Logo
Logo
×

বাতায়ন

হালফিল বয়ান

নিভে গেল নকশাল আন্দোলনের শেষ শিখাটিও

Icon

ড. মাহফুজ পারভেজ

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নিভে গেল নকশাল আন্দোলনের শেষ শিখাটিও

১৯৬৭ সালে শুরু হওয়া ভারতের নকশাল আন্দোলন গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সে বছরের ২৫ মে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার নকশালবাড়ি গ্রামে পুলিশের গুলিতে মারা যায় দুই শিশুসহ ১১ জন। জোতদার ও পুলিশের যৌথ অত্যাচারের বিরুদ্ধে নকশালবাড়ি আন্দোলন সশস্ত্র হয়ে ওঠে। এ আন্দোলনে যোগ দেন হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষিত তরুণ, কৃষক, মজুর। চীনের পিকিং রেডিও নকশালবাড়ির উত্থানকে ঘোষণা করে ‘ভারতের আকাশে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ’ শিরোনামে।

ভারতীয় রাষ্ট্রযন্ত্রের বর্বর অত্যাচার এবং নাগরিক সংস্কৃতির ‘বাবু কমরেড’দের সুবিধাবাদী আচরণের কারণে সম্ভাবনাময় নকশাল আন্দোলন বৈপ্লবিক বিজয় অর্জনের বদলে পরাজয়ের দিকে ধাবিত হয়। সেই আন্দোলনের শেষ অগ্নিশিখা কমরেড আজিজুল হক কলকাতার বিধাননগরের এক হাসপাতালের সফেদ বিছানা ছেড়ে চলে গেলেন মৃত্যুর শেষযাত্রায়। ২১ জুলাই তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তার চিরবিদায় শুধু এক ব্যক্তিত্বের জীবনাবসান নয়, এক সংগ্রামী চেতনার অবসান।

আজিজুল হক ছিলেন নকশাল আন্দোলনের অন্যতম নেতা, যে আন্দোলন ছিল ভারতের বঞ্চিত, শোষিত শ্রেণির দীর্ঘস্থায়ী বেদনার সশস্ত্র প্রকাশ। তাদের পথ ছিল সহিংস। এ আন্দোলন সমাজে জমির প্রশ্ন, কৃষকের অধিকার ও শ্রেণিবৈষম্যের মতো ইস্যুগুলোকে সামনে এনেছিল। রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে এর প্রভাব আজও অনুভূত হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয়।

নকশাল আন্দোলন শুরু হয় ১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দরিদ্র গ্রামীণ এলাকা নকশালবাড়ি থেকে। এ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষকের জমির অধিকার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণের অবসান এবং একটি বিপ্লবী সমাজ গঠন। এর নেতৃত্বে ছিলেন চারু মজুমদার, কানু সান্যাল, আজিজুল হক, জঙ্গল সাঁওতাল ও অন্যান্য বিপ্লববাদী বামপন্থি। আন্দোলনের আদর্শ ছিল মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদভিত্তিক।

নকশাল আন্দোলনে চীনের প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। এ প্রভাবকে বোঝা যায় তিনটি প্রধান দিক থেকে-

১. মাওবাদী আদর্শের প্রভাব : নকশালপন্থিরা চীনের নেতা মাও সেতুংয়ের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ছিলেন। বিশেষ করে ‘মাওয়ের সাংস্কৃতিক বিপ্লব’, ‘গ্রাম থেকে শহরের দিকে বিপ্লব ছড়িয়ে দেওয়া’-এসব ধারণা নকশালপন্থিরা গ্রহণ করেন। তারা মনে করতেন, ভারতের বাস্তবতায় এ মাওবাদী পথই সঠিক বিপ্লবের রূপরেখা।

২. রাজনৈতিক সমর্থন : চীন আনুষ্ঠানিকভাবে নকশালপন্থিদের অস্ত্র বা সরাসরি সহায়তা দেয়নি বলে জানা যায়, তবে আন্তর্জাতিক বামপন্থি বিপ্লবী আন্দোলনের অংশ হিসাবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি নকশাল আন্দোলনকে আদর্শগতভাবে সমর্থন করেছিল। চীনের কিছু পত্রিকায় ও বক্তব্যে এ আন্দোলনের প্রশংসা পাওয়া যায়। নকশালপন্থিরাও সোভিয়েত ইউনিয়নের বদলে চীনের প্রতি পক্ষপাত দেখান।

৩. ভারত-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রভাব : ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অবনতির ফলে ভারতের সরকার চীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা চীনা আদর্শে অনুপ্রাণিত যে কোনো গোষ্ঠীকে শত্রু হিসাবে দেখত। ফলে নকশাল আন্দোলনকারীদের প্রতি দমনপীড়ন আরও বেড়ে যায়। এবং তাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্দয় আক্রমণ মোকাবিলা করতে গিয়ে অকাতরে রক্ত দিতে হয়।

সামগ্রিকভাবে, নকশাল আন্দোলন ভারতের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বামপন্থি গণ-আন্দোলন, যা চীনের মাওবাদী আদর্শ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। যদিও আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি রাজনৈতিক বা সামরিক সহযোগিতা ছিল সীমিত, তবুও আদর্শগত স্তরে চীনের প্রভাব ছিল গভীর ও অনস্বীকার্য। এটি ভারত-চীন সম্পর্ক ও উপমহাদেশীয় রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে রয়েছে। জেলখানায় নির্যাতিত হয়ে মূল নেতা চারু মজুমদারের মৃত্যু, কিছু বামপন্থির আপসকামিতা এবং সরকারি নিপীড়নে আন্দোলন ব্যর্থ হলেও ‘নকশালবাদ’ রাজনৈতিক মতাদর্শ রূপে ব্যাপক আলোড়ন জাগাতে সক্ষম হয়েছিল।

নকশালবাড়ি আন্দোলনের অন্যতম মুখ সদ্য প্রয়াত আজিজুল হকের জন্ম ১৯৪২ সালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমার রণমহল গ্রামে। বিশাল জমিদারি ছিল তাদের। রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িয়ে নিজের বাবার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে গরিবদের মধ্যে জমি বিলিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। জীবনভর ছিলেন একজন লড়াকু, সংগ্রামী নেতা। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো মাথা নত করেননি। আপস বা আত্মসমর্পণ করেননি। নীতির পথ থেকে ভ্রষ্ট হননি।

কমরেড আজিজুল কলকাতায় পড়াশোনা করতে এসে একের পর এক বামপন্থি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন তিনি। খাদ্য আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়ে আহত হন। বারবার কারাবরণও করেন। গণ-আন্দোলনে জ্যোতি বসুর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেও আগাগোড়া বাংলার সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক লাইনের বিরোধিতা করে গিয়েছেন আজিজুল হক। নেতা হিসাবে মেনেছেন বিপ্লবী চারু মজুমদারকেই।

চারু মজুমদারের মৃত্যুর পর ১৯৭৮ সালে নিশীথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে সিপিআই (এমএল) দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তিনি। তাদের নেতৃত্বে সিপিআই (এমএল) উত্তর ও দক্ষিণ বাংলার কিছু গ্রামীণ এলাকায় এবং বিহারে একটি অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠন করে বলে জানা যায়। চারু মজুমদারের মৃত্যুর পর নকশালবাড়ি আন্দোলনের হাল ধরে সুন্দরবন এলাকায় সংগঠনের কাজে হাত দেন আজিজুল। ১৯৭০ সালে ব্যাপক পুলিশি ধরপাকড়ের মধ্যে গ্রেফতার হন। জেলের মধ্যেও প্রতিবাদ চালিয়ে যান আজিজুল। ১৯৭৭ সালে জেল থেকে মুক্তি পান তিনি। জেলের বাইরে বেরিয়েই তৈরি করেন চারু মজুমদারপন্থি সিপিআই (এমএল) দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তারপর দীর্ঘ পাঁচ-ছয় বছর এ দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় কমিটি গেরিলা পদ্ধতিতে লড়াই চালায় বাংলা ও বিহারের বিস্তীর্ণ এলাকায়। ১৯৮২ সালে ফের গ্রেফতার করা হয় তাকে।

আজিজুল হকের জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে কারাগারে। ১৯৭০ সালে পার্বতীপুরম নকশাল ষড়যন্ত্র মামলায় প্রথমবার কারাবন্দি হতে হয়েছিল তাকে। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার সব রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল। আজিজুলও মুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৮২ সালে ফের গ্রেফতার হন তিনি। ১৯৮৬ সালে কারাবন্দি অবস্থায় তার ওপর অত্যাচারের রিপোর্ট প্রকাশ পায় সংবাদপত্রে। জেলে তার স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটে। ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য জেলমুক্ত হন তিনি।

আজিজুল হকের লেখা ‘কারাগারে ১৮ বছর’ নকশাল আন্দোলন ও গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের ভারতীয় রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল বলে মনে করা হয়। জেলে তার ওপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তার রচিত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাভিত্তিক বইয়ে উঠে এসেছে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের নির্মম চিত্র-সকালে লাঠির আঘাতে ঘুম ভাঙা, দুপুরে পচা খাবার, রাতে অবিরাম মানসিক নির্যাতন। সহবন্দি কমরেডদের হত্যা দেখতে দেখতেই তিনি লিখে গেছেন ইতিহাসের এক জ্বলন্ত অধ্যায়। এ বই তার পক্ষ থেকে একটি দলিল হয়ে দাঁড়িয়েছে-ভারতে রাজনৈতিক বন্দিদের ওপর চালানো নিষ্ঠুরতার এক নিঃশব্দ সাক্ষী। জেলের মধ্যেই রচনা করেছিলেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘কারাগারে ১৮ বছর’, যা পুলিশের মহাফেজখানায় যাওয়ার আগেই সাংবাদিক অশোক দাশগুপ্ত এবং ‘আজকাল’-এর এক তৎপর রিপোর্টারের উদ্যোগে জেল থেকে বাইরে এনে প্রকাশিত হয়।

শেষ জীবনে দীর্ঘ সংগ্রাম ও নির্যাতনের প্রভাবে অসুস্থ হওয়ায় তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে এসেছিলেন। তবে বামপন্থি চেতনাকে আমৃত্যু বহন করেছেন। তিনি বলতেন, স্রোতের বিরুদ্ধে হাঁটাই বামপন্থা। শারীরিক কারণে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে এলেও জীবনের প্রায় শেষদিন পর্যন্ত সচল ছিল তার কলম। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় কলাম, নিবন্ধ লিখে গিয়েছেন অন্যায়, দুর্নীতি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। আজকাল, প্রতিক্ষণের মতো নানা প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা একাধিক বই। কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভাষা শহীদ স্মারক সমিতি’। বিপ্লবী রাজনীতিতে জারিত হওয়ায় আজিজুল হকের লেখার মধ্যে এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্যে ছিল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ছাপ এবং দ্রোহের বারুদ।

আজিজুল হকের জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানের পরিসরে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে সংগ্রাম, বিদ্রোহ, আত্মত্যাগের এক মহত্তম ইতিহাস। তার চিরপ্রস্থান একটি যুগের অবসান। তিনি শুধু একজন প্রাবন্ধিক বা রাজনৈতিক কর্মী নন, ছিলেন এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির জীবন্ত দলিল। নকশাল আন্দোলন থেকে শুরু করে জেলজীবনের অভিজ্ঞতা, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন-সবকিছুই তার চিন্তা ও লেখায় প্রতিফলিত হয়েছে। প্রতিবাদ, সহ্যশক্তি এবং আদর্শের প্রতি অটল বিশ্বাসই তাকে গতানুগতিক মধ্যবিত্ত বামপন্থি ও সুবিধাবাদী রাজনীতিকদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কলম হাতে লড়াই চালিয়ে গেছেন বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে। তার মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তির অন্তর্ধান নয়, এক সংগ্রামী চেতনার অবসান। তার লেখা, তার আদর্শ, আর স্মৃতি, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ বিপ্লবী ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বেঁচে থাকবে আগামী প্রজন্মের মধ্যে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রামে শুরু হওয়া আন্দোলনের নেতাকর্মী-সমর্থকরা বিশ্বাস করতেন, ভারতের বাস্তবতায় ‘সশস্ত্র কৃষক বিপ্লবই প্রকৃত মুক্তির পথ।’ ‘রাষ্ট্রীয় শোষণ ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে হবে’-এ ধারণা তাদের চালিত করেছিল। ভারত সরকার এ আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করে। ১৯৭০-এর দশকে বহু নেতা নিহত বা গ্রেফতার হন (চারু মজুমদার ১৯৭২ সালে পুলিশ হেফাজতে মারা যান)। জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কারারুদ্ধ ও নির্যাতিত হয়ে নকশাল আন্দোলনের শেষ অগ্নিশিখা কমরেড আজিজুল হকের মৃত্যু হলেও পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ইত্যাদি রাজ্যে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র নির্মমতার মধ্যেও নকশাল আন্দোলন সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি, বরং তা ‘মাওবাদী’ আকারে আবার ফিরে এসেছে ভারতের নানা প্রান্তে। নকশালপন্থিদের একটি অংশ এখনো ‘মাওবাদী’ নামে পরিচিত এবং কিছু জঙ্গল এলাকায় সক্রিয়। ভারত সরকার মাওবাদীদের ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।

গত শতকের সত্তরের দশকে বাংলাদেশের অদূরে ভারত ও নেপালের সীমান্তঘেঁষা নকশালবাড়ি এক বিপ্লবী আন্দোলনের তীর্থস্থান ছিল। রাজনৈতিক উত্তাপের তেজে নকশালবাড়ির রাজনীতির প্রভাব পড়েছিল উপমহাদেশের সমাজজীবনে ও সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতে। সাহিত্য অঙ্গনে তার লেখা ছড়িয়েছিল অসংখ্য গল্প, উপন্যাস, নাটক ও কবিতার মাধ্যমে। সিনেমার রুপালি পর্দায়ও চিত্রিত হয়েছে। চারু মজুমদার, কানু সান্যাল, আজিজুল হকের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের প্রভাব ইতিহাসে এক চিরচিহ্ন রেখেছে। বুকার পুরস্কার জয়ী অরুন্ধতী রায়ের ‘গড অব স্মল থিংস’ উপন্যাসের একটি চরিত্র নকশাল আন্দোলনে যোগ দেয়। নকশাল আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন মহাশ্বেতা দেবী। তার ‘হাজার চুরাশির মা’ নকশাল আন্দোলন নিয়ে লেখা উপন্যাস। ১৯৯৮ সালে এ উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে একটি হিন্দি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়, নাম ছিল ‘হাজার চুরাশি কি মা’। সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কিন্নর রায়, বাণী বসু, শৈবাল মিত্র রচিত বেশকিছু উপন্যাসে নকশাল আন্দোলনের কথা রয়েছে। এ আন্দোলনের প্রভাবে রচিত শিল্প-সাহিত্যের উপাদানগুলো চিন্তাশীল মানুষকে প্রভাবিত করেছিল। যদিও নকশাল আন্দোলন এখন ইতিহাসের অংশ, তথাপি মুছে যায়নি তার গভীর বেদনার ক্ষত এবং চারু মজুমদার, আজিজুল হকসহ হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগের আখ্যান ও বৈপ্লবিক স্বপ্নের ইতিবৃত্ত।

প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ : চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম