ফ্লাইট সংকট ও ভাড়া বৃদ্ধিতে ভোগান্তি
রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিমান ভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণ-তিনগুণ
আনু মোস্তফা, রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মাত্র কয়েক বছর আগেও রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে বিমানে যাত্রী সংকট ছিল প্রকট। কিন্তু বর্তমানে যাত্রীর চাপ এতটাই বেশি যে, এক সপ্তাহ আগেও টিকিট পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। এ সুযোগে সেবা পরিচালনাকারী বিমান সংস্থাগুলো বাড়িয়ে দিয়েছে যাত্রী ভাড়ার পরিমাণ।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিমানের ভাড়া দ্বিগুণ এবং ইউএস বাংলার প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যাত্রীরা ফ্লাইট বাড়ানোর দাবি করে এলেও তা বাড়ানো হচ্ছে না। ফলে একদিকে টিকিট না পাওয়া, অন্যদিকে ভাড়া বৃদ্ধিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আমার উদ্যোগে রাজশাহী-ঢাকা বিমান পরিষেবা পুনরায় চালু হয়েছে। এ সময় অনেকেই বলেছিলেন যাত্রী পাওয়া যাবে না।
কিন্তু এখন যাত্রীর চাপ এতটাই বেশি যে, কয়েকদিন আগে না কাটলে টিকিটই পাওয়া যায় না। রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিমানের ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান।
রাজশাহী শাহমখদুম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে ঢাকা-সৈয়দপুর-রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বাণিজ্যিক পরিষেবা চালু হয়।
ওই সময় দৈনিক এ রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি করে ফ্লাইট চলত। মাঝে ইউনাইটেড, এয়ার পারাবত ও জিএমজি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলেছে কখনও নিয়মিত, কখনও অনিয়মিতভাবে। তবে ২০০৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি যাত্রী সংকটে অব্যাহত লোকসানের কথা বলে রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিমানের সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়।
৮ বছর পর ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল এ রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট পুনরায় চালু হয়। এরপর বেসরকারি বিমান সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইউএস বাংলাও ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। এক বছর পর নভো এয়ারের ফ্লাইট চালু হলেও তা ৬ মাসের মধ্যে বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে বর্তমানে বিমান ও ইউএস বাংলার ফ্লাইট নিয়মিত চলাচল করছে।
যাত্রীরা জানান, চালুর সময় বিমান ও ইউএস-বাংলার টিকিটের দাম ২ হাজার ৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানের টিকিটের দাম সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা এবং ইউএস বাংলার টিকিটের দাম ৭ হাজার ২০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। এতে যাত্রীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রাজশাহীতে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না। অথচ যশোর, বরিশাল, সৈয়দপুর, সিলেট, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অভ্যন্তরীণ রুটে সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।
এটা রাজশাহীর মানুষের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ। শাহমখদুম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ইউএস বাংলা বর্তমানে রোববার ছাড়া ঢাকা-রাজশাহী-ঢাকা রুটে দৈনিক একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
কিন্তু টিকিটের ব্যাপক চাহিদার কারণে ২ হাজার ৭০০ টাকার নির্ধারিত ভাড়া বৃদ্ধি করে ৬ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার ২০০ টাকা রাখা হচ্ছে। ফ্লাইট স্বল্পতার কারণে মধ্যম আয়ের লোকজন বিমান ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের রাজশাহী স্টেশন ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে জানান, এখনই ফ্লাইট বাড়ানোর কাজটি হচ্ছে না। তবে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। তিনি জানান, শুরুতে রাজশাহী-ঢাকা রুটে ইউএস বাংলা তিনটি ফ্লাইট চলত সপ্তাহে। এখন সপ্তাহে ৬টি ফ্লাইট চলছে।
অন্যদিকে রাজশাহী-ঢাকা রুটে সপ্তাহে বিমানের ৪টি ফ্লাইট চলছে। মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও রোববার বিকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে রাজশাহী এবং সন্ধ্যার আগে রাজশাহী ছেড়ে ঢাকায় ফিরে বিমানের ফ্লাইট। বিশেষ করে ৭২ আসনের এয়ারক্রাফটগুলো এ রুটে যাত্রী বহন করছে। এদিকে অব্যাহত যাত্রীর চাপে বিমানের নির্ধারিত ২ হাজার ৭০০ টাকা ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
রাজশাহী শাহমখদুম বিমানবন্দরের ম্যানেজার সেতাফুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রাজশাহী বিমানবন্দরের রানওয়ে দেশের অন্য সব বিমানবন্দর থেকে ছোট। এ কারণে এয়ারবাস বা বোয়িং নামার কোনো সুযোগ নেই। সড়ক ও রেলে চলাচলে বিলম্বের কারণে অনেকেই বিমানে যাতায়াতে আগ্রহী।
কিন্তু ফ্লাইটের সংখ্যা কম এবং সে তুলনায় যাত্রীর চাপ বেশি হওয়ায় টিকিট পেতে সমস্যা হচ্ছে। তবে অদূরভবিষ্যতে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
বিমান ম্যানেজার আরও জানান, রাজশাহী শাহমখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ে বড় না হলে অন্যান্য বিমান সংস্থার বিমান নামতে পারবে না। তবে রাজশাহী-ঢাকা রুটে যাত্রী সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়ায় বিমান চলাচলে আশার সৃষ্টি হয়েছে।
