Logo
Logo
×

বাতায়ন

গণ-অভ্যুত্থান : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা

Icon

ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গণ-অভ্যুত্থান : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা

৫ আগস্ট ২০২৪ সাল।

সেদিনের সকালটা আর দশটা সাধারণ সকালের মতো নয়, সারাটা রাত তীব্র উৎকণ্ঠায় জেগে থাকা বিশ কোটি মানুষের নিদ্রাহীন রাতের শেষে এক পরিবর্তনের প্রত্যাশিত শুভ সকাল। সকাল থেকেই ঢাকার গুমোট আকাশে সূর্যহীন ধূসর মেঘ, প্রশস্ত রাজপথগুলো জনশূন্য সুনসান। জনহীন রাজপথে সকালের নীরবতা বিদীর্ণ হচ্ছে পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনীর টহল গাড়ির কর্কশ শব্দে। গত রাতে রাস্তায় পোড়ানো টায়ারগুলো থেকে আসছে ধোঁয়ার উৎকট গন্ধ। লোহার ব্যারিকেড ছড়ানো রয়েছে রাস্তাজুড়ে। রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র-জনতার ছোট ছোট জটলা আস্তে আস্তে জনস্রোতে পরিণত হচ্ছে।

স্বৈরাচারী হাসিনা যুগের পতন মুহূর্তের অপেক্ষায় সারা দেশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, শাহবাগ, শনিরআখড়ায় জনস্রোত ততক্ষণে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আজ সারা ঢাকা শুধুই এক মিছিলের শহর। সারা দেশে গুজব, গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে পুলিশ আর সশস্ত্র বাহিনী প্রধানদের লম্বা বৈঠক চলছে। দাবানলের মতো খবরটা ছড়াতেই চতুর্মুখী মিছিলের গন্তব্য একটাই-‘গণভবন’।

হঠাৎ সব কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এলো সেই প্রত্যাশিত বিজয়ের মুহূর্ত, যার জন্য সারা দেশের অপেক্ষা দীর্ঘ সতেরো বছর ধরে। জনতার রুদ্ররোষ থেকে প্রাণে বাঁচতে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলে দম্ভোক্তি করা ফ্যাসিস্ট তার অগণিত নেতাকর্মীকে ফেলে শুধু পদত্যাগই নয়, বরং দীর্ঘশ্বাস দৌড়ে আরেক লুটেরা ছোট বোন রেহানাসহ হেলিকপ্টারে উঠে কর্গোবিমানে ভারতে পালিয়ে গেছে।

মুক্ত বাংলাদেশে সর্বত্রই সেদিন বাঁধভাঙা আনন্দ। গণভবনের সবুজ ঘাসের গালিচায় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত শুকরিয়া মহান আল্লাহর দরবারে। যে মানুষ জীবনে কখনো মিছিলে শামিল হয়নি, আজ সে মিছিলের অগ্রভাগে। বাবার কাঁধে উচ্ছল শিশুর চোখে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সম্ভাবনা, গালে-কপালে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা কিশোরী-তরুণীরা সেদিন মুক্তবিহঙ্গ যেন। আজ বাংলাদেশে সবাই মুক্ত-শিশু কিশোর, তরুণ, যুবা, বৃদ্ধ, অন্তঃপুরবাসিনী সবাই, কেউ বাদ নেই এ পতন উদ্যাপনের উৎসবে।

অথচ এ বিজয় অর্জন এতটা সহজ ছিল না, দীর্ঘ সতেরো বছর ধরে আগ্নেয়গিরির লাভা উত্তপ্ত হতে হতে মহাবিস্ফোরণে অগ্নুৎপাতে উদ্গীরিত হয়েছে ৫ আগস্টের দ্বিপ্রহরে। এক দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের সূচনা সেই এক-এগারোর অশুভ ঐক্যের মাধ্যমে, বিএনপি আর জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার সেই দেশীয় ষড়যন্ত্রের নকশা রচিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সহযোগীদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হলেন অন্তরিন, গ্রেফতার হলেন তারেক রহমান, বাদ গেল না ছোট ভাই রাজনীতি থেকে হাজার মাইল দূরে থাকা আরাফাত রহমান। অমানবিক নির্যাতনে প্রায় মৃত্যুর মুখোমুখি তারেক রহমান বাধ্য হলেন দেশ ছাড়তে, শুধু চিরস্থায়ী পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা পেতে।

এদিকে মাটি কামড়ে পড়ে রইলেন খালেদা জিয়া, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সামনে নতজানু এদেশের সেনাপ্রধান তার চাকরির নিশ্চয়তার বিনিময়ে হলেন ষড়যন্ত্রের অংশীদার। বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরিকল্পিতভাবে ক্ষমতায় এনেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বকে বিলীন করার দীর্ঘ পরিকল্পনায় সূচনা হলো শেখ হাসিনার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। প্রথমেই পঞ্চদশ সংশোধনীতে বিএনপির প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে মানুষের ভোটাধিকারকে করা হলো অর্থহীন। সর্বোচ্চ আদালত থেকে অধস্তন আদালতকে কুক্ষিগত করে ধ্বংস করা হলো বিচারব্যবস্থা।

একদা অনুগত প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে দেশছাড়া করা হলো। নির্লজ্জ দলীয়করণে প্রশাসন হয়ে গেল পুরোপুরি তাঁবেদার আর অজ্ঞাবহ। আদালতের অসহায় আত্মসমর্পণে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় কারান্তরিন হলেন অনিশ্চিত সময়ের জন্য। রিমান্ডে হারুনদের মতো দলীয় ক্যাডারদের হাতে নির্যাতন যন্ত্রে পঙ্গুত্ব থেকে মৃত্যুর মুখোমুখি হলেন অগণিত বিএনপি নেতাকর্মী। মামলার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সেটা ছাড়ল ৬০ লাখের ঘর। শিকার হলো প্রায় এক লাখ ষাট হাজার বিএনপি নেতাকর্মী। কারও কারও নামে মামলার সংখ্যা দাঁড়াল তিনশত ছুঁইছুঁই। নির্দয় হাসিনার নিষ্ঠুরতায় কারাবন্দি অনেকেই বঞ্চিত হলেন প্রিয়জনের জানাজা থেকে, যদিও কেউ পেলেন কয়েক ঘণ্টা প্যারেলো মুক্তি; কিন্তু ডান্ডাবেরি থেকে মুক্তি মিলল না। রিমান্ডের সঙ্গে যুক্ত হলো গুম আর আয়নাঘর নামের কুখ্যাত নির্যাতন পদ্ধতি। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের মতো চৌকশ উদীয়মান নেতারা একে একে হারিয়ে গেলেন গুমের অন্ধকারে। পরিবার আজও জানল না মানুষটি জীবিত না মৃত, হলো না জানাজার আয়োজন, হলো না ফাতেহা পাঠ। এ সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল পাঁচশত। প্রতীক্ষার পালা দীর্ঘতর হলো, এসবের সঙ্গে যুক্ত হলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ। ২০১৩ সালের মে মাসে ইতিহাসের বর্বরতম শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হলো অগণিত নিরীহ মাদ্রাসাছাত্র। একই বছরে বিতর্কিত প্রশ্নবিদ্ধ বিচারে প্রাণ দিলেন রাজনৈতিক নেতারা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে ২০১৩ সালে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সারা দেশ তখন আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ। সরকার দীর্ঘ আন্দোলনের তীব্রতায় যখন কোণঠাসা, ঠিক তখনই পুনর্নির্বাচনের মিথ্যা আশ্বাসে পশ্চিমা বিশ্বের হস্তক্ষেপে প্রায় সফল আন্দোলনে স্তিমিত হওয়া মৃতপ্রায় আওয়ামী লীগের প্রাণসঞ্চার হলো।

তার পরপরই স্বমূর্তিতে অভির্ভূত আওয়ামী নির্যাতনের প্রধান লক্ষ্যবস্তু তখন শুধু বিএনপি। একের পর এক মিথ্যা মামলায় বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীই তখন মামলা জালে জর্জরিত, দেশের প্রতিটি কারাগার তখন বিএনপি নেতাকর্মীতে পরিপূর্ণ। একজন নেতাকর্মীও রইল না, মামলা-হামলা আর আক্রমণের বাইরে। তাঁবেদার পুলিশ বাহিনীর তাণ্ডবে মিছিল-মিটিং দূরে থাক, সামান্য মানববন্ধনও হয়ে উঠল অসম্ভব। বিএনপির দলীয় কার্যালয় তছনছ হলো বারবার, নিরাপত্তা আর তদন্তের নামে সেখানে লাগল তালা।

প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে স্তব্ধ করতে মিথ্যা মামলায় ২০১৮ সালে করা হলো কারারুদ্ধ, বিশাল নির্জন ভয়াবহ এক কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসাবে কাটালেন বছরের পর বছর। সুদূর লন্ডন থেকে দলের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান, মামলা আর হামলায় জর্জরিত দলকে সংগঠিত করে শত বাধার মাঝেও একের পর এক তারুণ্যের সমাবেশ, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সমাবেশ আর সেখানে নজিরবিহীন জনসমাগম, নদী সাঁতরে, শত কিলোমিটার হেঁটে-সাইকেল চালিয়ে সমাবেশে যোগ দিয়ে প্রতিবাদের নবদৃষ্টান্ত স্থাপন করল প্রতিবাদী নেতাকর্মী। সংগঠনের কাঠামো এতটাই মজবুত করলেন, শত নির্যাতনে একজন মানুষও দল ছাড়লেন না।

বিএনপির চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সমান্তরাল হয়ে এলো ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে ৫ জুন থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সব পদ্ধতিতে তিনি নিজে যেমন সম্পৃক্ত রইলেন-আর তারই নির্দেশে ছাত্রদলও সব বাধা ও নির্যাতন উপেক্ষা করে রইল ছাত্রদের পাশে। আন্দোলনের সেই প্রাথমিক দিনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রয়োজন ছিল সর্বোচ্চ সতর্কতা আর নির্ভুল পদক্ষেপ। তারেক রহমান প্রকাশ্য ঘোষণায় ছাত্র-আন্দোলনে সমর্থন যেমন দিলেন, ঠিক তেমনই ছাত্রদল-যুবদলকে সর্বতো প্রস্তুতিতে প্রতি মুহূর্তে মূল আন্দোলনকে সহায়তা করে যাওয়ার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন প্রতিদিনই। মার্চে শুরু হওয়া আপাতদৃষ্টির কোটা বাতিলের সাদামাটা আন্দোলনে একটা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের প্রয়োজন ছিল, শেখ হাসিনা দাম্ভিক উচ্চারণে আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে ১৪ জুলাই ঠিক সময়মতো অপেক্ষমাণ তীব্র আন্দোলনে অগ্নিসংযোগ করলেন।

বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে ‘আমি ডামি নির্বাচন’ বর্জন আর প্রতিহতের জন্য তারেক রহমানের ডাকে ভোট প্রদান না করে স্বতঃস্ফূর্ত জনসমর্থন আগে থেকেই তৈরি ছিল সমন্বিত আন্দোলনে অংশগ্রহণের প্রতীক্ষায়। আন্দোলনকে বিএনপি-জামায়াতের কাজ বলে অর্বাচীন প্রধানমন্ত্রী নিজের অজান্তেই বাস্তবতাকে প্রকাশ করে ফেলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ চত্বর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত হলো আন্দোলনে। ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার! রাজাকার! কে বলেছে! কে বলেছে! স্বৈরাচার! স্বৈরাচার!’ স্লোগান হয়ে উঠল সর্বজনীন। ১৫ জুলাই ওবায়দুল কাদেরের দাম্ভোক্তি আর ছাত্রলীগের আক্রমণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ পরিণত হলো রণক্ষেত্রে। ১৬ জুলাই এলো আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার দিন হয়ে-আওয়ামী পুলিশের সামনে নির্ভীক চিত্তে সাহসী বুক পেতে রংপুরের আবু সাঈদ ঘাতক বুলেট বুকে নিয়ে তাৎক্ষণিক শাহাদতে কাঁপিয়ে দিলেন সারা বিশ্ব। প্রায় একই সময়ে চট্টগ্রামে শাহাদতবরণ করেন ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম, এদের সাহসী আত্মদানে দেশের সব ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন একসঙ্গে, এক অভাবিত ঐক্যের বন্ধনে সূচনা হলো এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব। ১৭ জুলাই ঘোষিত হলো কমপ্লিট শাটডাউন, দেশজুড়ে ১৮ জুলাই ১৯ জেলায় হাসিনা বাহিনীর গুলিতে একদিনে শহীদ হলেন ২৯ জন, ওইদিন সন্ধ্যায়-তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী পলক এবং হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে বন্ধ হলো ইন্টারনেট সেবা। হার না মানা তারেক রহমান সাধারণ ফোনে আন্দোলন অব্যাহত করার নির্দেশ দিলেন ছাত্রদলসহ দলের সব নেতাকর্মীকে। ১৯ জুলাই হাসিনা বাহিনীর গুলিতে সারা দেশে প্রাণ দিলেন ৬৬ জন। রাতে জারি করা হলো কারফিউ। ২০ জুলাই কারফিউয়ের প্রথম দিনে শহীদ হলেন ২১ জন, অব্যাহত রইল কারফিউ, গ্রেফতার হলেন বৈষমবিরোধী আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম। দলের মহাসচিব থেকে শুরু করে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় সবাই তখন কারারুদ্ধ। নেতৃত্বশূন্যতাকে অগ্রাহ্য করে তারেক রহমান সাধারণ নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিলেন ‘নেতৃত্ব নিন-নেতৃত্ব দিন’। ২৬ জুলাই তিনি আহ্বান জানালেন জাতীয় ঐক্য ও সরকার পতনের। ১ আগস্ট এলো জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার হাস্যকর অসহায় প্রজ্ঞাপন। ২ আগস্ট অনুষ্ঠিত হলো শিক্ষক, অভিভাবক আর সমাজের সর্বস্তরের মানুষের দ্রোহযাত্রা। এদিকে শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, যাত্রাবাড়ীতে চলছে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের বিরামহীন সংঘর্ষ। উত্তপ্ত আগস্টের সূচনায় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পতন দেওয়াললিখনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, সারা দেশ তখন হাসিনা পতনের এক দফায় ঐক্যবদ্ধ। ৩ আগস্টের বৃষ্টি ভেজা বিকালে শহীদ মিনার চত্বর পরিণত হলো প্রতিবাদের জনারণ্যে। বুক চিতিয়ে সামনে দাঁড়ানো আবু সাঈদ আর ওয়াসিমরা মানুষের মন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে মৃত্যুর ভয়। ৪ আগস্ট হাসিনা বাহিনীর নৃশংসতায় শহীদ হলেন ৯৩ জন। পাগলপ্রায় শেখ হাসিনার নির্দেশে আগস্টের প্রথম দিন থেকেই হেলিকপ্টার থেকে নির্বিচার গুলিবর্ষণ করা হয়েছে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর। রাজপথ দখলে নেওয়া লাখো কোটি মানুষ দমনে উন্মাদ স্বৈরাচার নির্বিচার গুলিবর্ষণ করতে পারে, কিন্তু অগ্রযাত্রা ঠেকাতে পারে না। হত্যাকারী পুলিশ কর্মকর্তার নির্লজ্জ অসহায় স্বীকারোক্তি একটাকে মারি-একটাই মরে, বাকিডা যায় না।

বুক চিতিয়ে প্রাণ দেওয়া আবু সাঈদদের মৃত্যুঞ্জয় দৃঢ়তা আর অসীম সাহস তখন সঞ্চারিত সবার মাঝে। আর তাই শীর্ণ তরুণী তার সব শক্তিকে রূপান্তরিত করে পুলিশের ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে দু-হাতে পথ রোধ করে। দুর্বার সাহসে অকুতোভয় মীর মুগ্ধ টিয়ার গ্যাসে জ্বলে যাওয়া দৃষ্টিশক্তিকে প্রাণপণে বাঁচিয়ে রেখে গ্যাসের মেঘের মাঝে চিৎকার করে বলতে পারে ‘পানি লাগবে? পানি?’। একেবারে শেষ নিশ্বাস অবধি মৃত্যু অবধারিত জেনেও আহত বন্ধুকে টেনে নিতে চায় জীবনের নিরাপত্তার কাছাকাছি-হতাশ ব্যর্থ চেষ্টায়। স্কুটির ডালায় পানির বোতল নিয়ে বুলেট বৃষ্টির মাঝে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারেন সাধারণ গৃহবধূ। কাঁঠালের কোয়া নিয়ে ছুটতে পারেন বস্তিবাসী বোনেরা, যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের অবিশ্রান্ত গুলি বৃষ্টির মাঝেও রাজপথ না ছাড়ার প্রত্যয়ে অবিচল থাকে ফুটপাতের সাধারণ মানুষ। ৬ তারিখ ঘোষিত মার্চ টু ঢাকা কৌশলগত কারণে এগিয়ে এলো ৫ আগস্টে, ঐতিহাসিক পাঁচ আগস্ট জনতার অনিবার্য বিজয় জেনে সেনাবাহিনী সাফ জানিয়ে দিল-‘কোনো গুলি নয়’। পুরো বাংলাদেশ সেদিন জনতার দখলে, স্বৈরাচারের দম্ভোক্তি কলঙ্কিত হলো লজ্জাজনক প্রাণভয়ে পালিয়ে যাওয়া অমোচনীয় আজন্ম কালিমায়। সামনে রইল এক অপার সম্ভাবনা আর প্রত্যাশার বাংলাদেশ।

সাঈদ-ওয়াসিম-মুগ্ধের বুক পেতে দেওয়া আত্মাহুতি, আশুলিয়ায় রিকশা ভ্যানের ওপরে অগ্নিদগ্ধ লাশের সারি, আর্মার্ড গাড়ি থেকে অসম্মানজনকভাবে ফেলে দেওয়া শহীদের মৃতদেহের প্রতি সামান্য কৃতজ্ঞতাবোধ থাকলে নতুন করে বাংলাদেশ গড়ার এমন সুবর্ণ সুযোগ হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। রিমান্ড যাত্রী সন্তানের প্রতি স্নেহময়ী মায়ের প্রত্যয়ী আশ্বাস সত্যি হোক।

“ভয় নেই বাংলাদেশ আমরা আছি

রক্তাক্ত শপথে বন্দী-

রক্তের শেষ বিন্দু রইল তোমার জন্য জন্মভূমি,

তোমার স্বাধীনতা, তোমার সার্বভৌমত্বের জন্য,

আগামী প্রজন্মের জন্য এ আমার দৃপ্ত অঙ্গীকার।”

অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল : আহ্বায়ক, বিএনপি মিডিয়া সেল

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম