Logo
Logo
×

রাজধানী

পুরান ঢাকায় তীব্র গ্যাস সংকট

Icon

এএইচএম জামাল

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৯:৫৫ এএম

পুরান ঢাকায় তীব্র গ্যাস সংকট

পুরান ঢাকায় তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে এক নারী চুলায় রান্না করছেন। ছবি: সংগৃহীত।

পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, পাটুয়াটুলী, ইসলামপুর, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, বংশালসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট বিরাজ করছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন এলাকার বাসিন্দারা। কয়েক মাস আগে গ্যাসের চাপ ভালো থাকলেও শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস সংকটও বেড়েছে। অধিকাংশ এলাকায় সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গ্যাস থাকে না বললেই চলে। 

এতে বাধ্য হয়ে রাতে অথবা কাকডাকা ভোরে দিনের রান্নার কাজ সারছেন গৃহিণীরা। কিছু কিছু লেনে দিনের বেলা গ্যাস থাকলেও গ্যাসের চাপ এতটাই কম যে, তা দিয়ে কোনো রান্নার কাজই হয় না। দিন দিন গ্যাসের সমস্যা বেড়েই চলেছে। সাত-আট বছর ধরে পুরান ঢাকার এসব এলাকায় গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলেও তিতাসের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। সব এলাকার বাসিন্দারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না। 

এলাকার আহসান উল্লাহ রোড, কবিরাজ লেন, জিএল গার্থ লেন, সিমসন রোড, পাটুয়াটুলী, ইসলামপুর, কুমারটুলী, লিয়াকত এভিনিউ, ওয়াইজঘাট, রমাকান্ত নন্দী লেন, রয়েল স্টিট, পিকে রায় রোড, শাঁখারীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার, আশেক লেন, রাধিকা মোহন বসাক লেন, হরি প্রসন্ন মিত্র রোড, সৈয়দ আওলাদ হোসেন লেন, আনন্দ মোহন বসাক লেন, বংশাল লেন, কোর্ট হাউস স্টিট, উচ্ছব পোদ্দার লেন, রাখাল চন্দ্র বসাক লেন, নবরয় রেন, কৈলাশ ঘোষ লেন, রাজার দেউরি, বংশালসহ অনেক এলাকায় গ্যাস সংকট রয়েছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার গ্যাসের সমস্যার বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। পরবর্তীতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছেও আবেদন করা হয়েছে। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। এখন আমরা কার কাছে এ অভিযোগের কথা জানাব।

রাখাল চন্দ্র বশাক লেনের ভাড়াটিয়া মৃদুল মুখার্জি বলেন, আমরা সীমিত আয়ের মানুষ। রান্নাবান্না করার জন্য প্রতি মাসে আমাকে এক সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে হয়। এতে আমার খরচ হয় ১২০০ টাকা। অন্যদিকে প্রতি মাসে বাড়িওয়ালাকে গ্যাসের বিল দিতে হয়। এ বাড়তি ১২০০ টাকা জোগাড় করা আমার জন্য অনেক কষ্টকর।

লক্ষ্মীবাজারের প্যারিদাস রোডের বাসিন্দা গৃহবধূ আয়শা সিদ্দিকা সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার রাতের বেলায় শেষ করে রাখছেন। বংশাল রোডের কয়েকজন স্থানীয় বাড়িওয়ালা অভিযোগ করে বলেন, পুরান ঢাকার এসব এলাকায় সকাল ৭টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। কিন্তু গ্যাসের বিল ঠিকই দিতে হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আবদুর রহমান মিয়াজী যুগান্তরকে বলেন, গ্যাস একটি প্রাকৃতিক সম্পদ, এর সীমাবদ্ধতা আছে। অতিরিক্ত গ্রাহক চাহিদা ও বহু আগে নির্মিত সরবরাহ লাইনের ত্রুটির কারণেও গ্যাস সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জনসংখ্যা বহুগুণে বেড়ে গেছে। এতে পুরনো লাইনে বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। তাই পুরনো লাইন প্রতিস্থাপন করে গ্যাসের সঠিক সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।

ডিএসসিসি ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী মো. আরিফ হোসেন (ছোটন) যুগান্তরকে বলেন, সাধারনত শীতকালে ঠাণ্ডায় গ্যাস জমে যাওয়ায় লাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকে। তাই শীতের সময় গ্যাসের সংকট থাকে। তবে এবার শীত আসার আগেই গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে বলে তিনি জানান। 

গ্যাসের সমস্যা বর্তমানে একটি জাতীয় সমস্যা। উৎপাদন স্বল্পতার কারণে এটি রাজধানীসহ গোটা দেশেরই সমস্যা। তাই রাতারাতি এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। তারপরেও জনসাধারণের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের মেট্রো ঢাকা (এসওডি) বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সুজাত আলী যুগান্তরকে বলেন, গ্যাসের প্রেসারের সমস্যা ব্যাপকভাবে সব এলাকায় নেই। তবে পুরান ঢাকার বিতরণ লাইনগুলো অনেক পুরনো বলে কিছু কিছু এলাকায় সাময়িক সমস্যা হতে পারে। 

এ ক্ষেত্রে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকা চিহ্নিত করে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এর আগে ঢাকার জুরাইন এলাকায় এ ধরনের সমস্যার লিখিত অভিযোগ পেয়ে সমাধান করেছি। এলাকাভিত্তিক লিখিত অভিযোগ জানালেই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।

গ্যাস গ্যাস সংকট

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম