ডিপফেকের ক্ষতি থেকে মুক্তির উপায়
ড. শাহ জে মিয়া
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ডিপফেক (Deepfake) একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যাপ্লিকেশন, যা কৃত্রিম মিডিয়া কনটেন্ট তৈরি করে থাকে। এটি ডিপফেক অ্যাপ্লিকেশন একটি নতুন ধারণা, যা ডিজিটাল ব্যবসার জগতে ব্যবহারযোগ্য হলেও সমাজে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ডিপফেক কনটেন্টগুলো সাধারণত ছবি, ভিডিও অথবা অডিও এবং তাদের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াতে পারে। আরও ভালোভাবে বলা যায়, ডিপফেক বাস্তব বা অস্তিত্বহীন বস্তুভিত্তিক কনটেন্ট চিত্রিত করতে পারে, যার মধ্যে মানুষের ছবি বা ছবির মতো কিছু থাকতে পারে, যা কিনা কোনো কিছুর অর্থপূর্ণ ব্যবহার বা ধারণকে বোঝায়। এখানে বলে রাখা ভালো, ডিপফেক শব্দটি প্রথম ২০১৭ সালের শেষের দিকে একজন রেডিট ব্যবহারকারীর মাধ্যমে অনলাইন জগতে প্রবর্তিত হয়েছিল।
ডিপফেকের মূল উদ্দেশ্য হলো একটি চিত্র বা ভিডিওতে কোনো ব্যক্তির সাদৃশ্য অন্য ব্যক্তির সঙ্গে অদলবদল করানো। এ ধারণাটি একেবারেই এ প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে জড়িত।
এখন দেখা যাক ডিপফেক প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে। প্রথমে, এতে এআই বা বৃহৎ ভাষা মডেলগুলোকে প্রশিক্ষণ করার কাজটি সম্পন্ন হয়। এখানে যে এআই কৌশলগুলো ব্যবহার করি, তাকে ডিপ লার্নিং মডেল বলা হয়। এ মডেলটি সাধারণত একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, যার লক্ষ্য হলো হাজার হাজার মানব বস্তুর ছবি এবং ভিডিওর মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হওয়া। এটি এআইকে মানুষের মুখের নড়াচড়া, অভিব্যক্তি এবং ভয়েস প্যাটার্ন শিখতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় কার্যকলাপটি মানুষের চেহারার পরিবর্তন বা ফেস সোয়াপিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ কার্যকলাপটি এআই মডেলকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। এআই মডেলটি একটি ভিডিও বা ছবিতে মানুষের মুখের বদলে অন্য একটি দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে পারে। এআই মডেলটি মানুষের মুখের বৈশিষ্ট্য, ত্বকের রং, টোন এবং আলোর সঙ্গে সাবধানে মেলানোর জন্য কাজ করে, যাতে মুখ অদলবদলের ঘটনাটি নির্বিঘ্ন এবং পরিচ্ছন্ন হয়, যা থেকে সহজেই অনুমান করা সম্ভব, কোন মুখের কোন অভিব্যক্তি প্রকাশিত হচ্ছে। এরপর, এআইয়ের জন্য মুখের নড়াচড়া বা মুভমেন্ট করা হয়, যাতে নকল মুখ স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করে, অভিব্যক্তি ও মাথার নড়াচড়া এবং এমনকি সূক্ষ্ম পেশির টান মূল ভিডিওর সঙ্গে গতির সমন্বয় করা হয়ে থাকে।
এরপর ডিপফেকের পদ্ধতির মধ্যে ভয়েস সংশ্লেষণ কার্যকলাপ পরিচালিত হয়, যেখানে জাল ভিডিও বা চিত্র তৈরি করতে সংশ্লেষিত বা পরিবর্তিত ভয়েস অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে সম্পর্কিত ব্যক্তির বা মানুষের স্বর এবং কথা বলার ধরন অনুকরণ করা। পরিশেষে, যে কোনো বিকৃতি সংশোধন এবং দর্শকদের কাছে ডিপফেক কনটেন্টটিকে বিশ্বাসযোগ্য, খাঁটি এবং নির্ভরযোগ্য দেখাতে যা যা করা দরকার, তাই করে থাকে।
ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো কনটেন্ট বিনোদন এবং সৃজনশীলতার জন্য তৈরি করা যেতে পারে। তবে এটি মনে রাখতে হবে, এটি উল্লেখযোগ্য নৈতিক দ্বন্দ্ব ও উদ্বেগও উত্থাপন করতে পারে, বিশেষ করে যখন জনসাধারণের কাছে ভুল তথ্য বা নেতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। এ কারণেই গবেষকরা ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহারের সময় সব সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। এর মানে হচ্ছে, যা ডিজিটাল কনটেন্টে দেখা যায় বা দেখা হয়, সব সময় তা বিশ্বাসযোগ্য না-ও হতে পারে।
ডিপফেক প্রযুক্তি থেকে উৎপাদিত ভিডিও কনটেন্ট, বস্তু অথবা যে কোনো কিছু বিনোদনমূলক কনটেন্টের জন্য ভালো। তবে আমাদের সমাজে নীতিগত বৈষম্য সৃষ্টি করার জায়গাটা মারাত্মক সংবেদনশীল। এটি অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে দেয় বা অন্যকে অপরাধ বা তথ্যের অপব্যবহার করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। ডিপফেকের তথ্য ব্যবহার করে মানুষ এমন কিছু করতে পারে, যা ব্যবসা ও মানুষের বা সমাজের জন্য ক্ষতিকর, শিশুদের শিক্ষার অন্তরায়, সামাজিক নৈতিকতা এবং সত্যতা ও বিশ্বাসের জন্য হানিকর। ডিপফেক প্রযুক্তির প্রভাব এবং জাল কনটেন্ট তৈরির কারণে আমাদের সমাজে এক ধরনের হ্যালুসিনেশন তৈরি হয়, যা মানুষের মধ্যে এমন কিছু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছড়িয়ে দিতে পারে, যার বস্তুত কোনো বাস্তবতা নেই অথবা যদি থেকেও থাকে তবে তা যে কোনো সময় যে কোনো মাধ্যমে জাল ছবি বা জাল ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে অসত্য চিন্তাভাবনা তৈরি করতে পারে।
জাল বা নকল খবরের বিস্তারের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য অস্ট্রেলিয়ান সরকার একটি জাল সংবাদ নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা পরিচালনা করে, যাকে ‘ই-সেফটি’ উদ্যোগ বলা হয়।
ই-সেফটি এমন উদ্যোগগুলো পরিচালনা করে, যার মধ্যে অপব্যবহার বা বিভ্রান্তির জন্য ব্যবহৃত ডিপফেক কনটেন্টও অন্তর্ভুক্ত। ই-সেফটির আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের ডিজিটাল কনটেন্ট সুরক্ষা রাখা এবং নিরাপদ অনলাইন অনুশীলন করার বিষয়ে অনুপ্রেরণা দেওয়া। অস্ট্রেলিয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ডিপফেক কনটেন্ট সম্পর্কে নির্দেশনা খুঁজতে সাধারণ জনগণ, শিক্ষাবিদ এবং সাংবাদিকরা ই-সেফটির সংস্থানগুলোকে ব্যবহার করে থাকেন। ই-সেফটি কমিশনার ডিপফেকের প্রতিক্রিয়া উন্নত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি, সরকারি কর্মকর্তা এবং গবেষকদের (সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা) সঙ্গেও কাজ করে। এ তথ্যগুলো ই-সেফটি কমিশনার ইনিশিয়েটিভ ওয়েবসাইটের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা গুগলের মাধ্যমে যে কোনো সময় ওপেন সোর্স হিসাবে পাওয়া যেতে পারে।
এখন আসুন আমরা অস্ট্রেলিয়ান এএপি ফ্যাক্ট-চেক (অস্ট্রেলিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ফ্যাক্ট-চেকিং) সম্পর্কে কিছু কথা বলি। ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের লক্ষ্য জনসাধারণের দাবি এবং ভাইরাল বিষয়বস্তুর স্বাধীন তথ্যগত যাচাইকরণ প্রদান করা। এএপি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিষ্ঠানটি প্রশিক্ষিত সাংবাদিক এবং বিশ্লেষকদের নিয়োগ করে থাকে, যারা সন্দেহজনক বিষয়বস্তু যাচাই করার জন্য রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান, এর অবস্থান এবং ভিডিও বিশ্লেষণ করার জন্য ডিজিটাল যাচাইকরণ সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে। এএপির যাচাই করা খবর, তথ্য বা কনটেন্টগুলোর ফলাফল অনলাইনে তাদের নিজস্ব নিউজরুমে জনসাধারণের জন্য প্রকাশিত হয়। অস্ট্রেলিয়ায়, ফেসবুকের মতো প্রধান মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো মিথ্যা বা ডিপফেকের গল্প শনাক্ত এবং লেবেল করার জন্য এএপি ফ্যাক্ট-চেকের ওপর নির্ভর করে।
আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এবিসি নিউজ টিমের তৈরি আরেকটি ফ্যাক্ট-চেকিং এবং জাল সংবাদ শনাক্তকরণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগটিকে ‘আরএমআইটি ফ্যাক্টল্যাব বলা হয়, যার অংশীদারত্বভিত্তিক ফ্যাক্ট-চেকিং গবেষণার বিষয়বস্তুই হলো সন্দেহজনক দাবি এবং অনলাইন ভুল তথ্য এবং ডিপফেক বিষয়বস্তু পরীক্ষা। এ উদ্যোগটি এবিসি দর্শকদের জন্য তার অনুসন্ধানী ফলাফল প্রকাশ করে এবং বৃহত্তর সাংবাদিকতা সম্প্রদায়ের সঙ্গে উন্মুক্ত থাকে।
বিভিন্ন অনলাইন উৎসের মাধ্যমে, ডিপফেক ল্যাবটি আসলে কী, আসুন জেনে যাওয়া যাক। ডিপফেক ল্যাবটি একটি সফটওয়্যার স্যুট তৈরি করে, যা ভিডিও এবং ছবির মতো বাস্তবসম্মত মুখ বা চিত্রের বস্তুর অদলবদলের কাজ চিহ্নিত বা এর ধরন আবিষ্কার করতে পারে। অনেক গবেষক বিভিন্ন ডিপফেক ল্যাব প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন, যা বিনামূল্যে পাওয়া যায় এবং গিটহাব, টরেন্ট এবং মেগাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ডাউনলোড করা যায়। আগ্রহী যে কোনো ব্যবহারকারী বা ব্যবহারকারীরা বা যারা ডিপফেক সম্পর্কে নতুন কিছু জানতে চান, তারা ডিপফেক ল্যাব সম্প্রদায়ের প্রদত্ত টিউটোরিয়াল এবং গাইডের মাধ্যমে দ্রুত ডিপফেক চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়াটি শিখতে পারেন।
এ আরএমআইটি অংশীদারত্বের উদ্যোগের অনুকরণ করে, সিএসআইআরও ডিপফেক ডিটেকশন রিসার্চ এআই-ভিত্তিক ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্তকরণের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য গবেষণা পরিচালনা করে। সিএসআইআরও (দক্ষিণ কোরিয়ার একেকেইইউ-এর সহযোগিতায়) পাঁচটি পদক্ষেপের একটি মূল্যায়ন কাঠামো প্রস্তাব করেছে, যেখানে ডিটেক্টরগুলো কোথায় ব্যর্থ হয় এবং কীভাবে সেগুলোকে শক্তিশালী করা যায় তা চিহ্নিত করা হয়েছে। সিএসআইআরও-এর অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী গবেষণা সম্প্রদায় এবং প্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে উন্মুক্ত করা হচ্ছে। এ রকম আরেকটি উদ্যোগ হলো, টরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা ও অপ্টিমাইজেশন (এআইআরও) কেন্দ্র-এআইআরও, যেখানে ডিপফেক শনাক্তকরণ কৌশলগুলোর অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য নিবেদিত একটি একাডেমিক ডিপফেক প্রকল্প চালু আছে। এআইআরও টিম ভিডিওগুলোতে ডিপফেক ম্যানিপুলেশনের সূক্ষ্ম লক্ষণগুলো ধরার জন্য তৈরি অত্যাধুনিক মেশিন লার্নিং মডেল ব্যবহার করছে।
বিশ্বখ্যাত সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা মেটার ডিপফেক অপসারণ, ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রাম সন্দেহভাজন কনটেন্ট শনাক্ত করার জন্য এআই অ্যালগরিদম এবং মানব ফ্যাক্ট-চেকারদের সম্মিলিত ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ করে। এখানে ‘ব্যবহারকারী’ হলেন মেটার কনটেন্ট মডারেটর এবং ফ্যাক্ট- চেক পার্টনার। অস্ট্রেলিয়ান ফ্যাক্ট-চেকাররা ডিপফেকগুলোকে চিহ্নিত করে এবং মেটার সিস্টেম, তারপর সেই কনটেন্টটি সরিয়ে দেয়। জিপিটিজিরো (নিউজরুমে এআই টেক্সট ডিটেকশন) নামে আরেকটি জনপ্রিয় প্রযুক্তি এআই টেক্সট বিশ্লেষণের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করছে। এ হাতিয়ারটি নিউজরুমে (আন্তর্জাতিকভাবে এবং অস্ট্রেলিয়ায়) পরীক্ষা করা হয়েছে, যাতে নির্ধারণ করা যায়, যে কোনো লেখা মানুষের লেখা নাকি এআই মডেল দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। বেশকিছু অস্ট্রেলিয়ান নিউজরুম এবং ফ্যাক্ট-চেকাররা এ টুলটি ব্যবহার করতে শুরু করেছে।
সবশেষে ইনভিড-উইভেরিফজ একটি যাচাইকরণ টুলকিট, যা ইনভিড নামে পরিচিত, এখন এটি উইভেরিফজ-এর একটি অংশ, যা বিশেষভাবে অনলাইন ভিডিও এবং ছবি প্রমাণীকরণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান প্রেক্ষাপটে এটি সাংবাদিক এবং ফ্যাক্ট-চেকারদের জন্য একটি জনপ্রিয় উৎস হয়ে উঠেছে। এ টুলটি প্রধানত টুইটারে প্রচারিত চমকপ্রদ ভিডিও স্লিপেট বা ছবি আসল না নকল তা দ্রুত পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এ টুলসটি গুগল ক্রোম ব্রাউজারের জন্য প্লাগ-ইন (একটি ব্রাউজার এক্সটেনশন) হিসাবে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এটি একটি ভিডিওকে মূল ফ্রেমে ভেঙে সেই ফ্রেমগুলোতে বিপরীত চিত্র অনুসন্ধান করতে পারে এবং সেই সঙ্গে অন্য কোথাও প্রদর্শিত হয়ে থাকলে তা খুঁজে বের করতে। এ টুলটি ব্যবহারকারীদের ভিডিও মেটাডেটা (টাইমস্ট্যাম্প, অবস্থান, যে কোনো সম্পাদনা) দেখায় এবং এমনকি পরিবর্তনগুলো শনাক্ত করতে সাহায্য করার জন্য ছবিগুলোকে বড় করে তুলতে পারে। এছাড়া এএপি, এবিসি এবং এবিএস-এর ফ্যাক্ট-চেকাররা এবং অস্ট্রেলিয়ার অনেক নিউজরুমের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা সচরাচর এ টুলটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে থাকেন।
আজ আমরা সাইবার স্পেসে ডিপফেক এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য মোকাবিলায় বিভিন্ন এআই সক্ষম সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে আলোচনা করলাম। উপসংহারে বলতে পারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে, ডিপফেক কনটেন্টগুলোকে একজন ব্যক্তির কণ্ঠস্বর এবং মুখের বৈশিষ্ট্য অনুকরণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। সংক্ষেপে, ডিপফেক প্রযুক্তিটি মানুষ বা প্রাণী বা অন্যান্য ধরনের কণ্ঠস্বরের অডিও রেকর্ডিং ব্যবহার করে এমন কিছু ছড়িয়ে দিতে পারে, যা কখনোই বাস্তবসম্মত নয়। অনেক ডিপফেক ভিডিও বা ছবি দেখতে খুব আপত্তিকর হতে পারে, তাই এগুলোকে চিহ্নিত করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে কখনো কখনো এগুলো দেখতে বেশ বাস্তবসম্মত হয়। কখনো কখনো ডিপফেক কনটেন্ট মজা করার জন্যও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদের সমাজে এখন সময় এসেছে, এ বিষয়ে সময়োচিত সচেতনতা বৃদ্ধির এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণের।
বর্তমান সময়ে ডিপফেক কনেটন্টগুলো বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কনটেন্টগুলো মূলত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য বা বর্ণনা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। যদি কোনো ডিপফেক ভিডিওতে কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি বা রাজনীতিবিদকে এমন কিছু বলতে দেখা যায়, যা তারা কখনো বলেনি, তবে তা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। ডিপফেক কনটেন্টের প্রভাব মানুষের ভোট দেওয়ার এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে পারে। যেহেতু ডিপফেক কনটেন্ট বেশ বাস্তবসম্মত মনে হতে পারে, তাই কখনো কখনো কোনো ভিডিও আসল কিনা, তা বলা খুব কঠিন হয়ে যায়।
ড. শাহ জে মিয়া : প্রফেসর অব বিজনেস এনালিটিক্স অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড এআই, নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
