মহররম পালন করে থাকেন যে হিন্দু ব্রাহ্মণরা
শুভজ্যোতি ঘোষ
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইসলামের ইতিহাসে কারবালা যুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম। জনশ্রুতি আছে ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ বা হিজরি ৬১ সনের সেই যুদ্ধে নবী মুহাম্মদের (সা.) দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন ভারতের এক হিন্দু সারস্বত ব্রাহ্মণ-যার নাম রিহাব সিধ দত্ত। শুধু নিজে যুদ্ধ করাই নয়, তার সাত ছেলেও নাকি ইউফ্রেটিস নদীর তীরে সেই যুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেন। প্রায় ১৪০ বছর আগে লেখা ‘বিষাদ সিন্ধু’ উপন্যাসে কারবালার যুদ্ধকে বাংলা সাহিত্যেও অমর করে গেছেন মীর মশাররফ হোসেন। সেই কাহিনিতে রিহাব সিধ দত্তের উল্লেখ না থাকলেও ভারতীয় উপমহাদেশে আজও বহু মানুষ আছেন, যারা সেই বিবরণে সম্পূর্ণ আস্থা রাখেন এবং নিজেদের সেই ব্রাহ্মণ বীরের বংশধর বলেই পরিচয় দেন।
শত শত বছর পর আজও রিহাব সিধ দত্তের সেই ‘উত্তরসূরি’রা ইমাম হোসাইনের প্রতি শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা পাশে বাঁধা পড়ে আছেন, যে কারণে তারা নিজেদের ধর্ম না পালটালেও শিয়া ইসলামের অনেক রীতিনীতি, বিশেষ করে মহররমে আশুরা পালন করেন এখনো। পাকিস্তানের সিন্ধুপ্রদেশ, ভারতের পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, কাশ্মীর, দিল্লি ও লখনৌর নানা প্রান্তে এখনো বেশ কয়েক হাজার হুসাইনি ব্রাহ্মণ বসবাস করে। কোনো কোনো গবেষক জানান, আরব উপদ্বীপেও বেশকিছু হুসাইনি ব্রাহ্মণ আছে।
কারবালার যুদ্ধে রিহাব সিং দত্ত ও তার ছেলেদের বীরত্বকে স্মরণ করে প্রাচীন হিন্দুস্তানি কবি লিখে গেছেন :
‘ওয়াহ্ দত সুলতান
হিন্দু কা ধরম
মুসলমান কা ইমান
আধা হিন্দু, আধা মুসলমান!’
সেই পরম্পরা অনুসরণ করেই আজও ভারতে হুসাইনি ব্রাহ্মণরা তাদের জীবনচর্যায় হিন্দু ও মুসলিম-দুই ধর্মেরই কিছু কিছু রীতি রেওয়াজ, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন করে থাকেন। আজও সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরের আশুরা পালনে মহররমের তাজিয়াতেও তাদের অনেকেই যোগ দেন। উল্লেখ্য, ভারতের পরলোকগত বলিউড অভিনেতা সুনীল দত্ত ছিলেন হুসাইনি ব্রাহ্মণ। তার অভিনেত্রী স্ত্রী নার্গিস দত্তও ছিলেন ‘হাফ-মোহিয়াল’। তাদের সন্তানরা, তারকা অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত ও রাজনীতিক প্রিয়া দত্তও পারিবারিক সূত্রে একই সম্প্রদায়ভুক্ত।
এছাড়াও হিন্দি-উর্দু ভাষার সাহিত্যিক সাবির দত্ত, আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্ট নেত্রপ্রকাশ ভোগ, সুপরিচিত সাংবাদিক বরখা দত্ত, ধ্রুপদি সংগীতশিল্পী সুনীতা ঝিংরান-ভারতের হুসেইনি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মধ্যে এরকম বহু ‘সেলেব্রিটি’ আছেন, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। ‘মোহিয়াল’রা হিন্দু ব্রাহ্মণদের মধ্যে যোদ্ধার জাত হিসাবে পরিচিত ছিলেন, আজও তাদের বংশধররা অনেকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে থাকেন।
ইন্দো-ইসলামিক স্কলার গুলাম রসুল দেহলভির মতে, হুসাইনি ব্রাহ্মণরা হলেন প্রাচীন ভারত ও ইসলামি বিশ্বের মধ্যে সম্পর্কের এক
‘অতুলনীয় নিদর্শন’।
দেহলভি বিবিসিকে বলেন, ‘‘স্বৈরাচারী ইয়াজিদ যখন ইমাম হোসাইনকে কারবালার প্রান্তরে সপরিবারে মেরে ফেলার চক্রান্ত করলেন, তখন তিনি বিশ্ব মানবতার উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছিলেন ‘হাল মিন নাসিরিন ইয়ানসুরনা!’-যার অর্থ কেউ কি কোথাও আছে, যারা আমাদের সাহায্য করতে পারে?” সেই ডাকে সাড়া দিলেন সুদূর ভারতের (হিন্দুস্তান) রাজা সমুদ্রগুপ্ত, যিনি ইমাম হোসাইনের পুত্র আলি আকবরের কাছ থেকেও সাহায্যের আবেদন জানিয়ে পাঠানো একটি বার্তা পেয়েছিলেন। ইউফ্রেটিস (ফোরাত) নদীর পানি আটকে দিয়ে ইয়াজিদের সেনারা ততক্ষণে ইমাম হোসাইন ও তার সংগীদের মৃত্যুর পথ তৈরি করে ফেলেছে।
এদিকে রাজা সমুদ্রগুপ্ত তার বীর সৈন্যদের একটি দলকে কারবালায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, যার নেতৃত্বে ছিলেন বীর যোদ্ধা রিহাব সিধ দত্ত-যিনি পাঞ্জাবের একজন মোহিয়াল ব্রাহ্মণ। গুলাম রসুল দেহলভির কথায়, ‘কিন্তু দত্ত ও তার সাহসী সেনারা যখন কারবালায় পৌঁছলেন, ততক্ষণে ইমাম হোসাইন শহীদ হয়েছেন। ক্ষোভে-দুঃখে ভারত থেকে যাওয়া ওই সৈন্যরা স্থির করলেন যে নিজেদের তরবারি দিয়েই তারা নিজেদের শিরশ্ছেদ করবেন।’ ‘কিন্তু ইমামের আরব অনুরাগীরা তাদের বোঝালেন, এভাবে জীবন নষ্ট না করে তারা বরং জনাব-ই-মুখতারের বাহিনীতে যোগদান করুন, ইমামের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার লড়াইতে শামিল হোন!’
রিহাব দত্ত ও তার বাহিনী ঠিক সেটাই করেছিলেন-ইয়াজিদের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধ করে প্রাণোৎসর্গ করেছিলেন।
পরে বাহিনীর যারা বেঁচে যান, তাদের কেউ কেউ সেখানেই রয়ে যান-কেউ আবার মাতৃভূমি ভারতে ফিরে আসেন। কারবালার যে অংশটিতে এ বীর ব্রাহ্মণরা বসতি করেছিলেন, সেটি পরিচিত ছিল ‘আদ-দায়ার-উল-হিন্দিয়া’ নামে, জানাচ্ছেন গুলাম রসুল দেহলভি।
আরবে আগে থেকেই ছিলেন হিন্দুরা? হিন্দি সাহিত্যের বিখ্যাত কথাকার মুন্সী প্রেমচন্দও তার ১৯২৪ সালে প্রকাশিত বিখ্যাত নাটক ‘কারবালা’তে রিহাব সিধ দত্তের সাহসিকতার কথা লিখে গেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইমাম হোসাইনের সমর্থনে ভারত থেকে যাওয়া ‘সাতজন যোদ্ধা’র অসমসাহসী বীরত্বের কথা কারবালার লোকগাথার অংশ হয়ে উঠেছিল। তবে এ হিন্দু ব্রাহ্মণরা ভারত থেকে কারবালার যুদ্ধে অংশ নিতে গিয়েছিলেন, নাকি আরবে আগে থেকেই ছিলেন এটি নিয়েও নানারকম মত আছে।
গবেষক শিশির কুমার মিত্রের আকরগ্রন্থ ‘দ্য ভিশন অব ইন্ডিয়া’তে জানানো হয়েছে, ‘আরাবিয়া’ বা আরব পেনিনসুলাতে বিপুলসংখ্যক হিন্দু কারবালা যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই বসবাস করত। তিনি আরও লিখেছেন, আফগানিস্তানেও টানা ১২০ বছর ধরে (৮৩০-৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ) একটি হিন্দু ‘দত্ত’ রাজবংশের শাসন কায়েম ছিল-যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সোমানন্দ দত্ত। তবে এ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা কারবালা যুদ্ধেরও দেড়শ বছর পরের কথা।
১৯৮৬ সালে ‘দ্য হিস্ট্রি অব মোহিয়ালস’ নামে আর একটি বই লেখেন ইতিহাসবেত্তা পিএন বালি, যিনি নিজেই ছিলেন হুসাইনি ব্রাহ্মণ। তিনি দাবি করেছেন, হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতের চরিত্র অশ্বত্থামা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তার পিতা দ্রোণাচার্যের করুণ মৃত্যুর পর উদাস হয়ে ঘুরতে ঘুরতে আরাবিয়াতে চলে আসেন এবং সেখানেই স্বেচ্ছা নির্বাসনে দিন কাটাতে থাকেন। এ অশ্বত্থামার বংশধরদের সূত্র ধরেই আরবে হিন্দুদের বসতি, আর তারাই পরে ইমাম হোসাইনের আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন-এমনও মতবাদ প্রচলিত আছে।
আবার পাকিস্তানের সুপিরিচিত শিয়া পণ্ডিত মৌলানা হাসান জাফর নকভি মনে করেন, কারবালার যুদ্ধ নিয়ে যেমন অনেক ধরনের বিবরণ পাওয়া যায়, তেমনি হুসাইনি ব্রাহ্মণদের উৎপত্তি নিয়েও একাধিক ‘ভার্সন’ আছে। বছরকয়েক আগে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হুসাইনি ব্রাহ্মণদের নিয়ে করা একটি প্রজেক্টের গবেষকদের তিনি বলেছিলেন, ইমাম হোসাইনের আহ্বানে রাজস্থান (যেটা তখন সিন্ধু প্রদেশের অংশ ছিল) থেকে হিন্দু রাজা কারবালায় যুদ্ধ করতে গেলেও তিনি পৌঁছানোর আগেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়-আর রাজা কারবালাতেই মারা যান। সঠিক ইতিহাস নিয়ে অস্পষ্টতা আছে অবশ্যই-কিন্তু কারবালায় যাওয়া সেই হিন্দু ব্রাহ্মণদের বংশধররা যে আজও ইমাম হোসাইনের প্রতি ভালোবাসাতেই হিন্দু হয়েও বহু মুসলিম রীতিনীতি পালন করে যাচ্ছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
‘শিয়া মজলিশেও যেতাম, পালন করতাম নবরাত্রিও’
সত্তরোর্ধ্ব প্রবীণ কে কে বালি থাকেন লখনৌর হুসাইনাবাদ রোডে। রাস্তাটি প্রাচীন এ নবাবি শহরের বড়া ও ছোটা ইমামবড়াকে সংযুক্ত করেছে। বালি নিজেও হুসাইনি ব্রাহ্মণ। টেলিফোনে কে কে বালি বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনের এই রাস্তা দিয়েই প্রতি বছর মহররমের জলুস যায়। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত আমি নিজেও সেই জলুসে অংশ নিয়েছি, এখন আর বয়সের জন্য পারি না।’ তবে তিনতলা বাড়ির জানালা থেকেই তার চোখে পড়ে মহররমের ব্যানার-ফেস্টুন। সেগুলো দেখেই এখন সাধ মেটান তিনি। ছোটবেলা থেকেই কে কে বালির আরেকটা শখ ছিল, ইমাম হোসাইনকে নিয়ে যেখানে যত কবিতা বা পঙ্ক্তি লেখা পেতেন-সেগুলো ভালো লাগলেই নিজের নোটবুকে সঙ্গে সঙ্গে লিখে নিতেন। এখনো তার সেই অভ্যাস বজায় আছে। বিবিসিকে তিনি আরও জানান, হুসাইনি ব্রাহ্মণরা যে একটি গর্বিত বীর বংশের সন্তান, সে গল্প তারা বাপ-দাদাদের কাছে চিরকাল শুনে এসেছেন। ‘আমরা শিয়াদের সঙ্গে শহরের শাহনাজাফ ইমামবড়ার মজলিশেও যেতাম, আবার বাড়িতে হিন্দুদের নবরাত্রি অনুষ্ঠানও পালন করতাম’, বলতে বলতে গলা ধরে আসে প্রৌঢ়ের। তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন, হুসাইনি ব্রাহ্মণদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে উভয় ধর্মের রীতিনীতি উদযাপনের এ প্রথা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। ‘এই প্রজন্মে অভ্যেসটা কমে আসছে’।
একই ধরনের আক্ষেপ শোনা গেল রাধিকা বুধওয়ারের কণ্ঠেও। তিনি এখন অস্ট্রেলিয়াতে করপোরেট ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত। হুসাইনি ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে রাধিকা বলেন, ‘আগে আমাদের অনেক স্বজনকে দেখতাম যারা রমজান মাসে বেশ কয়েকটা রোজা রাখতেন, আবার মহররম মাসে আশুরাও পালন করতেন।’
‘স্বজনদের মধ্যে এমনও অনেকে ছিলেন, যারা মাঝে মধ্যে মসজিদেও যেতেন, জুমার নামাজে পর্যন্ত অংশ নিতেন।’ তবে তাদের প্রজন্মে এসে এ রীতিগুলো ক্রমশ অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, সে কথা স্বীকার করতেও তার দ্বিধা নেই। তিনি আরও জানাচ্ছেন, যেহেতু অনেক হুসাইনি ব্রাহ্মণ পরিবারই সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের ছেলেমেয়েরা ক্যান্টনমেন্টের মন্দির-মসজিদ-গির্জা সমন্বিত একটা উদার ও সহিষ্ণু পরিবেশে বেড়ে ওঠে-তাই তাদের মধ্যে ‘ধর্মীয় ভেদাভেদও এমনিতেই খুব কম!’
রাধিকা বুধওয়ারের কথায়, ‘আমরা দাদি নানিদের কাছে খুব ছোট্টবেলা থেকে কারবালা যুদ্ধের গল্প শুনে আসছি।’
‘আমাদের পূর্বপুরুষ তার শ্রদ্ধার নায়কের জন্য একবারও না ভেবে নিজের সাত ছেলের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন, এটা হুসাইনি ব্রাহ্মণদের জন্য খুব গোপন গর্বের জায়গা।’ সেই অনুভব থেকেই তারা হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মহররম বা দীপাবলি একসঙ্গে পালন করতে পারেন বলে রাধিকার বিশ্বাস।
কারবালার স্মৃতিতে গলার কাছে কাটা দাগ?
অধুনা চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা বিপিন মোহন আবার শোনালেন হুসাইনি ব্রাহ্মণদের আর একটি ধারণার কথা। ‘আমরা জেনে এসেছি খাঁটি হুসাইনি ব্রাহ্মণদের গলার কাছে একটি কাটা দাগ থাকে, তলোয়ার বা ছুরি দিয়ে কেটে দিলে যেমনটা হয়।’ ‘কারবালার যুদ্ধে রিহাব সিধ দত্ত ও তার সেনারা যখন প্রাণ দিতে নিজেদের গলার কাছে তলোয়ার ধরেছিলেন, তখন থেকেই নাকি বংশানুক্রমে সেই দাগ তাদের গলার কাছে রয়ে গেছে’, বিবিসিকে বলছিলেন তিনি। এটা হয়তো নিছকই জনশ্রুতি। কিন্তু বিপিন মোহন জানাচ্ছেন, তাদের বংশেও অনেকেরই গলার কাছে ওরকম অদ্ভুত কাটা দাগ ছিল। দাদার ছিল, আবার বাপ-ছেলেরও!
হুসাইনি ব্রাহ্মণরা তাদের ধর্মচর্চা বা জীবনযাপনে এতটাই স্বতন্ত্র ও অভিনব, তাদের নিয়ে এরকম ‘মিথ’ বা গল্পকথা তৈরি হওয়াও বোধহয় বিচিত্র নয় একেবারেই। আবার ধরা যাক আরেক হুসাইনি ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে সুনীতা ঝিংরানের কথা। প্রবীণ এ ধ্রুপদি সংগীতশিল্পী ঠুমরি, খেয়াল, দাদরা ও গজলের জন্য সুপরিচিত-গানের জন্য ভারতের জাতীয় স্তরেও বহু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তার ছেলে ঐশ্বর্য ঝিংরান বলেন, ‘শুনেছি ইসলামে সংগীতচর্চা নিষিদ্ধ। আমার মা কিন্তু তার গানের মাধ্যমেই চিরকাল তার প্রিয় শ্রীকৃষ্ণ ও প্রিয় ইমাম হোসাইনকে একসঙ্গে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে এসেছেন, কখনো কোনো সমস্যা হয়নি!’
হুসাইনি ব্রাহ্মণদের নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধি ঐশ্বর্য আরও মনে করেন, তারা আসলে ইমাম হোসাইনের আদর্শে অবিচল আস্থা রাখেন, তার আত্মত্যাগে শ্রদ্ধা রাখেন-সেখানে ধর্মবিশ্বাসে হিন্দু হলেও কিছু আটকায় না। রাধিকা বুধওয়ার, ঐশ্বর্য ঝিংরান, বিপিন মোহন বা কে কে বালি পৃথিবীর নানা প্রান্তে থাকেন, তাদের বয়সও আলাদা আলাদা। কিন্তু তাদের সবার এক সুরে বলতে কোনো দ্বিধা নেই-‘আমরা হিন্দু ব্রাহ্মণ হতে পারি, কিন্তু খুব ব্যতিক্রমী ব্রাহ্মণ-কারণ আমরা ইমাম হোসাইনের ভক্ত!’
বিবিসির সৌজন্যে
শুভজ্যোতি ঘোষ : সাংবাদিক
