সাঁথিয়ায় লিটনের মৃত্যু আত্মহনন নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড
থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাঁথিয়া উপজেলার ছোট নারিন্দা গ্রামে পূর্ববিরোধের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে লিটন সরকার (৩৫) নামের এক যুবককে হত্যা করে গলায় দড়ি ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে এমন অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার অনেকেই বলছেন, এটা আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনা তদন্তে সাঁথিয়া থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ১৮ ডিসেম্বর কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকরা সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে সাঁথিয়া উপজেলার নাগডেমরা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ছোট নারিন্দা যান। সেখানে লিটনের বাবা আলম সরকার, মা আনোয়ারা বেগম আনো, ফুফা আবদুল বাতেন মোল্লা, লিটনের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী রোকসানাসহ অনেকের সঙ্গে তাদের কথা হয়।
জানা যায়, ২৫ অক্টোবর লিটনদের বাড়ির অদূরে বাবু লালের বাড়িতে রাত ৮টা দিকে লিটন খাতনার অনুষ্ঠানে গান-বাজনা শুনতে যান। গভীর রাতে লিটন বাড়িতে ফিরে না আসায় তার স্ত্রী আসমা খাতুন শ্বশুর আলমকে বিষয়টি জানান। এ সময় আলম লিটনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেন, রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করছে না। পরে তিনি লিটনের খোঁজে খাতনা অনুষ্ঠান বাড়িতে যাওয়ার সময় পথে আবারো লিটনের মোবাইলে ফোন দেন। এ সময় রাস্তার পাশে ওয়াজেদ খাঁর আমবাগান থেকে মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজ শুনে উচ্চস্বরে লিটনকে ডাকতে থাকেন। কোনো সাড়া না পেয়ে রাস্তার পাশে আম বাগানে গিয়ে দেখেন পিঠমোরা করে হাত এবং পা বাঁধা গলায় দড়ি ঝোলানো একটি চারা আম গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে মাটিতে বসা অবস্থায় আছে। এ সময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে এসে লিটনকে ওই অবস্থায় দেখতে পায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লিটনের গলায় সাইকেলের চেইনের দাগ, বামহাতে এবং দু’পায়ের থোড়াতে আঘাতের গভীর কালো দাগ ছিল। তাদের প্রশ্ন- হাত-পা বাঁধা ব্যক্তির পক্ষে কি গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করা সম্ভব? অভিযোগে জানা যায়, পরের দিন ২৬ অক্টোবর সকালে সাঁথিয়া থানার ধুলাউড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই রেজাউল ছোট নারিন্দার ঘটনাস্থল থেকে লিটনের লাশ উদ্ধার এবং লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। যে অবস্থায় লাশ উদ্ধার হয়, সেই অবস্থায়ই লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে নিয়ম মানা হয়নি। এসআই রেজাউল কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে উপস্থিত লোকদের লিটনের লাশ গোসল করাতে বলেন। গোসল শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা মর্গে প্রেরণ করা হয়। এসআই রেজাউল ঘটনাস্থলে লিটনের সহজ-সরল বাবা আলমের কাছ থেকে একটি সাদা কাগজ এবং সুরতহাল রিপোর্টে স্বাক্ষর নেন। তবে সুরতহাল রিপোর্টে কি লেখা আছে, তা তাকে পড়ে শোনানো হয়নি। ছোট নারিন্দা গ্রামের অনেকেই মন্তব্য করেছেন, গোসলের পানির সঙ্গে লিটনের শরীরে থাকা মৃত্যুর আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। লিটনের পিতা আলম সরকার অভিযোগ করেন, গত ২৮ অক্টোবর সাঁথিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে গেলে ডিইউটি অফিসার এসআই আবুল হোসেন মামলার এজাহার পড়েই চোখ রাঙিয়ে ধমকের সুরে আলমকে বলেন, ছেলে হত্যার বানোয়াট অভিযোগ নিয়ে এসেছ।
এজাহার গ্রহণ না করে উল্টো রাতের বেলা আলমসহ সঙ্গীদের জোরপূর্বক থানার মধ্যে বসিয়ে রাখে। পরে একজন সংবাদকর্মীর মাধ্যমে তারা ছাড়া পায়। আলম তার ছেলে হত্যার ঘটনাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেড়া সার্কেল) আশিষ বিন হাসানকে বিস্তারিত জানালে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত আবু মো. দিলওয়ার হাসান ইমাম বলেন, লিটনের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
