রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
মাঠপর্যায়ে কাজের চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত
১৫ জানুয়ারির মধ্যে সই *যাচাই করতে মিয়ানমারের কাছে তালিকা পাঠানো হবে
মাসুদ করিম
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:৩৪ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মাঠপর্যায়ের সার্বিক কার্যক্রম সুনির্দষ্টি করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সই হতে যাচ্ছে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি।
এটির খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ। খসড়াটি শিগগিরই মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
১৫ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের একটি বৈঠকে চুক্তি সই হবে। এর আগে সই হওয়া অ্যারেঞ্জমেন্টের অধীনে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে দিনব্যাপী একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রথমে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স এবং পরবর্তী সময়ে যেৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বাংলাদেশ অংশের কর্মকর্তারা বৈঠক করে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মাঠপর্যায়ে কাজের প্রক্রিয়া নিয়ে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করেন।
এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে যেৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মেঘনায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পর সংশি্লষ্ট এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, 'রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মাঠপর্যায়ে যেসব কাজ চলবে, তার চুক্তির খসড়া আমরা চূড়ান্ত করেছি। এটি খুব তাড়াতাড়ি মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এ চুক্তিতে কীভাবে রোহিঙ্গাদের পাঠানো হবে, কয়টি ক্যাম্প থাকবে, গাড়িতে নাকি নেৌকায় পাঠানো হবে, কোন পয়েন্ট দিয়ে ক'জন যাবে- এসবের খুঁটিনাটি আমরা উলে্লখ করেছি।'
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে যাচাই করার জন্য প্রথমে আমরা তালিকা পাঠাব মিয়ানমারের কাছে। তারা সেগুলো যাচাই করে দিলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে।'
এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াগত কার্যক্রম বিগত দু'বারের তুলনায় এবার অনেক তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করতে পেরেছি।
১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালেও রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছিল। ওই দু'বার অনেক বেশি সময় লেগেছিল। এবার চার মাসের মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পাদন সম্ভব হয়।'
প্রসঙ্গত, রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের কারণে গত চার মাসে সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেন। আগে থেকেই থাকা রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশে মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে ১০ লাখ।
তাদের ফেরাতে প্রথমে অ্যারেঞ্জমেন্ট নামের একটি চুক্তি সই হয়। এ চুক্তির আওতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তদারকি করতে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে প্রত্যেক পক্ষে ১৫ জন করে ৩০ সদস্যবিশষ্টি যেৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। এ গ্রুপের কার্যপরিধিও সই হয়েছে। এবার মাঠপর্যায়ে কাজের চুক্তি চূড়ান্ত হল।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নেপিতোয় দুই দেশের মধ্যে যেৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব না হলে কয়েক দিন দেরি হতে পারে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে যেৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরানোর কার্যক্রম ২৩ জানুয়ারির মধ্যে হওয়ার কথা ছিল, সেটি দেরি হতে পারে। তবে দেরি হলেও এক সপ্তাহ হতে পারে, এর বেশি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আসছে নতুন বছরে এই বছরের মতোই মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে।
রোহিঙ্গা ইসু্যতে চীন ও রাশিয়ার ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, এসব দেশকে প্রত্যাশা অনুযায়ী পাইনি। তবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে একক প্রচষ্টোয় চুক্তি করেছে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বোঝা যায়, আমরা অন্য কারও মুখাপেক্ষী নই। তারপরও গুরুত্বপূর্ণ যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো মিয়ানমারে গণতন্ত্র নিয়ে সোচ্চার ছিল, তারা রোহিঙ্গা ইসু্যতেও কথা বলেছে। তাদের ভূমিকাই এখানে বড়।
রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি এবং স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গা পাঠানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাদের নিরাপদ পরিবেশে ফেরত পাঠানোর জন্যই চুক্তি করেছি। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করার অবকাশ নেই।
আমরা বলতে চাই, রোহিঙ্গারা ফিরে যাবেন। কয়েক দিন দেরি হলেও এর অর্থ এ নয় যে, তারা আর যেতে পারবে না। তবে এখনও যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন, তারা খাদ্য ও চিকিৎসার জন্যই আসছেন বলেও মত দেন তিনি।
রোহিঙ্গা নিবন্ধন নিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। বুধবার পর্যন্ত ৯ লাখ ২৩ হাজারের বেশি নিবন্ধন হয়ে গেছে।
সবাইকে পাঠানো যাবে কিনা, সেটা পরে ভাবা যাবে। কিন্তু আগে কাজ শুরু করতে হবে। এ ছাড়া ১৯ হাজার এতিম রোহিঙ্গা শিশুর বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।
