হালুয়াঘাটে তিন সন্তানের জননীকে নির্যাতন
ওসি, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
এসপিকে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ
ময়মনসিংহ ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানায় ৩ দিন আটক রেখে তিন সন্তানের জননীকে নির্যাতনের ঘটনায় ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার দুপুরে ৫নং আমলি আদালতের বিচারক হাফিজ আল আসাদ জেলা পুলিশ সুপারকে এ নির্দেশনা দেন। ২১ ডিসেম্বর হালুয়াঘাট থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিয়াসহ ৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ করেন নির্যাতিত ঝর্ণা বেগম (৪০)। তার বাড়ি উপজেলা ধুরাইল ইউনিয়নের ধরাপন্নি গ্রামে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আলহাজ নজরুল ইসলাম সরদার জানান, ১১ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে ধুরাইল বাজারে সিরাজুল ইসলামের দোকানের সামনে থেকে স্থানীয় আজগর আলীর স্ত্রী ঝর্ণা বেগমকে ধরে নিয়ে যান ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া। থানায় নিয়ে তার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই দিন রাত ৩টার দিকে ঝর্ণা বেগমকে ওসির রুমে নিয়ে আসে। এ সময় ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমন এবং ওসি তার ওপর যৌন নির্যাতন চালান। পরদিন রাতেও তাকে নির্যাতন করা হয়। ১৩ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পরদিন জেলহাজতে বাদিনী অচেতন হয়ে পড়লে কারা হাসপাতালের মাধ্যমে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৮ দিন চিকিৎসা শেষে তাকে পুনরায় হাজতে নেয়া হয়। পরে তার বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে হালুয়াঘাট থানায় ৪টি গরু চুরির মামলা দেয়া হয়। ৪ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পান ঝর্ণা বেগম। চিকিৎসা শেষে ২১ ডিসেম্বর নির্যাতনের অভিযোগ এনে হালুয়াঘাট থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া, ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ আদালতে অভিযোগ করেন। বুধবার নির্যাতনের বিষয়টি আদালত আমলে নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপারকে।
মুক্তি পেয়ে নির্যাতিত ঝর্ণা বেগম সাংবাদিকদের জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমনের পক্ষে কাজ না করায় আমাকে এ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান সুমন কয়েক বছর ধরে আমার দিকে কু’নজর দিয়ে আসছিল। আমি তার কথা না শোনায় সে আমাকে ১১ আগস্ট পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে হালুয়াঘাট থানায় ৩ দিন আটকে রেখে রাতভর শারীরিক নির্যাতন করে। আমার কাছে ৫ লাখ টাকাও দাবি করে। এখন আমি প্রাণভয়ে অন্যের বাড়িতে আত্মগোপনে আছি। চেয়ারম্যান এবং ওসি আমার পরিবারের লোকজনকেও নানাভাবে হয়রানি করছে। আমরা এ নির্যাতন থেকে পরিত্রাণ চাই। নির্যাতিতার ভাই তাজুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যানের পক্ষে কাজ না করায় আমরা এখন ঘরবাড়ি ছাড়া। আমার বোনটাকে ওসি এবং চেয়ারম্যান মিলে নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। নির্যাতিতার বাবা বাবুরহাট কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক শামসুল আলম জানান- চেয়ারম্যান আর ওসি তারা দু’জন বন্ধু তাই তাদের সঙ্গে আমরা কোনো ভাবেই পারছি না। মেয়েটাকে থানায় আটকে রেখে এমন নির্যাতন কোনো বাবা-মা কি সহ্য করতে পারেন।
হালুয়াঘাট থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া জানান, চুরির মামলায় ঝর্ণা বেগমকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছিল। তাকে থানায় রেখে নির্যাতনের বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ঝর্ণা বেগমের নামে এলাকায় গরু চুরির অভিযোগ এবং গরু চোর চক্রের সদস্যদের যোগসাজশ রয়েছে। এমনকি চুরি যাওয়া গরু তার গোয়ালঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি জানান, গরু চোররা বিভিন্ন স্থান থেকে গরু চুরি করে এনে তার হেফাজতে রাখে। ঝর্ণা বেগম চুরির গরু কখনও নিজের বাসায় আবার কখনও অন্যের বাড়িতে রেখে পরে এগুলো বিক্রি করে ভাগ নিত। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শেরপুর জেলার নকলা বাজার থেকে একটি, তার বাড়ির গোয়ালঘর থেকে একটি এবং ধুরাইল বাজারের অপর একটি বাড়ি থেকে আরও ৩টি গরু উদ্ধার করা হয়। এক রাতে ধুরাইল বাজার এলাকার একটি বাড়ি থেকে ২টি গরু চুরি হয়। পরে গরুর মালিক ঝর্ণার গোয়ালঘর থেকে একটি গরু উদ্ধার করে। তার বিরুদ্ধে হালুয়াঘাট থানায় ৩টি মামলা ও ফুলপুর থানায় একটি মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি। ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমন জানান, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নারী নির্যাতনের বিষয়টি তার জানা নেই। জেলা ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম জানান, আদালতের নির্দেশ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
