|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের কোনো একটা স্থানে কোনো একটা ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটল, তারপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় একশ্রেণির মানুষ, যারা ওই বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশের মানুষকে উত্তেজিত করার পথটা বেছে নিল। এরপর ঘটল নীতিহীন ও সুযোগসন্ধানী মানুষের একজোট হওয়ার পালা। তারা দেশের রাজধানী তো বটেই, দেশের বিভিন্ন স্থানেও জোটবদ্ধ হয়ে হামলে পড়ল কোনো মানুষের বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি দেশের প্রশাসনের মূলকেন্দ্র সচিবালয়েও। তারা ভাঙচুর, হামলার মাধ্যমে অফিস-আদালতের কাজকর্ম স্তব্ধ করে ফেলে, সবাইকে জিম্মি করে তাদের অনৈতিক দাবি আদায় করে নিল। গত বছরের আগস্টের সফল গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা যেমন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ ও পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি, পেয়েছি কথা বলা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, একই সঙ্গে পেয়েছি এ কুৎসিত ‘মব কালচার’। এ ‘মব সংস্কৃতি’ আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত সব শুভ রীতিনীতিকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে।
২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান ভেঙে পড়ল ঢাকা মহানগরীর উপকণ্ঠে উত্তরা মডেল টাউনে অবস্থিত ‘মাইলস্টোন’ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর। স্কুলটি ছুটি হওয়ার সময়ে যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে তখন স্কুলে উপস্থিত প্রায় সব ছাত্রছাত্রী স্কুল কম্পাউন্ডেই ছিল। আরও উপস্থিত ছিলেন স্কুলের শিশুদের বাসায় নিতে আসা অভিভাবকরাও। ফলে এ ঘটনায় বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী আহত ও নিহত হলো। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের দুর্ঘটনা এটাই প্রথম, যা বিশ্বের ইতিহাসেও বিরল। আর আকস্মিক এ ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলার জন্য কোনো ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব না হওয়ার কারণে এসব ঘটনায় প্রাণহানি রোধ করাও সম্ভব নয়। দ্রুত উদ্ধার কাজ করা এবং অতিদ্রুত আধুনিক চিকিৎসা প্রদান করা গেলে প্রাণহানি কিছুটা কমানো সম্ভব। কিন্তু গত সাড়ে পনেরো বছরের স্বৈরাচারী অপশাসনে রিক্ত এ দেশের সরকারের পক্ষে রাতারাতি চিকিৎসাব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা সম্ভব না হওয়ায় আমরা এ পর্যন্ত ৩৫ ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অন্য অনেককে হারিয়েছি; যে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে চিকিৎসকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
দেশে সংঘটিত আরও বিভিন্ন ঘটনার মতো এ হৃদয়বিদারক ঘটনাও এ মব সৃষ্টিকারীদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সারা দেশ যখন শোকে মুহ্যমান, তখনই দেশের শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর লক্ষ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এ দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার। প্রথমত, দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের গুম করা লাশ ফেরত দেওয়া এবং দ্বিতীয়ত, তারা দুর্ঘটনা-পরবর্তী দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত কেন গভীর রাতে দেওয়া হলো, সে কারণে ‘মব’ সৃষ্টি করে সচিবালয় ঘেরাও করে শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে এবং নানা উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকে। বস্তুত, তাদের এ ঘেরাওয়ের কারণে দেশের প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানে সব কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে তারা সচিবালয়ের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনার পর সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত উপস্থিত পুলিশ ও সেনাসদস্যরা তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে সচিবালয় থেকে বের করে দেয় এবং এ ভাঙচুরে নেতৃত্বদানকারী দু-একজনকে গ্রেফতার করে। এই যে ‘মব’ সৃষ্টির মাধ্যমে অন্যায় প্রতিবাদ এবং অন্যায্য দাবি আদায়ের চেষ্টা, তা ঢাকা ছাড়িয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জেলায়ও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানেও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে নগরীকে স্তব্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
২১ জুলাইয়ের মর্মান্তিক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি চক্র প্রথম মুহূর্ত থেকে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছে। ওই স্কুল বা কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বিপর্যস্ত অবস্থায় তাদের অনভিজ্ঞ চোখে যা দেখেছে, অর্থাৎ ১০০-২০০ মানুষ অকুস্থলে নিহত হয়েছে, সেই ভিত্তিহীন কথাকে কেন্দ্র করে তারা শিক্ষার্থীদের লাশ গুমের অভিযোগে সরকারকে দায়ী করে প্রচারণা চালাতে থাকে। তার সঙ্গে যুক্ত হয় মৃত শিক্ষার্থীদের ‘হাড়-হাড্ডি’কে বিমানবাহিনীর সদস্যদের বস্তায় করে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ। বস্তুত বিমানবাহিনীর সদস্যরা তাদের দাপ্তরিক প্রয়োজনে বিধ্বস্ত বিমানের খণ্ডিত অংশগুলোকে বস্তায় ভরে তাদের ঘাঁটিতে নিয়ে গেছেন। আর নিহত ছাত্রছাত্রীদের দেহের অংশগুলোকে তারা ওই ক্লাসের ‘রোল নম্বর’ অনুযায়ী, সাজিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছেন, যাতে তাদের শনাক্তকরণে সুবিধা হয় এবং শিশুদের দেহের ওই অংশগুলোকে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিতকরণ ও পরবর্তীকালে দাফনের জন্য তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা যায়। এসবই আমরা জেনেছি সংবাদমাধ্যম, ফেসবুক ও ইউটিউবের নানা ভিডিও থেকে; কিন্তু দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করা যাদের লক্ষ্য, তারা এ সংবাদগুলোর খণ্ডিত অংশকে ব্যবহার করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে দেশের জনগণকে খেপিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ধরনের স্কুল-কলেজে যারা পড়াশোনা করে, তারা সমাজের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা মানুষ, যাদের পরিবার থেকে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর করা হয় মোটামুটি প্রতি ঘণ্টায়। এ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা সন্তানদের লাশ গুম করার কোনো সুযোগই নেই। তারপরও কুচক্রীমহল পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থির করার লক্ষ্যে এ ধরনের ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়েছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, দেশের একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা পর্যন্ত বলে বসলেন, প্রায় ১০০ জন মানুষ এ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে! কিন্তু কোন সূত্র থেকে এ তথ্যটা তিনি পেলেন, তা বললেন না। কথাটা বলার আগে তার কথার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা-ও তিনি ভাবলেন না।
বিমান দুর্ঘটনার পরদিন যখন সরকারের দুজন উপদেষ্টা ‘মাইলস্টোন’ কলেজ সরেজমিন পরিস্থিতি দেখতে যান, তখন তাদের অবরুদ্ধ করে ফেলে ওই কলেজের ছাত্ররাই। তাদের দাবি ছিল গুম করা সব লাশ তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। যেখানে লাশ গুম করার কোনো সুযোগই ছিল না, সেখানে তারা গুম করা লাশ কোথায় পাবেন? তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবও, যিনি কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, ‘দেশে কোনো মব নাই, তারা প্রেসার গ্রুপ মাত্র!’ সে যাই হোক, সরকারের দুজন উপদেষ্টাসহ প্রেস সচিব সাহেব তার ভাষায় ‘প্রেসার গ্রুপের’ হাতে প্রায় ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থেকে কলেজের পেছন দরজা দিয়ে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন।
২২ জুলাই প্রচারিত সময় টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা গেল, চট্টগ্রামে আন্দোলনরত একজন শিক্ষার্থী বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা চারবারেরও বেশি প্রধান উপদেষ্টাকে ফোন করেছেন পরবর্তী দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে আরও দুয়েকজন উপদেষ্টাও নাকি একই উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টাকে ফোন করেছেন, যা তিনি রিসিভ করেননি। এরপর রাত ২টা ৩০ মিনিটে ‘শিক্ষা উপদেষ্টার’ বাসায় গিয়ে তার অনুমোদন এনে পরীক্ষা পেছানোর প্রজ্ঞাপন জারি করতে হয়েছে। পরীক্ষা পেছানোর প্রজ্ঞাপন জারির পেছনে ঘটনা কী ঘটেছে, তা সাধারণ মানুষের জানার কথা নয়। সরকার যে বক্তব্য জানানোর জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, ছাত্রদের সেটাই জানার কথা এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা। কিন্তু ছাত্ররা কীভাবে জানল কোন উপদেষ্টা কতবার প্রধান উপদেষ্টাকে ফোন করেছেন? কিংবা তিনি যে ফোন রিসিভ করেননি, সেটাই বা তারা কীভাবে জানল? তাহলে কি সরকারের ভেতরের কোনো একটা মহল সরকারপ্রধানকে বিব্রত ও বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যেই এ তথ্যটা তাদের জানিয়েছে? তাদের সম্মতিতেই কি এ মব তৈরি করা হলো? এ প্রশ্নগুলোর জবাব পাওয়া যাবে না। তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে। ২৩ জুলাই চাঁদপুরে এক সভায় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নিয়োগ ড. ইউনূসের স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ।’ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সারা দেশের মানুষ যখন কোনো কোনো উপদেষ্টার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার এপিএস ও পিও শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করে পদচ্যুত হয়েছেন, তখন এ নেতারাই কিন্তু নীরব থেকেছেন। এখন তাহলে কী এমন ঘটল, যে কারণে ড. ইউনূসকে স্বজনপ্রীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হচ্ছে?
১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির শীর্ষনেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যে সাক্ষাৎ হয় এবং উভয়পক্ষের মধ্যে ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর প্রথম ভাগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, তাতে দেশের কয়েকটি উচ্চভিলাষী রাজনৈতিক দল ক্ষুব্ধ হয়। তারা মৌখিকভাবেই শুধু তাদের বিক্ষোভের কথা জানায়নি, তার মাঠের রাজনীতির ধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশও ঘটিয়েছে। পরবর্তীকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস যখন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন, তখন এ দলগুলো মনে করা শুরু করে যে, তাদের সৃষ্ট ‘নতুন বন্দোবস্ত’ ভণ্ডুল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে তারা তখন থেকেই নির্বাচনকে রুখে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করেছে। ড. ইউনূসের ফেব্রুয়ারি-২০২৬-এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় সংকল্পের কারণে ব্যক্তি ড. ইউনূসও এখন এ অশুভ চক্রের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ছোটখাটো ঘটনাকে ভাইরাল করে তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা সামাজিক মাধ্যমে বারবার তুলে ধরছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত সভা-সমাবেশে তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের নেতা সম্পর্কে অবাঞ্ছিত ও বিতর্কিত মন্তব্য করে ওইসব রাজনৈতিক দলকে উসকানি দিচ্ছে, যাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটানো যায়। এপ্রিল পর্যন্ত দেশে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করেছে শুধু পতিত আওয়ামী লীগ ও তার সমর্থক ঔপনিবেশিক শক্তি। বর্তমানে সচেতনভাবে বা স্বীয় স্বার্থে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের বিজয়ীপক্ষের কেউ কেউ। এর ফলে দেশের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যেতে বসেছে। ২৩ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস দেশের ১৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এক বৈঠককালে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন যে, পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বাস্তবিকই এ পরাজিত শক্তি গত বছরের আগস্ট থেকেই ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এ মুহূর্তে তাদের ষড়যন্ত্র বেশি দৃশ্যমান হওয়ার কারণ তারা নির্বাচন ভণ্ডুল করার ষড়যন্ত্রে নতুন অংশীদার পেয়েছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দেশের সবকটি গণতন্ত্রকামী দলের মধ্যে একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী ন্যূনতম একটি ঐকমত্য সৃষ্টি করা জরুরি ছিল, যে কথা দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা গত ১০ মাস ধরে বলে চলেছেন। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং মাঠের স্বল্প জনসমর্থনের একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার অভিলাষের কারণে এ ঐকমত্য গঠন বা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের উদগ্র বাসনার কারণে এ ঐকমত্য সৃষ্টি প্রায় অসম্ভব একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাহলে বিকল্প কী? বিকল্প হতে পারে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে দেওয়া। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে অন্য কোনো বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া আর সম্ভব হবে না। মনে রাখা জরুরি, সামনের দিনগুলোতে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণে এ অশুভ চক্র দেশে আরও বড় কোনো অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে ফেলতে পারে। এখন থেকেই সতর্ক না হলে, সামনের দুর্যোগ মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে পারে।
জিয়া আহমদ, এনডিসি : সাবেক সরকারি কর্মচারী ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
