Logo
Logo
×

খবর

পাচারের অপেক্ষায় শত কোটি টাকার ইয়াবা

টার্গেট থার্টিফার্স্ট নাইট : ঠেকানো যাচ্ছে না আগ্রাসন

Icon

উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পরও ঠেকানো যাচ্ছে না ‘ইয়াবা আগ্রাসন’। মাদকসেবীদের কাছে হেরোইন, ফেনসিডিলের চেয়ে ইয়াবার চাহিদা বেশি।

মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা আসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইয়াবা পাচার ও গোপন আড়তে বাজারজাত করার ঘটনা। বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, গত ৯ মাসে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ থেকে ৬ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ১৭২ কিলোমিটার অরক্ষিত। এর মধ্যে টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপের মধ্যবর্তী ১৪ কিলোমিটার নাফ নদীর চ্যানেল এলাকা ইয়াবা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে চোরাচালানিরা।

এদিকে উখিয়া সীমান্তের পালংখালী থেকে বালুখালী পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আসছে ইয়াবার চালান। সীমান্তের আঞ্জুমানপাড়া বিজিবি এসব রোহিঙ্গার মালামাল তল্লাশি চালিয়ে ২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছেন ৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমদ।

স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে তাদের দেশের সীমান্ত এলাকায় গড়ে ওঠা ইয়াবা তৈরির কারখানার তালিকা দেয়া হয়। এসব কারখানায় ১৩ ধরনের ইয়াবা তৈরি হচ্ছে। যেসব ইয়াবার বাজার এখন উখিয়া-টেকনাফসহ সারা দেশ। ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী নাফ নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হলেও ইয়াবা চালান আসা বন্ধ করা যায়নি। মিয়ানমারে রাখাইনে রোহিঙ্গা বিতাড়ন শুরুর পর থেকে ইয়াবা চালানে কিছুটা ভাটা পড়েছিল, কিন্তু হঠাৎ করে আবার ইয়াবা পাচার বাড়তে শুরু করে।

র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক মেজর রুহুল আমিন জানান, গত সপ্তাহে হ্নীলা এলাকার একটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৬০ হাজার পিস ইয়াবাসহ ২ মহিলাকে আটক করা হয়েছে। তাদের টেকনাফ থানায় সোপর্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।

টেকনাফ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা লোকাচিস চাকমা জানান, বুধবার ভোররাতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা গ্রামের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৩৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রশিদ উল্লাহ নামের এক ইয়াবা পাচারকারীকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত উখিয়া-টেকনাফসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে ১২ শতাধিক ইয়াবা পাচারকারী এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এসব পাচারকারী থার্টিফার্স্ট নাইটকে সামনে রেখে তাদের নির্ধারিত আড়তে ইয়াবা মজুদ করছে। ওইদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থার্টিফার্স্ট নাইটের শান্তি-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত থাকবে। এমন সুযোগের অপেক্ষায় উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে শতকোটি টাকার ইয়াবা মজুদ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মাদক প্রতিরোধ কমিটির নেতারা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাঈন উদ্দিন জানান, থার্টিফার্স্ট নাইটে যাতে ইয়াবাসহ চোরাচালান ও অনৈতিক কোনো ঘটনা ঘটতে না পারে সে জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

রাখা হবে।

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক আবু জার আল জাহিদ সাংবাদিকদের জানান, শুধু থার্টিফার্স্ট নাইট নয় ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে বিজিবি সব সময় সতর্কতা অবলম্বন করে সীমান্তে অতন্দ্রপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করছে।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের জানান, মেরিন ড্রাইভসহ কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্টে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন থার্টিফার্স্ট নাইট এবং এর আগে-পরে যাত্রীবাহী গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ইয়াবা প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে উপজেলার মানব পাচার ও মাদকদ্রব্য ব্যবহার পাচার প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এম আবুল কাশেম তার ব্যক্তিগত মতামত ব্যক্ত করে বলেন, বিগত দিন আর চলতি মৌসুমের মধ্যে ব্যাপক ফারাক রয়েছে, যেহেতু এখানে বসবাস করছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গার আশ্রয়স্থলে ইয়াবা মজুদ হতে পারে থার্টিফার্স্ট নাইটে পাচারের জন্য।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম