Logo
Logo
×

বাতায়ন

সংকট উত্তরণের মত ও পথ

Icon

আবদুল লতিফ মাসুম

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সংকট উত্তরণের মত ও পথ

ড. ইউনূস, তারেক রহমান ও নাহিদ। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের এক বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মরহুম জিল্লুর আর খানের একটি গ্রন্থের উপশিরোনাম ‘ক্রাইসিস টু ক্রাইসিস’। বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য, অর্ধশতাব্দী পরও সংকট থেকে সংকটে অতিক্রান্ত হচ্ছে দেশ। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষজন চিন্তা করেছিল যে, যেহেতু স্বৈরাচার পালিয়েছে, আমাদের সংকটও পালাবে। প্রাথমিকভাবে দৃশ্যমান পরিস্থিতি ভালোই মনে হচ্ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে অভিষিক্ত হন। অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ শপথ গ্রহণ করে। প্রধান উপদেষ্টার সদিচ্ছা অনুযায়ী ছাত্রনেতাদেরও উপদেষ্টা মনোনীত করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে অভ্যুত্থানটি যেমন অচিন্তনীয় ছিল, তেমনি উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্রনেতাদের উপস্থিতি ছিল অভাবনীয়। রক্ষণশীল মানুষরা এটি সহজে গ্রহণ করেননি। বামরা হয়তো আরেকটু বাড়িয়ে ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ বলতে চাইবে। তবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী নিরঙ্কুশ জনসমর্থনে অগ্রগতির পথে যাচ্ছিল সরকার। যারা সরকারে অংশগ্রহণ করলেন তাদের অনভিজ্ঞতা থাকতে পারে, কিন্তু আন্তরিকতার কোনো অভাব ছিল না। সরকার ব্যবস্থাটি গুছিয়ে উঠতে না উঠতেই ক্ষমতায়ন ও পদায়নের সংবেদনশীল বিষয়টি নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে নির্ধারিত না হয়ে আবেগ, উত্তেজনা এবং তদবিরনির্ভর হয়ে ওঠে।

যেহেতু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে-বাহিনী প্রতি-বিপ্লব পর্যুদস্ত হয়, বিচারিক অভ্যুত্থান প্রতিহত হয় এবং আমলাতান্ত্রিক ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়, সেহেতু ছাত্রদের চাওয়া-পাওয়া ও নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব অবাধ ও অবারিত হয়। অভ্যুত্থানের আমেজ, ছাত্রশক্তির প্রদর্শনী এবং পরাজিত প্রশাসনের হীনম্মন্যতা সঠিক ও যথার্থ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হয়। সংস্কারের প্রাধান্য ও প্রাবাল্য গতানুগতিক তথা কায়েমি স্বার্থবাদীদের অস্থির ও ভীত করে তোলে। নির্বাচনের এজেন্ডাটি সুপ্ত থাকলেও ক্রমেই প্রকাশ্য হয়ে ওঠে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সংস্কার সাধনে কতটা সময় নেবেন-তা নিয়ে তার নিজের মন্তব্যই অনিশ্চয়তার আভাস দেয়। রাজনীতি মানেই ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা হওয়ায় রাজনীতিবিদরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নিয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠেন। আবার রাজনীতির ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বিতার শক্তি-সামর্র্থ্য যারা রাখেন, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দীর্ঘায়িতকরণের মধ্যে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা খোঁজেন। বিধ্বস্ত আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে নমনীয়তা তথা নিষিদ্ধ না করার আইনগত অবস্থান নিয়ে এগোতে থাকে একদল। অপরদিকে ক্ষমার মহত্ত্ব নিয়ে এগিয়ে যায় আশাবাদী বিরোধী দল। মাঝখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দল গঠন চলমান সমীকরণকে পালটে দেয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল নবগঠিত ‘ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি-এনসিপি’ সম্পর্কে দুধরনের মতামত প্রদান করে। আশাবাদীরা ২৪ অভ্যুত্থানের আলোকে দেশের সর্বত্র তাদের জয়জয়কার দেখেন। অপরদিকে বিরোধীরা রাজনৈতিক নাবালকত্বের নেতিবাচক দৃষ্টি প্রদান করেন। একজন রাজনীতিবিদ বললেন, ‘সরকার নামানো আর সরকার চালানো এক কথা নয়।’

দিন যতই এগোতে থাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জিম্মি করে সব দাবি আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রাম ঘনীভূত হতে থাকে। বিগত কয়েক মাসের দৃশ্য যদি অবলোকন করে থাকেন কেউ, তাহলে দেখবেন প্রেস ক্লাব, শাহবাগ অথবা বায়তুল মোকাররমে প্রতিদিন শত শত মিটিং-মিছিল, দাবি-দাওয়া নিয়ে নানাবিদ কর্মসূচি পালন করছে। সন্দেহ নেই যে, ১৭ বছরের ভীতির রাজত্ব থেকে নাগরিক সাধারণ মুক্ত হয়েছেন। সেক্ষেত্রে মত ও পথের স্বাধীনতার প্লাবন না হয় মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু ১৭ বছরের জমানো দাবি-দাওয়া আদায়ে এ সরকার যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়, তা বুঝবার ক্ষমতা কি এদের নেই? যারা এসব করছেন তারা একদল জ্ঞানপাপী। বুঝে-শুনে তারা ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থের সুবিধা আদায়ের অন্যায় সংগ্রামে ব্যস্ত। অপর দল না বুঝেই এসব করছে। কেউই সুবর্ণ সুযোগ হারাতে নারাজ। সরকারটি স্বল্প সময়ের-অন্তর্বর্তীকালীন। একটি বিধ্বস্ত বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তারা। সাধারণ জনগণের এ অসাধারণ আচরণে সরকার বিব্রত। এক সময় কোনো কোনো এলাকার সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে হলো। পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিলে গণতন্ত্রের দোহাই দেয় তারা। আর ব্যবস্থা না নিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। দুর্ভাগ্যজনক এই যে, এদের কেউ কেউ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনমুখী মিছিল ও আন্দোলন করে। এগুলো রাজনৈতিক সংস্কৃতির নিকৃষ্ট উদাহরণ। একজন ব্যক্তি সে যেই হোক, প্রধান উপদেষ্টা অথবা ভাইস চ্যান্সেলরের বাসভবন আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে না। আরও দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, রাজনৈতিকভাবে যাদের অগ্রসর মনে করা হয় তারা কীভাবে ‘মার্চ টু যমুনা’ ঘোষণা করতে পারে! তারা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের যদি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় তাহলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অথবা সচিবালয় উদ্দিষ্ট করতে পারে। তা না করে তারা যা করছে তা রাজনৈতিক ভদ্রতা, সৌজন্য ও সভ্যতা পরিপূরক নয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন তিনটি শক্তি ক্রিয়াশীল। প্রথমত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলো। তৃতীয়ত, সেনাবাহিনী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেদের কার্যক্রমের মাধ্যমে গোটা জাতিকে আশ্বস্ত করতে পারছে না। ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলার অবনতি, অর্থনৈতিক বেহাল ও অরাজক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাদের দৃঢ় অবস্থান না থাকায় বিব্রতকর অবস্থায় আছেন তারা। এ বিব্রতকর পরিস্থিতির দায় কিছুটা তাদের। অনেকটা রাজনৈতিক দলগুলোর, যাদের আমরা দ্বিতীয় এবং প্রধানতম অংশীদার মনে করি। রাজনৈতিক দলগুলোর সাম্প্রতিক বাগ-বিতর্ক, দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ এবং ঝগড়াঝাঁটি দেশের পরিবেশকে দূষিত করে তুলছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কী হবে না, এ নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয় প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন এনসিপি। বিএনপিকে অবশ্যই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। অপরদিকে এনসিপি সংগতভাবেই আবেগ-উত্তেজনা ছড়িয়েছে। অবশেষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি আইনগত গোঁজামিল দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। এখন এনসিপি এমন সব দাবি তুলছে যাতে নির্বাচন দীর্ঘায়িত হয়। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন চায় তারা। অথচ কমিশন গঠন সময়ের দাবি ছিল। নির্বাচন চাইলে কমিশন গঠন ছাড়া বিকল্প ছিল না। পতিত সরকারের প্রণীত আইনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। এছাড়া বিকল্প ছিল কি? নতুন সরকারের দায়িত্বে না আসা পর্যন্ত পুরোনো সংবিধান অনুকরণ, অনুসরণ করেই তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলছে। এনসিপির আরেকটি দাবি জাতীয় সরকারের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। বিষয়টি বিধিসম্মত। স্থানীয় নির্বাচন আগে হলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সমর্থনের ভিত্তি দৃঢ় করতে পারবে। নির্বাচন কমিশনেরও একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে যাবে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন যদি আগামী ৬-৯ মাসে হয়, তাহলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় কোথায়? আর অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতাও স্থানীয় নির্বাচন আগে করার উপযোগী নয়।

গত কয়েকদিনে বিএনপি ও এনসিপি রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। বিএনপি ও এনসিপির পৃথক কর্মসূচিতে আকস্মিকভাবেই রাজধানী বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র করার দাবি জানাচ্ছেন। এর বিপরীতে এনসিপি কর্মসূচি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে। ইশরাকের লোকরা দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছেন। অপরদিকে এনসিপি ৩ উপদেষ্টার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছে। এর মাঝেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল তাদের একজনের হত্যা নিয়ে নিত্য আন্দোলন করছে। শাহবাগ দখলে রাখছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের বাসভবনও তাদের আন্দোলনের একটি লক্ষ্যবস্তু। ইতোমধ্যে তারা ভাইস চ্যান্সেলরকে বিব্রত করেছে। নিঃসন্দেহে হত্যার বিচার দাবি ন্যায়সংগত। কিন্তু বিষয়টি বিস্তৃত করায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এনসিপি নির্বাচন পেছাতে চায়। অপরদিকে বিএনপি সরকারকে অব্যাহত চাপের মুখে রাখতে চায়। এনসিপি মনে করছে, বিএনপি মৌলিক সংস্কার পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে ক্ষমতায় যেতে চায়। দুই পক্ষের এ বৈরী আচরণ নাগরিক সাধারণকে হতাশ করে তুলছে। বিদ্বজ্জনরা মনে করছেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে বিতর্ক-বিদ্বেষ সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করবে। এসব ঘটনাবলি অতীতে বিশেষত বিগত ১৫ বছরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ কর্মসূচির কথা মনে করিয়ে দেয়। সংগতভাবেই প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে, এনসিপি কি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে চাচ্ছে?

রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন এ রকম বাগবিতণ্ডা এবং সাংঘর্ষিক অবস্থা চলছে তখন মুখ খুলেছেন সেনাবাহিনী প্রধান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীকে অনাকাঙ্ক্ষিত অনুঘটক মনে করা হয়। সব সময়ই রাজনৈতিক পক্ষ ও বিপক্ষ একে অপরকে সেনাবাহিনীকে রাজনীতিতে ডেকে আনার জন্য দোষারোপ করে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকার একদিকে যেমন সেনাবাহিনীকে তুষ্ট করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে, অপরদিকে সেনাবাহিনীকে সব সময়ই ভয় ও শঙ্কার চোখে দেখেছে। গতানুগতিকভাবে শেখ সাহেব সেনাবাহিনী বিরোধী ছিলেন। তিনি যেহেতু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিগ্রহের মুখে পড়েছিলেন, সেজন্য তিনি সেনাবাহিনী লালনকে শ্বেতহস্তীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের কারণে সেনাবাহিনীকে সব সময়ই বিএনপির অনুবর্তী নিদেনপক্ষে ভাবাদর্শী বলে চিন্তা করা হতো। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে সে ‘মিথ’-এর অবসান হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সেনাবাহিনীর ‘প্রফেশনালিজম’র ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। রাজনৈতিক সরকারের আনুগত্য করাই তাদের কর্তব্য। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যখনই যেখানে সেনা হস্তক্ষেপ ঘটেছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণেই তা ঘটেছে। বাংলাদেশে সেনাবাহিনী রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করতে পারে এটা ছিল অভাবনীয় বিষয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা তাদের বৈধতা দিয়েছে। এরশাদের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের নেপথ্যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ষড়যন্ত্র ছিল। স্বাভাবিকভাবে সংগতভাবেই সচেতন নাগরিক সাধারণ সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপকে সব সময়ই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিপরীত কিছু মনে করে। আবার সামরিক বাহিনী যে জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের শেষ কেন্দ্রবিন্দু তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানেও এর প্রমাণ মিলেছে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার দেশপ্রেমজাত সাহসী ভূমিকার জন্য নন্দিত হয়েছেন। তিনি দায়িত্ব না নিলে দেশে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা ছিল। বাংলাদেশ হতে পারত সিরিয়া, মিয়ানমার বা সুদান। এখন এ সময়ে সেনাবাহিনী প্রধানের মন্তব্য কারও কারও কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত মনে হলেও নাগরিক সাধারণের চোখে অযাচিত নয়। দীর্ঘ ৮ মাস ধরে সেনাবাহিনী কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে-এমন উদাহরণ নেই। তবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি দেশকে অস্থিরতা, অরাজকতা ও দ্বন্দ্ব-বিগ্রহের মধ্যে ঠেলে দেয় তাহলে জাতিকে নির্দেশনা দেওয়ার সংগত অধিকার তাদের রয়েছে।

দেশের জনগণ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ চায় না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করা বা বিতর্কিত করা জাতির জন্য কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না। ভুল হোক, শুদ্ধ হোক জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত এ সরকার ব্যর্থ হলে সেই ব্যর্থতার পরিণতি হবে ভয়াবহ। সুতরাং এ মুহূর্তে জাতীয় ঐক্য একটি অনিবার্য বিষয়। ‘বিভাজনে শুধু অপশক্তির চক্রান্তই সফল হবে। ভুলে গেলে চলবে না অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।’ জাতীয় ঐক্যের মূল ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা। বাংলাদেশের রাজনীতির ত্রিপক্ষ : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, রাজনৈতিক নেতারা ও সেনাবাহিনী-জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সংযম, সাহস ও ত্যাগের মনোভাব প্রদর্শন করবে, এটাই জনগণের দৃঢ় প্রত্যাশা।

আবদুল লতিফ মাসুম : লেখক ও অধ্যাপক

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম