শাহজালাল সার কারখানায় গচ্চা ২৩৯ কোটি টাকা
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে স্থাপিত শাহজালাল সারকারখানা উৎপাদনে যায়। কিন্তু প্রথম বছরেই ২৩৯ কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে। কাঁচামালের বেশি দাম, উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম, উৎপাদন বৃদ্ধি ব্যাহত ও পরিবহন খরচ বেশি ইত্যাদি কারণে লোকসানের মুখে বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কারখানার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৯০ হাজার টন সার। বছর শেষে উৎপাদন দাঁড়ায় তিন লাখ ৯৩ হাজার টনে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার পরেও অন্যান্য খরচ মেটাতে বিশাল পরিমাণ গচ্চা দিতে হয়েছে।
কারখানা সূত্রে জানা যায়, উৎপাদিত প্রতি টন সার বিক্রি হয় ১৪ হাজার টাকায়। সার বিক্রি বাবদ গত বছরে আয় হয় ৫৫০ কোটি ২০ লাখ টাকা। পাশাপাশি এই অর্থবছরে কারখানার অপারেটিং, ইন্স্যুরেন্স, ৪৮ জন চীনা বিশেষজ্ঞের বেতনসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পরিবহন, গ্যাস বিল, প্যাকেজিং সরঞ্জামাদি এবং কেমিক্যাল ক্রয়সংক্রান্ত ব্যয় হয় ৭৮৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। ফলে গত অর্থবছরে সর্বসাকল্যে কারখানার লোকসান গুনতে হয় ২৩৯ কোটি টাকা।
তবে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল হক দাবি করেন, কারখানাটির আয়-ব্যয়ের হিসাব এখনও অডিট হয়নি। শিগগির অডিট হবে। অডিট সম্পন্ন হলে পুরো আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে। তিনি জানান, এ ধরনের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক খাতে নিয়ে যেতে হলে কিছু সময় লাগে। এদিকে সারকারখানার জিএম অ্যাডমিন (হিসাব) আবদুল বারেক জানান, লোকসানের প্রাথমিক যে হিসাব মিলেছে তা কমে ২১০ কোটি টাকায় নেমে আসবে। তিনি বলেন, একটি কন্ট্রোল বাল্বের কারণে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। বাল্বটির জন্য ইতিমধ্যে এলসি করা হয়েছে। বাল্ব সংযোজন হলে উৎপাদন অনেক বাড়বে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে সারকারখানায় উৎপাদিত সার দেশের বিভিন্ন গুদামে পাঠানোর খরচ অনেক বেশি। ট্রাকে প্রতি টন ইউরিয়া সার পরিবহনে খরচ হচ্ছে প্রায় দুই হাজার টাকা। সে তুলনায় ট্রেনে খরচ কম, এক হাজার টাকা। নদীপথে সার পরিবহনের খরচ আরও কম পড়বে। এ ছাড়া কারখানার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও বিভিন্ন ভ্যাসেলের ক্যাটালিস্টের জন্য আমেরিকা থেকে কেমিক্যাল আনতে অনেক খরচ পড়ে যায়।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সারকারখানায় দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৫শ’ টন সার। কট্রোল বাল্ব সংযোজন হলে এ উৎপাদন বেড়ে যাবে। এদিকে চলতি অর্থবছরে সারকারখানায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৬০ হাজার টন। কারখানাটি উৎপাদনে যায় গত বছর। চীনা কোম্পানি মেসার্স কমপ্লান্টের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বছরে উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টন। ২০১২ সালের ২৪ ডিসেম্বর কারখানাটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারখানাটি ৬২ একর জায়গার ওপর অবস্থিত।
