প্রসঙ্গ : রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন
ড. শাহ জে মিয়া
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা কি না সরাসরি প্রতিষ্ঠানের বা ইন্ডাস্ট্রির কর্মপদ্ধতির বা Core Business Process-এর ইনোভেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত ইনোভেশনের মাধ্যমে বিজনেস প্রসেস বা প্রক্রিয়াগুলোকে স্বয়ংক্রিয় এবং বুদ্ধিমান বানানোর চেষ্টা করা হয়। এ বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন এবং এর থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ক্রমাগত আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে চলেছে। সারা বিশ্বের সচেতন বা জ্ঞানসমৃদ্ধ মানুষ এসব বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জন করে প্রতিনিয়ত তাদের প্রতিষ্ঠানের আধুনিকীকরণ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সম্পন্ন করে চলেছে। জাতি হিসাবে আমি মনে করি, আমাদের বাংলাদেশের মানুষেরও এসব বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। যাতে তারা এ ডিজিটাল যুগে গ্লোবাল ভিলেজের সচেতন নাগরিক হতে পারে। তথ্যপ্রবাহের এই যুগে আমাদের টেকনোলজির ব্যবহার এবং সম্যক জ্ঞান আহরণ করা অত্যন্ত জরুরি। আমার লেখার মাধ্যমে আমি বাংলাদেশের আপামর মানুষের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে টেকনোলজির জ্ঞানের বিস্তার ঘটাতে চাই, যাতে তারা নিজেদের বিশ্বের বুকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে। রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন যেহেতু আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের এ সময়ের আলোচিত বিষয়, সেহেতু এই লেখার মাধ্যমে এ বিষয় সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করছি।
রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন-আরপিএ নামেই বেশি পরিচিতি লাভ করেছে, যা মূলত এক ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানব কর্মীদের পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ সম্পাদনে পদ্ধতিকে সহজ করে এবং মানুষের সংশ্লিষ্টতাকে কমিয়ে আনে। আরপিএ ব্যবহারের মাধ্যমে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে বা ইন্ডাস্ট্রিতে স্মার্ট অটোমেশনের মাধ্যমে তথ্য আহরণ, ফরম পূরণ, ফাইল স্থানান্তর এবং আরও অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজ নিয়মানুগ (Systematic) পদ্ধতিতে সম্পাদন করা যায়।
বিশ্ববিখ্যাত টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান IBM-এর মতে, যে কোনো ইন্ডাস্ট্রিতে পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলো একীভূত ও সম্পাদন করার আরপিএ সিস্টেমগুলো অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস বা API এবং ব্যবহারকারী ইন্টারফেস বা UI-কে একত্রিত করে থাকে। আরপিএ মানুষের বিভিন্ন কাজ করার প্রক্রিয়াগুলোকে অনুকরণ করে প্রথমেই এর প্রসেস সম্পর্কহীন সফটওয়্যার সিস্টেমগুলোয় একত্রিত করে ফেলে। তারপর এটি বিভিন্ন প্রসেস বা কার্যকলাপের মধ্যে তথ্যের লেনদেনের স্বায়ত্তশাসিত পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়ার সম্পাদন নিশ্চিত করে। এ ধরনের অটোমেশন নিয়মভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া বেশি পরিমাণে সম্পাদন করে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও অন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের জন্য ডিজিটাল রূপান্তর প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত মানুষের উপার্জন বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের ওপর উচ্চতর রিটার্ন (ROI) তৈরি করে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিযোগিতামূলকভাবে টিকে থাকার জন্য আরপিএ টুলসগুলোকে ধারাবাহিকভাবে স্মার্টকরণের কোনো বিকল্প নেই, স্মার্ট টাস্ক অটোমেশন তৈরির জন্য টুলগুলোকে বুদ্ধিমান হতেই হবে। এ ধরনের অটোমেশন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন মেথড ব্যবহার করে তাদের কার্যকারিতা প্রসারিত করে, যেমন মেশিন লার্নিং, প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ এবং কম্পিউটার ভিশন এর অন্তর্ভুক্ত। স্মার্টকরণের ধারাবাহিকতায় বুদ্ধিমান প্রক্রিয়া অটোমেশনের জন্য আরপিএ-র সাধারণ নিয়মভিত্তিক সিস্টেমের চেয়ে বেশি কিছু প্রয়োজন। আপনি আরপিএ-কে ‘করণীয়’ কাজ হিসাবে ভাবতে পারেন, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং যথাক্রমে ‘চিন্তাভাবনা’ এবং ‘শেখার’ বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি ডেটা ব্যবহার করে অ্যালগরিদমগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়, যাতে সফটওয়্যারটি দ্রুত এবং আরও দক্ষ উপায়ে কাজগুলো সম্পাদন করতে পারে।
আরপিএ কার্যকারিতার দিক থেকে ইন্ডাস্ট্রি বা প্রতিষ্ঠানের প্রক্রিয়াচালিত অংশের পরিপূরক। এটি সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সব নিয়ম মেনে চলে না। এর গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যটি হলো, এটি প্রসেস বা প্রক্রিয়ার ইনোভেশনের কথা বলে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডেটা দ্বারা প্রশিক্ষিত ও পরিচালিত হয়ে মানুষের ব্যবহার অনুকরণ করার কথা বলে। অন্য কথায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বুদ্ধিমত্তা অনুকরণ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে; কিন্তু আরপিএ শুধু মানুষের নির্দেশিত কাজগুলো প্রতিলিপি করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং আরপিএ-এর ব্যবহার মানুষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনে, তবে তারা কীভাবে প্রক্রিয়াগুলো স্বয়ংক্রিয় করবে, তা নির্ভর করবে ওই ইন্ডাস্ট্রি বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে। যাই হোক, আরপিএ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একে অপরের পরিপূরক। আরপিএ-এর কাজগুলোকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আরও সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয় করতে ও আরও জটিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিচালনা করতে সহায়তা করতে পারে।
আরপিএ সাধারণত কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনোলজি ব্যবহার করে। এ টেকনোলজিগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে আইওটি বা ‘ইন্টারনেট অফ থিংস’। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ডেটা সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকরণের জন্য সংরক্ষণ করে হয়ে থাকে। এছাড়া ‘ডেটা অ্যানালিটিক্স’ টেকনোলজি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের প্রেডিকশন, প্রেসক্রিপশন ও ডেসক্রিপশন সংক্রান্ত কার্য সম্পাদন হয়। এর ফলে ডেটা থেকে অনেক ধরনের ইনসাইট তৈরি করা যায়, যা মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাজে আসে। আরও রয়েছে ‘ব্লকচেইন’ টেকনোলজি। এটি ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার সিস্টেম ব্যবহার করে সব তথ্য স্তরে স্তরে এমনভাবে সাজিয়ে রাখে, যা সবার পক্ষে দেখা সম্ভব এবং তথ্যগুলো ব্যবহার করে কাজ করা সম্ভব; কিন্তু চাইলেই পুরোনো তথ্য পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এরপরে আরপিএ ইনোভেশনে ব্যবহৃত হওয়া জনপ্রিয় টেকনোলজি তথ্যগুলোকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কর্মসম্পাদন করে, যা মানুষ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সাহায্য করে। এছাড়াও ওয়েব অথবা নন-ওয়েব বেজড, স্বয়ংক্রিয় মেশিন লার্নিং, কম্পিউটার ভিশন, আরএফআইডি এবং আরও অন্য টেকনোলজি রয়েছে, যেগুলো ইমেজ প্রসেসিং বা ভিডিও স্ট্রিমিংমূলক ডেটা নিয়ে কাজ করে থাকে। এসব টেকনোলজিগুলোই আরপিএ-এর জন্য পরিপূরক এবং স্বয়ংক্রিয় আরপিএ তৈরির পূর্বশর্ত। আরপিএর কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে কল সেন্টার অপারেশন, ডেটা মাইগ্রেশন/এন্ট্রি, ফর্ম প্রক্রিয়াকরণ, দাবি প্রশাসন (Claim Administration), কর্মচারী অনবোর্ডিং, হেল্প ডেস্ক, সময়সূচি ব্যবস্থা, ব্যয় ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।
আরপিএ-চালিত রোবোট ব্যবহারে আমরা সামগ্রিকভাবে বেশকিছু সুবিধা ভোগ করে থাকি। যেমন- ১. মানব নিরাপত্তা : আরপিএ চালিত রোবোটগুলো বিশেষ সুরক্ষা ছাড়াই মানব শ্রমিকদের পাশে স্থাপন করা যেতে পারে। এটি অটোমেশন স্থাপনের সামগ্রিক খরচ হ্রাস করে এবং একই সঙ্গে একই কাজ বারবার সম্পাদনের ফলে শ্রমিকদের আঘাত বা ইনজুরির সম্ভাবনাকে হ্রাস করে। ২. নির্ভরযোগ্যতা : মানুষ যখন পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ করে, তখন ত্রুটি অনিবার্য, কারণ কর্মীরা বিভ্রান্ত এবং ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে এবং মানুষের পক্ষে একই শারীরিক কাজ বারবার একইভাবে করা অত্যন্ত কঠিন। আরপিএ চালিত রোবোটগুলো এ সমস্যা দূর করে, কারণ তারা একই প্রক্রিয়া বারবার পুনরাবৃত্তি করতে পারে, কোনো বিচ্যুতি ছাড়াই। ৩. উৎপাদনশীলতা : আরপিএ-চালিত রোবোটগুলো ঐতিহ্যবাহী রোবোট প্রতিরূপের মতো, ২৪/৭ কাজ করে থাকে, যা ব্যস্ত প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এবং যেখানে প্রয়োজন, শ্রমিকের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম করে। ৪. উন্নত কর্মচারী মনোবল : কর্মীদের থেকে পুনরাবৃত্তিমূলক, উচ্চ-ভলিউম কাজের চাপ কমিয়ে, আরপিএ মানুষদের আরও চিন্তাশীল এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর মনোনিবেশ করতে দেয়। কাজের এ পরিবর্তন কর্মীদের মানসিক অবস্থার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ৫. নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ : প্রতিষ্ঠানগুলো যখন RPA রোবোটগুলোকে নির্দিষ্ট কর্মপ্রবাহ ও নিয়ম অনুসরণ করার জন্য প্রোগ্রাম করে, তখন সেগুলো মানুষের ত্রুটি কমাতে পারে, বিশেষ করে এমন কাজের ক্ষেত্রে, যেখানে নির্ভুল হওয়া প্রয়োজন, যেমন নিয়ন্ত্রক মান। আরপিএ একটি অডিট ট্রেলও প্রদান করতে পারে, যা অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা এবং সমস্যাগুলো আরও দ্রুত সমাধান করা সহজ করে তোলে। ৬. বিদ্যমান সিস্টেমগুলো প্রতিস্থাপন না করা: আরপিএ সফটওয়্যার অন্তর্নিহিত সিস্টেমগুওলোয় কোনো ব্যাঘাত ঘটায় না, কারণ সফটওয়্যারগুলো বিদ্যমান অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ওপর স্থাপন করা হয়ে থাকে। সুতরাং, প্রতিষ্ঠানগুলো এমন পরিস্থিতিতে আরপিএ বাস্তবায়ন করতে পারেন, যেখানে তাদের কাছে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (API) বা গভীর ইন্টিগ্রেশন করতে সমস্যা হয় না।
বর্তমানে যখন ডিজিটাল প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন (IR ৪.০ এবং ৫) এ মুখ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে, তখন প্রতিষ্ঠানগুলো আরপিএ ব্যবহারে এখনো বেশকিছু চ্যালেঞ্জের এর মুখোমুখি হচ্ছেন। গবেষকরা এখন পর্যন্ত যেসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সেগুলো হলো-১. নমনীয়তার অভাব: আরপিএ পদ্ধতি ও রোবোটগুলো পূর্বনির্ধারিত নিয়ম অনুসারে নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার জন্য ডিজাইন করা হয়ে থাকে। তারা সৃজনশীল অর্থাৎ প্রোগ্রামের বাইরে চিন্তা করতে পারে না। ২. ভালো আইটি অবকাঠামো: আরপিএ কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য, আইটি অবকাঠামো স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী হতে হবে। যদি আইটি অবকাঠামোতে কোনো সমস্যা থাকে, তবে এটি কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। ৩. উচ্চ বিনিয়োগ : প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরপিএ স্থাপনের খরচ বেশি হতে পারে। ৪. স্বচ্ছতার অভাব : প্রাথমিকভাবে আরপিএ কীভাবে কাজ করে এবং তাদের কাজের ওপর এর প্রভাব বোঝা মানুষের জন্য কঠিন হতে পারে।
যদিও আরপিএ সফটওয়্যার একটি প্রতিষ্ঠান বা ইন্ডাস্ট্রি বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে, তবে কিছু বাধা রয়েছে, যেমন সাংগঠনিক সংস্কৃতি, প্রযুক্তিগত সমস্যা এবং স্কেলিং। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কর্মী ছাঁটাই : আরপিএ সিস্টেমগুলো স্থাপনের কারণে ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ কিছু কর্মীর কাজ প্রতিস্থাপন হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা তাদের চাকরিকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে। সাংগঠনিক সংস্কৃতি যদিও আরপিএ নির্দিষ্ট কিছু কাজের ভূমিকার প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করবে, এটি আরও জটিল কাজগুলো মোকাবিলা করার জন্য নতুন ভূমিকাগুলোতে বৃদ্ধি ঘটাবে, কর্মীদের উচ্চ-স্তরের কৌশল এবং সৃজনশীল সমস্যা সমাধানের ওপর মনোনিবেশ করতে সক্ষম করবে। এ কারণে চাকরির ভূমিকার মধ্যে দায়িত্ব পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংস্থাগুলোকে শেখার এবং উদ্ভাবনের সংস্কৃতি প্রচারের সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
অটোমেশন এবং ডিজিটাল রূপান্তর প্রকল্পগুলোয় সফল ফলাফলের জন্য একটি কর্মী বাহিনীর অভিযোজনযোগ্যতাও গুরুত্বপূর্ণ হবে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শিক্ষিত করতে তাদের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলোতে বিনিয়োগ করতে হবে। যদিও আরপিএ একযোগে একাধিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করতে পারে; কিন্তু নিয়ন্ত্রক আপডেট বা অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের কারণে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ইন্ডাস্ট্রির জন্য স্কেল করা কঠিন হতে পারে। ফরেস্টারের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ৫২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের মালিক দাবি করেছেন, তাদের আরপিএ প্রোগ্রাম স্কেল করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। উন্নত প্রোগ্রাম হিসাবে যোগ্যতা অর্জনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের ১০০ বা তার বেশি সক্রিয় কর্মক্ষম রোবোট থাকতে হবে, তবে খুব কম আরপিএ উদ্যোগই প্রথম ১০টি রোবোটের বাইরে অগ্রসর হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলতে পারি, আরপিএ হচ্ছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনের রূপান্তর। আরপিএ টুলসগুলো অনেক ধরনের টেকনোলজি ব্যবহার করে থাকে, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বা ইন্ডাস্ট্রিতে যুগোপযোগী ইনোভেশনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় অটোমেশন নিয়ে আসা সম্ভব। আরপিএ প্রতিষ্ঠানে মানুষের কাজের গতিকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। যদিও এসব বিষয়ে জ্ঞান এখনো অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের কাছে অজানা বা পরিষ্কার না, কারণ এখনো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে এসব বিষয় নিয়ে। তাই বাংলাদেশের তরুণ সমাজ যদি এ টেকনোলজি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আগেভাগেই ধারণ করতে পারে, তাহলে তারা পৃথিবীর বুকে নিজেদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে সহজেই নিয়ে যেতে পারবে।
ড. শাহ জে মিয়া : প্রফেসর অব বিজনেস অ্যানালিটিক্স অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড এআই, নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
