Logo
Logo
×

বাতায়ন

খালেদা জিয়ার সেই বাসভবনে হোক গণতন্ত্র স্তম্ভ

Icon

আবদুল আউয়াল ঠাকুর

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খালেদা জিয়ার সেই বাসভবনে হোক গণতন্ত্র স্তম্ভ

ফাইল ছবি

সেই বাড়িটি এখন আর নেই। দুঃশাসকের রুদ্ররোষে মাটির ওপরের স্থাপত্য মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে হারিয়ে যায়নি। তা এখনো রয়ে গেছে অযুতকোটি দেশপ্রেমিকের হৃদয়ে, স্মৃতিতে। এই সেই বাড়ি যেখান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে এক মহীয়সী নারী জীবনে সব পার্থিব সুখ, ভোগ ত্যাগ করে কেবল দেশ ও জাতি রক্ষার্থে জীবনপণ বাজি রেখে লড়াই করেছেন এবং শেষতক বিজয়ী হয়েছেন। গণতন্ত্রের প্রায় ডুবে যাওয়া তরিকে গভীর অন্ধকারের খাদ থেকে আলোর মুখে নিয়ে এসেছেন। কতটা ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা থাকলে শেষতক বিজয়ী হওয়া যায় তার অনন্য রেকর্ড তৈরি করেছেন খালেদা জিয়া। শুধু তিনি নন, ওই বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের, যিনি বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। জননন্দিত সেই রাষ্ট্রপতিকে হত্যার পর পর্যায়ক্রমে দল ও জাতিকে আধিপত্যবাদের করালগ্রাস থেকে উদ্ধারে সবচেয়ে কণ্টকাকীর্ণ পথে পা বাড়ান খালেদা জিয়া। এ পথে তিনি হেঁটেছিলেন এমন এক সময়ে যখন দেশের তথাকথিত বাঘা-বাঘা ঝানু রাজনীতিবিদ অর্থ অথবা ক্ষমতার মোহে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন অথবা বিক্রি হওয়ার জন্য দরদাম করছিলেন। যারা এক সময় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার হাত ধরে দেশ সেবার শপথ নিয়েছিলেন তাদের একটি বড় অংশ শহীদ জিয়ার হাতেগড়া বিএনপি ছেড়ে অন্য পথ খুঁজছিলেন। সেই দুর্বিষহ দিনগুলোর সাক্ষী হয়ে আছে এদেশের জনগণ এবং সেনানিবাসের সেই বাড়িটি। ২০১০ সালে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়াকে এ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। একদল বিপথগামী আধিপত্যবাদের দোসর জননন্দিত প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যার পরই গুঞ্জন উঠেছিল দেশে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে। চারদিকে হাহাকার ধ্বনি উঠেছিল। এক ভয়াবহ রাজনৈতিক শূন্যতার দিকে দেশ যাচ্ছে বলে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিলেন। মনে করা হয়েছিল, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে। এ বাস্তবতায় বিপুল ভোটে বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেও তাকে ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হয়নি। নানা কৌশলে সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক শাসন জারি করেন। এ সামরিক শাসনকে সমর্থন করে আওয়ামী লীগ। ফলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে, মারাত্মক এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে মোড় নেয়।

রাষ্ট্রপতি জিয়ার শাহাদতের পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার প্রথমে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে বিএনপির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ’৮২-এর ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মাত্র তিন মাস আগে নির্বাচিত সরকারকে অপসারণ করে ক্ষমতা দখল করেন। বিএনপির কিছু নেতা এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিলে ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারের সঙ্গে বিএনপিতেও কিছুটা নিষ্ক্রিয়তা আসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার অনুরোধে ’৮২ সালের ৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়া বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে আসেন। অনেকেরই মনে থাকার কথা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার শাহাদত উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া সেনাভবনের বাড়িতে যে আয়োজন করেছিলেন, সেখানেই তিনি অনেকটা রাজনীতিতে আসার দিকে ঝুঁকছেন বলে মনে করা হয়েছে। বিএনপি তথা গোটা জাতিকে আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষার বজ্রকঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ’৮৩ সালে মার্চে তিনি দলে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এসবই হয়েছে তার সেনাভবনে আলোচ্য বাসায় থেকে।

খালেদা জিয়া রাজনীতি শুরু করেন এক ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ বাস্তবতার মধ্য দিয়ে। এরশাদের পুরো ৯ বছর ছিল দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন। ’৮২-এর ৩০ মে শহীদ জিয়ার প্রথম শাহাদতবার্ষিকীতে জিয়ার মাজারে খালেদা জিয়া প্রথম ভাষণ দেন। সেই সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার লক্ষ্যে শহীদ জিয়ার মাজার প্রাঙ্গণে ছাত্রদলকে শপথ পড়ান। এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানের ঘোষিত শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে ছাত্রদলের নেতৃত্বে নতুন আন্দোলনের সূচনা হয়। ঐতিহাসিক ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসে স্বৈরাচারবিরোধী প্রথম মিছিল করে ছাত্রসমাজ। তারা স্লোগান তোলে : এরশাদের পতন চাই। ৭ নভেম্বর খালেদা জিয়া ছাত্রদলকে শপথ পড়ান। পরদিন মিছিল হয়। ১১-১২ ডিসেম্বর ছাত্রদলের বর্ধিতসভা ও ১৩ ডিসেম্বর শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ধর্মঘট হয়। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সর্বসম্মতভাবে বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য খালেদা জিয়াকে অনুরোধ জানানো হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে জয়নাল, জাফর, কাঞ্চন, আইয়ুব, দীপালি, ফারুকসহ সাতজন আত্মাহুতি দেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গুলিতে ১৫ জন নিহত হন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে। ১৯ তারিখ মৌন মিছিল এবং ২০ তারিখে সারা দেশে হরতাল হয়। কর্নেল অলিসহ বিএনপির অনেক নেতা গ্রেপ্তার হন। সারা দেশে এক সন্ত্রাসী বাস্তবতার জন্ম দেওয়া হয় সরকারি উদ্যোগে। এতসবের মধ্যেও সকাল সাড়ে ৮টায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একটি মৌন মিছিল শহীদ মিনারে যায়। তাকে প্রধান অতিথি করে জাসাসের আলোচনা হয়। ঘরোয়া রাজনীতির সুযোগে দেশের জনগণকে সচেতন করা ও জাগিয়ে তোলার জন্য দেশব্যাপী সফরে বের হন বেগম জিয়া। এসবের মধ্যেই দেশে শুরু হয় রাজনীতির নয়া মেরুকরণ। তা রূপ নেয় জোটের রাজনীতিতে। দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে বিএনপির নেতৃত্বে সাত দল দলীয় জোট গঠিত হয়। জোটের প্রথম সভা রাজধানীর পুরান ঢাকায় হয়েছিল। সেই জনসভায় খালেদা জিয়ার প্রতি জনতার আস্থা ও বিশ্বাসের এক অভূতপূর্ব নজির স্থাপিত হয়। ঘরোয়া রাজনীতির মধ্যে হওয়া এ সভায় নেতারা ছিলেন দোতলার ব্যালকনিতে, আর জনতা ছিল সড়কে। খালেদা জিয়ার কথা শোনার জন্য হাজার হাজার মানুষ অধীর আগ্রহে বসেছিল গভীর রাত পর্যন্ত।

যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে ৫ দফা প্রণীত হয়। এ কর্মসূচির মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এক সাহসী কর্মসূচি ছিল সচিবালয় ঘেরাও। এ দিনটি যারা প্রত্যক্ষ করেছেন তারা জানেন, খালেদা জিয়া কতটা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে সেদিনে ঘেরাও কর্মসূচিতে যে ট্রাকটি ব্যবহার করা হয়েছিল সেটির সামনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন সে সময়ের রাজনৈতিক মিত্র কাজী জাফর আহমদ আর পেছনে সাংবাদিক হিসাবে ছিলাম আমি ও কাজীম রেজা। সচিবালয়ের চারদিকে কয়েক স্তরে সেনাবাহিনীর পাহারা। দেখে মনে হচ্ছিল, সেনাবাহিনীই যেন সচিবালয় দখলে নিতে চাচ্ছে। যতদূর মনে পড়ে, প্রেস ক্লাবের বিপরীত গলির মুখ দিয়ে খালেদা জিয়াকে বহনকারী ট্রাকটি একেবারে সচিবালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। অবাক চোখে সবাই দেখল, খালেদা জিয়া কথা রেখেছেন। তিনি সচিবালয়ে অবস্থান নিয়েছেন। এর পরের দৃশ্য ছিল অভিভূত হওয়ার মতো। তিনি বাসস ভবনের কাছে এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান নিলেন। যারা সচিবালয় ঘেরাও করতে এসেছিল, তারা সবাই মানব প্রাচীর তৈরি করল। সেখানে অবস্থানরত জনতাকে হঠাতে র‌্যাঙ্ক ব্যাচহীন সামরিক কর্মকর্তা ঔদ্ধত্য কণ্ঠে বলল : ‘সরে যাও, নয়তো গুলি করব।’ সমবেত জনতা বুক খুলে অফিসারকে বলল, ‘কর গুলি কর।’ কর্মকর্তা ওয়্যারলেস মেসেজে বলল, ‘ওরা বলছে গুলি কর, আমরা কী করব?’ বিপরীত প্রান্তের কথা শোন না গেলেও পরিস্থিতির আর অবনতি হয়নি। এ ঘটনার পর খালেদা জিয়াকে এক মাসের আটকাদেশ দিয়ে বাসভবনে অন্তরীণ রাখা হয়। এর পরের আলোচনা বিস্তৃত। লোভ, লালসা, প্রলোভনের যে লোল জিহ্বা এরশাদ তথা ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ বিস্তার করেছিল, তার আনুষ্ঠানিক টোপ আসে ক্ষমতা হস্তান্তর নয়, নির্বাচন।

এর পরের আলোচনা গোটা দেশবাসীর কাছে এখনো জ্বলজ্বলে থাকার কথা। এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে না যাওয়ার প্রকাশ্য অঙ্গীকার করার পরও ১৫ দলীয় জোট নেত্রী শেখ হাসিনা অংশগ্রহণ করেন। এ নির্বাচন সম্পর্কে ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, দিল্লির ইচ্ছায় শেখ হাসিনা নির্র্বাচনে গিয়েছেন। এ নিয়ে খবর প্রকাশের অভিযোগে এরশাদ সাহেবের নির্দেশে দৈনিক দেশের রিপোর্টার হিসাবে আমার এবং বার্তা সম্পাদক বোরহান আহমেদ ও চিফ রিপোর্টার সৈয়দ জাফর আহমদের চাকরি গিয়েছিল। আমাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। ওই নির্বাচন টেকেনি। টালবাহানা করে আরও একটি নির্বাচন হয়েছিল। সেটিও টেকেনি। জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে। মনে করা হযেছিল, বাংলাদেশের মাটি থেকে স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে। এরপরের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। খালেদা জিয়ার বিএনপি ’৯৬ সালের নির্বাচনেও জয়ী হতে পারত। কিন্তু ষড়যন্ত্র তা হতে দেয়নি। তবে ২০০১ সালে কোনোভাবেই তাকে ঠেকানো যায়নি। অবশ্য ঘাপটি মারা ফ্যাসিস্টরা স্থায়ীভাবে গণতন্ত্র হত্যার জন্য ওতপেতে ছিল। সে সুযোগ তারা পেল ১/১১-এর পর। আজকের প্রেক্ষাপট সেখানেই। ১/১১-এর ষড়যন্ত্রকারীরা খালেদা জিয়া তথা বিএনপি ধ্বংস এবং দেশকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার যে নীলনকশা প্রণয়ন করেছিল তার অংশ হিসাবেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়। গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই মামলার জের ধরেই আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা তাকে আদালতিক অবিচারের মাধ্যমে গ্রেফতার করেছিল। এই কাহিনি এতটাই নির্মম যে, যার ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ছিল হিমালয় পাহাড়ের মতো অবিচল সেই নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো। তাকে কাবু করতে তার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার সিরিজ তৈরি করা হয়েছিল। তবুও খালেদা জিয়া ছিলেন শান্ত, ধৈর্যশীল।

সভ্যতা, ভদ্রতা, শালীনতা সবকিছু পরিহার করে খালেদা জিয়াকে তার চল্লিশ বছরের বসতবাড়ি থেকে নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় উচ্ছেদ করা হলো। উচ্ছেদের পর তৎকালীন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বললেন, উচ্ছেদ করে দিয়েছি। আসলে তাকে নয়, তিনি উচ্ছেদ করেছেন এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগারটিকে। ওই উচ্ছেদ মেনে নেওয়ার নয়। জনগণ মেনে নেয়নি। আজ সময় এসেছে এ নিয়ে নতুন করে ভাবার। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার যে দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিয়েছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সে দায়িত্ব তিনি হস্তান্তর করেছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়ার হাতে। রাষ্ট্রপতি জিয়ার শাহাদতের পর সব ঝুঁকিকে মেনে নিয়ে স্বেচ্ছায় সে দায়িত্ব মাথা পেতে গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের মাধ্যমে মূলত সেই ঐতিহ্যকেই উচ্ছেদ করা হয়েছে। এটি জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা বিগত আমলের মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হয়েছে। আদালত তাকে নির্দোষ ঘোষণা করেছেন। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, বিগত দিনে রাষ্ট্রের দুর্বৃত্তায়ন, সীমাহীন অন্যায়, অবিচারের শিকার হয়েছেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাউদ্দীন দোলন এই অবিচারের প্রতিকারে প্রতীকী ক্ষতিপূরণের দাবি করেছেন। জবাবে বিচারকরা সিনিয়র আইনজীবীদের কাছে জানতে চেয়েছেন, কীভাবে এই ক্ষতিপূরণ কর যায়? বিষয়টি নতুন সম্ভাবনার আলোকে বিবেচনায় দেখার দাবি রাখে। খালেদা জিয়ার মামলায় উচ্চ আদালত যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তার অন্যতম হলো খালেদা জিয়াকে তার সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ। যা করা হয়েছে তা পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। তবে নতুন বংশধরদের জন্য কিছু বার্তা রাখা জরুরি-যা গণতন্ত্র রক্ষার প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হবে বা হতে পারে।

’৫২-এর ফেব্রুয়ারিতে যেখানে গুলি হয়েছিল সেটি এখন শহীদ মিনার, ’৭১-এ যেখানে বুদ্ধিজীবী নিধন করা হয়েছিল, সেটি এখন বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। সে কারণেই জনতার দাবি হচ্ছে, খালেদা জিয়া ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার স্মৃতি বিজড়িত ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্মৃতি স্মারক হিসাবে সেনানিবাসের ওই বাড়িটিতে গণতন্ত্রের স্মারক হিসাবে গণতন্ত্র স্তম্ভ নির্মাণ করা জরুরি। এটি ফ্যাসিস্টের করা অবিচারের প্রতীক হিসাবেও বিবেচিত হবে। গণতন্ত্র রক্ষায় আপসহীন ভূমিকার জন্য খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পদকে ভূষিত করা হোক। পাশাপাশি বলা দরকার, গণতন্ত্রকে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ সরকারি ব্যবস্থা বলে মনে করা হয়। এ বিবেচনায় বাংলাদেশে শান্তি স্থাপনে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়া জীবনের ওপর সর্বাত্মক ঝুঁকি নিয়ে যে অবদান রেখেছেন সেজন্য তাকে আন্তর্জাতিক মহলের নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। এর ফলে তার প্রতি করা অপরাধের খানিকটা হলেও হয়তো ক্ষতিপূরণ হতে পারে।

আবদুল আউয়াল ঠাকুর : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম