খরার প্রভাবে বাড়ছে গাছের মৃত্যু
মো. রফিকুল আলম কাওছার
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৩:২২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান খরার কারণে গাছের মৃত্যু বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। এতে পৃথিবীর উষ্ণতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং পরিবেশ ও জনজীবন বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে।
কার্বন শোষণের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স–এ প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
“উষ্ণমণ্ডলীয় গাছের কাণ্ডের বৃদ্ধিতে খরার প্রভাব সামান্য” শীর্ষক এই গবেষণায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস, ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫১ জন গবেষক।
বেশ কয়েকটি দেশের গবেষক মিলে গবেষণাটি করেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার জুইডেমা, ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের অধ্যাপক পিটার গ্রোয়েনেন্ডি, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অধ্যাপক ভেলেরি ট্রাউট ও অধ্যাপক ফ্লোরিন বাবস্ট।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেয়া পাঁচ মূল গবেষকের অন্যতম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
কীভাবে করা হয়েছে গবেষণা?
গবেষকেরা ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক বছরগুলো চিহ্নিত করেন এবং ওই সময়ে গাছের বর্ষবলয় কতটা সংকুচিত হয়েছে তা পরিমাপ করেন। পাশাপাশি খরার পরবর্তী দুই বছরের তথ্যও বিশ্লেষণ করা হয়।
প্রায় ১০০ বছর সময় ধরে ৩৬টি দেশের ৫০০টি এলাকা থেকে সংগৃহীত ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এত বিস্তৃত পরিসরে এর আগে গাছের বর্ষবলয় বা ট্রি রিংস নিয়ে আর কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি।
গবেষণার মূল ফলাফল
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে খরার বছরে গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গড়ে ২.৫% কমে যায়।
বাংলাদেশে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে রেমা-কালেঙ্গা বনের চিক্রাশি গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫৫% হ্রাস পেয়েছিল।

গবেষণায় দেখা গেছে, খরার কারণে প্রতি বছর অতিরিক্ত ০.১% গাছ মারা যেতে পারে। এতে গাছের মাধ্যমে কার্বন শোষণের সুযোগ কমে যাবে এবং মৃত গাছ পচে গিয়ে উল্টো অতিরিক্ত কার্বন বাতাসে ছড়াবে।
কেন ঝুঁকি বাড়ছে?
বর্তমানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনভূমি পৃথিবীর প্রধান কার্বন শোষণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। ফলে খরার তাৎক্ষণিক প্রভাব তুলনামূলকভাবে সামান্য মনে হলেও, জলবায়ু পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাবে।
খরার মাত্রা ও ঘনত্ব বাড়ছে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রা গাছের বৃদ্ধিকে দীর্ঘমেয়াদে বাধাগ্রস্ত করছে। গাছের কার্বন শোষণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় পৃথিবী আরও দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে।
গবেষকদের সতর্কবার্তা
অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, “এখন পর্যন্ত খরার প্রভাব গাছের কাণ্ডের বৃদ্ধি ও কার্বন শোষণে সীমিত থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের গতি যদি এভাবে চলতে থাকে, ভবিষ্যতে এ স্থিতিশীলতা থাকবে না।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে হলে বন সংরক্ষণ ও নতুন গাছ লাগানোর পাশাপাশি বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন হ্রাস করা জরুরি। অন্যথায় খরা ও বন–মৃত্যু মিলিয়ে পৃথিবীর উষ্ণায়ন রোধ করা আরও দুরূহ হয়ে উঠবে।
