর্তীকালে পুলিশি তদন্তে জানা যায়, হত্যার শিকার যুবকদের গাড়িতে গবাদি পশু বহন করা হচ্ছিল এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারও আগে ২০১৫ সালে, গরুর মাংস রাখার গুজব ছড়িয়ে উত্তরপ্রদেশেরই দাদরিতে মোহাম্মদ আখলাক নামের আরেক মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। মোদি জমানায় সেটাই ছিল গরুহত্যা বন্ধের নামে প্রথম মানবহত্যা। তারপরের বছরগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে গরুর মাংসের নামে হিংসাত্মক নৃশংসতা। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোয় বা যেসব স্থানে বজরঙ্গ দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠন শক্তিশালী, সেখানে এ ধরনের হামলা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আখলাক হত্যার ঘটনায় সে দেশের আদালতও পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করেছিল। আদালত এতই অন্ধ ছিল, মোহম্মদ আখলাকের পরিবারের বিরুদ্ধেই উলটো মামলা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। নিহত আখলাকের স্ত্রী ও মায়ের বিরুদ্ধেই পুলিশকে ফৌজদারি মামলা করতে বলা হয়েছিল। অথচ আখলাক হত্যার পর তার ঘরের ফ্রিজে রাখা টিফিন বক্সের যে মাংস মথুরার ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল, অনুসন্ধানে জানা যায়, তা গরুর মাংস ছিল না।
বর্তমান বিশ্বে ইসরাইলের পর ভারতকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামবিরোধী অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে। এ কারণেই ফিলিস্তিনির গাজায় বিশ্ব ইতিহাসের জঘন্যতম ধ্বংসলীলায় ভারতকে ইসরাইলের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, ইসরাইলের ঠান্ডামাথায় পরিচালিত হাজার হাজার গাজাবাসী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যখন বিশ্ববাসী স্তম্ভিত ও প্রতিবাদমুখর, তখন ভারতের এক শ্রেণির বর্বর মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। ভারতও ইসরাইলের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার নিজ ভূখণ্ডে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ওপর সংঘটিত জঘন্য ও নৃশংস বর্বরতাকে বৈধতা দিয়ে চলেছে। ইসরাইলের মতোই আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করার অভ্যাস গড়ে তুলছে। অতিসম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুটো ঘটনার অবতারণা করলে ভারত যে বর্বরতাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে, তা পরিষ্কার হবে।
একটি দেশ কতটা নিষ্ঠুর ও বর্বর হলে অসহায় মানুষকে জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে, ভারত তার অন্যতম উদাহরণ। গত ৯ মে ভারতের গুজরাট থেকে ৭৮ বাঙালি মুসলিমকে তুলে নিয়ে বিএসএফ ও ভারতীয় কোস্টগার্ড বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় এক জনমানবশূন্য চরে জোরপূর্বক ফেলে রেখে যায়। মান্দারবাড়িয়া সুন্দরবনের এমন একটি এলাকায় অবস্থিত, যেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও বনের হিংস্র প্রাণীদের অবাধ চলাফেরা করতে দেখা যায়। এ কারণে সুন্দরবনের ওই এলাকায় জনমানবের কোনো চিহ্ন নেই। এমন ভয়ংকর জায়গায় যে কোনো মুহূর্তে এসব অসহায় মানুষ জঙ্গলের হিংস্র জন্তুর আক্রমণের শিকার হতে পারত। বাংলাদেশের কোস্ট গার্ড কর্তৃক উদ্ধারের আগ পর্যন্ত অসহায় এ মানুষগুলো সেখানে খাদ্য ও সুপেয় পানির অভাবে দীর্ঘসময় অভুক্ত ছিলেন।
প্রায় একই সময়ে ভারত আরও একটি অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে। দিল্লি থেকে মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধসহ ৪০ রোহিঙ্গাকে ধরে নিয়ে হাত ও চোখ বেঁধে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরের আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ারে নিয়ে যায়। পরে ভারতীয় নৌ সেনারা আন্তর্জাতিক সব আইনকানুন লঙ্ঘন করে নৌবাহিনীর জাহাজে করে মিয়ানমারের দূরবর্তী এক জনমানবশূন্য দ্বীপ উপকূলের কাছে নিয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়। অভিযোগ আছে, ডুবে যাওয়ার ভয়ে যারা সাগরে ঝাঁপ দিতে অস্বীকার করেছিলেন, নৌসেনারা তাদের মারধর ও নির্যাতন করে জাহাজ থেকে জোরপূর্বক সাগরে নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় জাতিসংঘ বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার গোটা ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত অনভিপ্রেত’ বলে মন্তব্য করেছেন। মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, ‘ভারতের নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাগর ফেলে দেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত ভয়ানক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত উদাহরণ।
ভারত খুব সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ৮ মে গোটা বিশ্ব যখন ভারত-পাকিস্তান খণ্ডযুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত ও উদ্বিগ্ন, ঠিক সে মুহূর্তে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের নামে ডেকে নিয়ে দিল্লি থেকে আন্দামানে পাঠিয়ে সাগরে ফেলে দেয়। ভারত হয়তো ভেবেছিল, যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে এ জঘন্য অপরাধের ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এড়াতে সক্ষম হবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। ঘটনা প্রকাশ্যে চলে এলে খোদ ভারতীয় আদালতেই এ বিষয়ে একটি মামলা হয়। এ মামলা নিয়েও ভারতীয় উচ্চ আদালতের একচোখা দৃষ্টিভঙ্গি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দেশটির শীর্ষ আদালত, এ বর্বরতাকেও বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ১৮ মে ভারতের বর্ষীয়ান আইনজীবী কলিন গনজালভেজ সুপ্রিমকোর্টে এ বিষয়ে করা মামলার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আদালত ওই অভিযোগকে গুরুত্বই দিতে চাননি। অভিযোগের পক্ষে কী নথি রয়েছে, সে প্রশ্নও তোলে আদালত। ‘মনগড়া’ ‘কল্পনাপ্রসূত’, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমনির্ভর পিটিশন’বলে তিরস্কারও করেন। ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসীর ডিপোর্টেশনই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন ভারতের শীর্ষ আদালত। এমন রোহিঙ্গা শরণার্থী দিল্লিতে আরও রয়েছেন; তাদের ক্ষেত্রে একই ঘটনা আবারও যাতে না ঘটে, সেজন্য নির্দেশ চেয়েও আর্জি জানান আইনজীবী কলিন গনজালভেজ। এ পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সবাইকে অবাক করে দিয়ে মন্তব্য করেন,’ দেশ যখন কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন এমন কল্পনাপ্রসূত পিটিশন খুবই বিরক্তিকর। কোনো বিদেশি রিপোর্ট দেশের সার্বভৌমত্বের কাছে তুচ্ছ বলেও মন্তব্য করেন আদালত। তবে ভারতের শীর্ষ আদালত এ বর্বরতাকে বৈধতা দিতে চাইলেও জাতিসংঘ কিন্তু ইতোমধ্যেই ভারতের বিরুদ্ধে আনা গুরুতর অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দিয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত ভূখণ্ডে একের পর এক এমন যে অমানবিক ঘটনা ঘটছে, এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কিংবা রুখে দাঁড়ানোর মতো কোনো সচেতন ও বিবেকবান মানুষও কি নেই সে দেশে? অবশ্যই আছে। তবে তাদের সংখ্যা খুব কম। কম-বেশি যারাই ভারত সরকারের এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তারা প্রায়ই ভারত সরকার ও বিজেপির লেলিয়ে দেওয়া জঙ্গিদের রোষানলে পড়ছেন। পেহেলগাঁওয়ের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পর কাশ্মীরি ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে অনুমানের ভিত্তিতে ঘৃণা না ছড়ানোর অনুরোধ জানাতে গিয়ে নিহত নৌকর্মকর্তার বিধবা স্ত্রী হিমাংশী সে দেশের এক শ্রেণির বর্বর মানুষের হাতে চরম হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এমনকি ভারত সরকারের পক্ষে পাক-ভারত যুদ্ধের বিরতির ঘোষণা দিয়ে সে দেশের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্র ও তার পরিবারও অপদস্থ হয়েছেন। শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে ভারত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম শীর্ষ নেতার আক্রমণের শিকার হয়েছেন, যা বর্তমানে ভারতে চলমান অসহিষ্ণু আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ। এসব ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে ভারত সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়, সংখ্যালঘু নির্যাতনে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-কে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে আমেরিকার ফেডারেল সরকারের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাসংক্রান্ত কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)। অপরদিকে, ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও জনমত জরিপে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ঘৃণিত রাষ্ট্রের তালিকায় ভারতের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় উত্তেজনা, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড, মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন এবং সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বর আচরণের বৈধতা দেওয়ার সরকারের নীতিই আজ ভারতকে বিশ্বের অন্যতম ঘৃণিত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, কলাম লেখক
