হালফিল বয়ান
পলাশীর যুদ্ধ এবং জগৎশেঠের ষড়যন্ত্র

ড. মাহফুজ পারভেজ
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফলো করুন |
|
---|---|
পলাশী যুদ্ধের (২৩ জুন ১৭৫৭) সবচেয়ে ঘৃণ্য ও ষড়যন্ত্র-পটু চরিত্র জগৎশেঠ। কবি-সম্পাদক শিকদার আবদুল হাই (ভ্রমণ সমগ্র, পলাশী ভ্রমণ পর্ব, ঢাকা, অনন্যা প্রকাশনী, ২০০৬) গ্রন্থের ৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, কিছু সাম্প্রদায়িক ও উদ্দেশ্যমূলক ইতিহাসকার ব্যতীত সৎ, যোগ্য এবং প্রজ্ঞাবান ঐতিহাসিক একবাক্যে বলেছেন, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সব ষড়যন্ত্র আর বিদ্বেষের জাল জগৎশেঠের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়েছিল। রবার্ট ক্লাইভ স্বয়ং লিখেছেন, কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি চক্রান্তের পেছনে থাকলেও আসল নেতৃত্ব দিয়েছিল জগৎশেঠ নিজে। মঁশিয়ে জা ল প্রমুখ সমকালীন-নিরপেক্ষ ইতিহাসকার লিখেছেন, অনেক দিন ধরে বাংলায় যেসব রাজনৈতিক বিপ্লব হয়েছে, তার প্রধান হোতা ছিলেন জগৎশেঠ। ইংরেজরা যা করছে (পলাশীর কথিত ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধবিজয় এবং বাংলা-ভারতে উপনিবেশ স্থাপন) তা জগৎশেঠের সমর্থন ছাড়া কখনো করতে পারত না।
এ জগৎশেঠরা বাংলাভাষী নন, বাংলাদেশের লোকও নন। তারা উত্তর-পশ্চিম ভারতের বেনিয়া প্রবৃত্তির মাড়োয়ারি সম্প্রদায়। জৈন ধর্মের অনুসারী। তাদের পূর্বপুরুষ হীরানন্দ প্রথমে ভাগ্যান্বেষণে বিহারের পাটনায় আসেন। হীরানন্দের পুত্র মানিকচাঁদ ঢাকায় তার গদি স্থাপন করেন। তৎকালীন শাসক মুর্শিদকুলী খানের সঙ্গে সৌহার্দ থাকায় পরে তারা নতুন রাজধানী শহর মুর্শিদাবাদে এসে জেঁকে বসেন। দিল্লির বাদশাহ ফররুখ শিয়ারের কাছ থেকে তারা শেঠ উপাধি লাভ করেন মুর্শিদকুলী খানের বদৌলতে। সেই সময় ভারতের প্রধান নগরীতে শেঠদের গদি স্থাপিত হয়। তাতে অলিখিত ব্যাংকের মতো অর্থলগ্নি ও সুদের ব্যবসা চলে আর তাদের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-প্রশাসনিক কর্তৃত্বও বৃদ্ধি পায়। ১৭২২ সালে মানিকচাঁদের মৃত্যু হলে ভাগিনা ফতেচাঁদ এবং তার মৃত্যু হলে তদীয় পৌত্র মাহতাবচাঁদ জগৎশেঠ খেতাব পান। অপর শেঠ স্বরূপচাঁদ লাভ করেন মহারাজ খেতাব। উমিচাঁদও প্রভাবশালী ছিল। এই শেঠদের গদিতে তৎকালীন বাজার মূল্যে ১০ কোটি টাকার লেনদেন হতো, যে জগৎশেঠরা ছিলেন পলাশী বিপর্যয়ের নেপথ্য কারিগর তথা ষড়যন্ত্রের হোতা।
শেঠরা আর্থিকভাবে শক্তিশালী হলে রাজনৈতিক উচ্চাশায় প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। রাষ্ট্রের সংহতির শিকড় কাটতে শেঠরা নবাব পরিবারের মধ্যে অর্থ, ঘুস ও কুমন্ত্রণা দিয়ে নানা উপদল বানিয়ে একজনকে অন্যজনের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন, যে বিভক্তির সুযোগে ইংরেজরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে সমর্থ হয়। তরুণ নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে তারা প্রথম থেকেই ছিলেন খাপ্পা। যেজন্য তারা সিরাজের জন্য দিল্লি থেকে সনদ আনানোর ব্যাপারে চরম উদাসীনতা ও গড়িমসি করেন। তারা প্রথমে শওকতজঙ্গ, পরে ইয়ার লতিফ ও সর্বশেষ মীর জাফরকে বাংলার নবাব বানানোর প্রজেক্ট গ্রহণ করেন। কারণ সিরাজ ছিলেন লুটেরা-শোষক শেঠদের সীমাহীন নির্যাতন, কায়েমি স্বার্থের প্রতিবন্ধক। ফলে তারা নবাব পদে সিরাজকে সহ্য করতে পারেননি এবং নিজেদের বশংবদ একজনকে নবাব বানাতে বদ্ধপরিকর হন। তারাই পুরো ষড়যন্ত্রটি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ইংরেজ ও প্রাসাদের ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে দূতিয়ালি ও সমন্বয়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এবং অবশেষে ঔপনিবেশিক ইংরেজ ও স্থানীয় ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে সম্পাদিত হয় বাংলার স্বাধীনতাবিনাশী গোপন চুক্তি। আর এভাবেই পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ নামক এক প্রহসনের মাধ্যমে অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য।
১৭৫৭ সালের ষড়যন্ত্রমূলক পলাশীর যুদ্ধ, সিরাজউদ্দৌলার পতন, বাংলার স্বাধীনতা হারানো ও ইংরেজ উপনিবেশিক অপশক্তি কর্তৃক আক্রান্ত ও পরাধীন হওয়ার বিষয়টি ইংরেজ ও তাঁবেদার ইতিহাসবিদরা লুকিয়ে রেখে প্রচার করেছে সিরাজ-বিদ্বেষ। বাংলার ইতিহাস, বিশেষত পলাশী ও সিরাজউদ্দৌলাকে আবর্তিত করে যা লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা মূলত সিরাজ-পরবর্তী শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় সিরাজকে কালিমালিপ্ত করার অপচেষ্টা মাত্র। অতএব, বাংলার ক্ষেত্রে ইতিহাস বিকৃতির সূচনা ১৭৫৭ সালের পলাশীর ঘটনাকে কেন্দ্র করেই হয়েছিল। ইতিহাস বিকৃতির ধারাবাহিকতায় কবি নবীনচন্দ্র সেন ‘পলাশীর যুদ্ধ’ কাব্যে ইংরেজের জয়গান এতই কুরুচিপূর্ণভাবে গেয়েছেন, প্রসঙ্গটির উল্লেখপূর্বক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় লিখেন : সেকালে ইংরেজ ও বাঙালি মিলিত হইয়া সিরাজের নামে কত অলীক কলংক রটনা করিয়া গিয়াছেন তাহা ইতিহাসের নিকট অপরিচিত নহে। অবসর পাইলে একালের প্রতিভাশালী সাহিত্যসেবকরা এখনো কত নতুন নতুন রচনা কৌশলের পরিচয় প্রদান করিতে পারেন, নবীনচন্দ্রের ‘পলাশীর যুদ্ধ’ উহার উৎকৃষ্ট নিদর্শন। যাহা সেকালের লোকেও জানিত না, যাহা সিরাজউদ্দৌলার শত্রুদলও কল্পনা করিতে সাহস পাইত না-এ কালের লোকে তাহারও অভাব পূরণ করিতে ইতস্তত করিতেছে না।
বাংলার ক্ষমতা আরোহণের পর সিরাজ কিছু প্রশাসনিক ও সামরিক পরিবর্তন করেন, যা কুচক্রী ও ষড়যন্ত্রকারীদের স্বার্থের জন্য ছিল হানিকর। যেমন-১. ঘসেটি বেগমকে দমন এবং অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ; ২. মীরজাফরের অবাধ্যতার কারণে বিশ্বস্ত মোহনলালকে প্রধান উজির পদে নিয়োগ; ৩. ষড়যন্ত্রকারী রাজবল্লভকে বন্দিকরণ; ৪. ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের ঘাঁটি কলকাতা দখল; এবং ৫. পূর্ণিয়া জয়।
তরুণ নবাবের কাজগুলো অন্যায় কিংবা সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে অবিবেচনাপ্রসূত হয়নি। কারণ, ঘসেটি বেগম ছিলেন বহু রাষ্ট্রীয় সম্পদের অবৈধ দখলদার। মীরজাফর নবাব আলীবর্দীর জীবিতকালে মারাঠাদের সঙ্গে যুদ্ধে অযোগ্য, অকৃতজ্ঞ ও বিশ্বাসঘাতকরূপে প্রমাণিত হয়েছিল। রাজবল্লভ ঢাকা বা জাহাঙ্গীরনগরের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সাহামত জং এর ধূর্ত ডেপুটি দেওয়ান বা পেশকার হয়েও যথাযথভাবে হিসাব-নিকাশ না দিয়ে বিপুল সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে। দরবারের আরেক আমাত্য কৃষ্ণদাশ অর্থ ও সম্পদসহ কলকাতা পালিয়ে ইংরেজদের আশ্রয় লাভ করে। ফলে সরকারি অর্থ সম্পদ উদ্ধার ও বিদ্রোহী কৃষ্ণদাশ ও তার আশ্রয়দাতা ঔপনিবেশিক শক্তি ইংরেজদের শাস্তি দেওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে সিরাজকে কলকাতা আক্রমণ করতে হয়েছিল। পূর্ণিয়া বিজয়েরও বিশেষ রাজনৈতিক প্রয়োজন ছিল এজন্য যে, মীরজাফরের প্ররোচনায় পূর্ণিয়া থেকে শওকত জং বাংলার মসনদ দাবি করে।
বিদ্রোহী শওকত জং এবং ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের আস্তানা কলকাতা দপ্তরের পতন ঘটিয়ে সিরাজ যখন রাজধানী মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন, তখন পরাজিতরা চক্রান্তের নতুন খেলা শুরু করে। শওকত জংয়ের অস্তিত্বহীন অবস্থায় জগৎশেঠ কৌশলে মীরজাফরকে বোঝাতে সক্ষম হয়, ইংরেজদের সাহায্য ছাড়া সিরাজকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করা যাবে না। অতএব জগৎশেঠের দূতিয়ালিতে মীরজাফর ও ইংরেজদের মধ্যে নৈকট্য বৃদ্ধি পায় এবং ষড়যন্ত্রের গভীর জাল বিস্তার লাভ করে।
যদিও সিরাজের আক্রমণে কলকাতা থেকে ইংরেজরা ছত্রভঙ্গ হয়ে নদীপথে পালিয়ে যায়, তথাপি তারা ফিরে আসার চেষ্টা চালায়। কলকাতার ইংরেজ কুঠির প্রধান ড্রেক অন্য কয়েকজন ইংরেজসহ দক্ষিণ দিকে মাদ্রাজে গিয়ে রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে মিলিত হলে পরামর্শপূর্বক সাব্যস্ত হয়, ক্লাইভ বাংলা থেকে পলায়িত ইংরেজদের সঙ্গে কলকাতা যাবে। বাংলার আমিরদের মধ্যে অসন্তুষ্টির সংবাদ ক্লাইভকে উজ্জীবিত করে। ফলে কলকাতার গভর্নর মানিকচাঁদকে পরাজিত ও পলায়নে বাধ্য করে ক্লাইভ কলকাতা পুনর্দখল করে। কলকাতা ফিরে পেয়ে ইংরেজরা ভারতের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত স্বজাতির সৈন্যদের কলকাতায় একত্রিত করে ব্যাপক শক্তি সঞ্চয় করে। বাংলার দরবার থেকে উসকানি এবং গোপনে সাহায্য পাওয়ার আশ্বাসে ইংরেজরা নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামরিক প্রস্তুতি বাড়াতে থাকে। এক্ষেত্রে জগৎশেঠের মাধ্যমে মীরজাফর ও ইংরেজের মধ্যে মৈত্রী স্থাপিত হওয়ায় ইংরেজরা বাংলার ক্ষমতার রাজনীতিতে অনুপ্রবেশের সাহস, সুযোগ ও পথ পায়।
ইংরেজ কর্তৃক কলকাতা পতনের সংবাদ পেয়ে সিরাজ রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে অতিদ্রুত সসৈন্যে অগ্রসর হয়ে কলকাতার উপকণ্ঠে কারহাটির বাগানে শিবির স্থাপন করেন। ইংরেজরা বিপুল বিক্রমে শক্তিশালী কামান, গোলা ইত্যাদির সাহায্যে নৈশ আক্রমণ করে। এক্ষণে নবাব প্রতিপক্ষ ইংরেজ পক্ষের শক্তি বৃদ্ধি এবং নিজের বাহিনীর বিশৃঙ্খলা টের পান। নিজের অবস্থা সুসংহতকরণার্থে উদ্বিগ্ন নবাব আপাতত যুদ্ধ না করে রাজধানী মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন। মুর্শিদাবাদে নবাব অবাক চিত্র দেখতে পান-জগৎশেঠ ছিলেন অত্যন্ত তৎপর আর অন্যান্যরা নিরুদ্বিগ্ন, যেন দেশে কোনো বিদেশি আক্রমণই করেনি। সিরাজ কতিপয় আমির ও সেনাপতি, বিশেষত মীর মুহম্মদ জাফর খান বাহাদুরকে নিষ্ক্রিয় দেখে তার প্রাসাদের সামনে বড় বড় কামান সাজিয়ে তার অট্টালিকা ভূমিস্মাৎ করার এবং তাকে নগর ত্যাগ করতে আদেশ দেন।
কিন্তু ওই সংকুল পরিস্থিতিতে সিরাজ গোপন চক্রান্তের কারণে কালবিলম্ব করেন এবং গুপ্তশত্রুদের ফাঁদে ধরা দেন। সিরাজকে বিভ্রান্ত করতে মূল ষড়যন্ত্রকারী জগৎশেঠের ইঙ্গিতে মীরজাফর নবাবের কাছে নতি স্বীকার করে নানা রকমের কৈফিয়ত দিয়ে ক্ষমা চেয়ে আবার লড়াই করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন। সিরাজ সরলভাবে পুরো বিষয়টিকে দেখে আশ্বস্ত হন এবং মীরজাফরকে নিষ্কৃতি দিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহযাত্রী হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। এ সুযোগে ষড়যন্ত্রের প্রধান নায়ক জগৎশেঠ, সেনাপতি মীরজাফর, দুলাব রাম (জানকী রামের পুত্র), ঘসেটি বেগম গোপনে সক্রিয় হয়। ঘসেটি বেগম জগৎশেঠের পরিকল্পনা অনুযায়ী লুক্কায়িত ও তছরুপকৃত সরকারি অর্থ দিয়ে মীরজাফরকে অকাতরে সাহায্য করে। জগৎশেঠ অতি দ্রুততার সঙ্গে ইংরেজ ও মীরজাফরের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে দেয়। ফলে মীরজাফর তার অন্যতম বিশ্বস্ত আমির বেগকে পত্র দিয়ে কলকাতায় পাঠায় এবং ইংরেজদের সাহায্য চায়। মীরজাফর ক্লাইভকে লিখে, ক্লাইভ কেবল ইংরেজ সৈন্যদের নিয়ে অগ্রসর হলেই মীরজাফর ও তার সহযোগীরা সর্বাত্মক সাহায্য করবে এবং এজন্য ক্লাইভকে তিন কোটি টাকা উপহার দেওয়া হবে। ক্লাইভ সমগ্র পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে দেখতে পেয়ে নিঃসঙ্গ ও একাকী নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য পলাশীর প্রান্তরে উপস্থিত হয়।
১৭৫৭ সালের জুন মাসের গোড়ার দিকে ক্লাইভ কলকাতা থেকে রওয়ানা হয়ে পলাশীর দক্ষিণে অবস্থিত কাটোয়া শহরে পৌঁছে সেখানকার দুর্গ অধিকার করে এবং ২৩ জুন সকালে পলাশীর প্রান্তরে উপস্থিত হয়ে নবাব শিবির আক্রমণ করে। মীর মদন বীর বিক্রমে বাধা দিয়ে মৃত্যুকে বরণ করেন। মোহনলাল মীর মদনের স্থান গ্রহণ করে যুদ্ধ চালাতে থাকেন। সিরাজ ডেকে পাঠালেও মীরজাফর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। তবে, মোহনলালকে অবিলম্বে যুদ্ধ থেকে বিরত করার শর্তে মীরজাফর যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ষড়যন্ত্রের কারণে মোহনলাল যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করায় নবাবের সৈন্যরা নিরাশ হয়ে সন্ধ্যার আগেই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। শাঠ্য-ষড়যন্ত্রের কারণে প্রায়-বিনাযুদ্ধে নবাবের পরাজয় ও ইংরেজদের জয় নিশ্চিত হয়। এভাবেই বাংলার ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয় দেশপ্রেমিকের পরাজয় আর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের বিজয়।
যে বটবৃক্ষটি পলাশীর ষড়যন্ত্রের সাক্ষীরূপে এখনো টিকে রয়েছে, আড়ইশ বছরেরও বেশি সময় পরও কোনো পরিব্রাজকের চোখে পড়বে সেই বটবৃক্ষে রয়েছে অনেক শকুন। তখনো এগুলো ছিল। এখনো রয়েছে। কোনটির রং সাদা, কোনটির ধূসর বা বাদামি। কোনটি স্বদেশি। কোনটি বিদেশি। প্রজনন দক্ষতায় ষড়যন্ত্রী শকুনের সংখ্যা বাড়লেও সিরাজউদ্দৌলার কোনো পুত্রসন্তান ছিল না। ষড়যন্ত্রকারী ক্লাইভ-মীরজাফর-জগৎশেঠের রয়েছে অসংখ্য উত্তরপুরুষ। শকুনের মতো এদেরও বংশবিস্তার ঘটেছে। সিরাজের বাংলা থেকে আজকের বাংলাদেশ পর্যন্ত তারাই রয়েছে বহাল তবিয়তে। তারাই হয়েছে ক্ষমতাবান। দেশি ষড়যন্ত্রীকারীদের সঙ্গে বেড়েছে বিদেশি চক্রান্তকারীদের সখ্য ও মৈত্রী। তাই আশঙ্কা, নতুন কোনো জগৎশেঠের নেতৃত্বে-উদ্যোগে ষড়যন্ত্রকারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক বিভেদ, অনৈক্য ও সংঘাতের ছিদ্রপথে আবার কখন না জানি সক্রিয় হয়! আবার কখন না জানি দুর্যোগের কালোমেঘ এসে আচ্ছন্ন করে বাংলার মুক্ত আকাশ।
প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ : চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়