বিপ্লবের মন্ত্রে উঠে দাঁড়াও হাদি
আমিরুল ইসলাম কাগজী
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গুলির শব্দ কখনো শুধু একটি শরীরকে বিদ্ধ করে না-তা বিদ্ধ করে একটি প্রজন্মের স্বপ্নকে, একটি আন্দোলনের আশাকে, একটি দেশের বিবেককে। শুক্রবার ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, জুলাই বিপ্লবের অন্যতম সেনানায়ক শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। হাসপাতালের শয্যায় নিশ্বাসের ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে উঠছে একটি জাতির হৃদয়। সারা দেশ আজ নীরব প্রার্থনায় দাঁড়িয়ে : হে আল্লাহ, আমাদের হাদিকে ফিরিয়ে দাও। সদা হাস্যোজ্জ্বল প্রাণবন্ত হাদি তোমার অপেক্ষায় সবাই। চেয়ে দেখ তোমার শত-সহস্র লাখো সঙ্গী-সাথী মাঠে নেমে পড়েছে। তাদের চোখে প্রতিবাদের আগুন-ঘাতকের শাস্তি চাই। কঠোর শাস্তি।
ওসমান হাদি কোনো সাধারণ নাম নয়-বিপ্লবের আগুন। তিনি একটি উচ্চারণ-অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের মুখোমুখি দাঁড়ানোর, মাথা উঁচু করে সত্য বলার উচ্চারণ। জুলাই বিপ্লবের উত্তাল দিনগুলোতে যখন ভয় মানুষকে গ্রাস করছিল, তখন ওসমান হাদি ছিলেন সাহসের প্রতিচ্ছবি। মাইকের সামনে তার কণ্ঠ কাঁপেনি, চোখে ছিল না দ্বিধা। তিনি জানতেন, সত্য বলার মূল্য আছে, কিন্তু নীরব থাকার মূল্য আরও বেশি।
ইনকিলাব মঞ্চকে যারা শুধু একটি প্ল্যাটফর্ম মনে করে, তারা ওসমান হাদিকে বোঝেনি। এ মঞ্চ ছিল নিপীড়িত মানুষের আশ্রয়, ক্ষুব্ধ তরুণদের কণ্ঠস্বর, আর ওসমান ছিলেন সেই কণ্ঠের ভাষ্যকার। তার শব্দগুলো আগুনের মতো ছিল, কিন্তু সে আগুন পোড়ানোর জন্য নয়, অন্ধকারকে আলোকিত করার জন্য। তিনি বারবার বলেছেন, ‘ভয় পেলে চলবে না, ইতিহাস ভীরুদের ক্ষমা করে না।’ আজ সেই মানুষটিই রক্তাক্ত, নিস্তব্ধ; আর ইতিহাস যেন থমকে আছে তার শয্যার পাশে।
গুলিবিদ্ধ দেহে যন্ত্রণার ক্ষত যত গভীরই হোক, ওসমান হাদির আদর্শ অক্ষত। তার রক্ত মাটিতে পড়ে থাকলেও তা বৃথা যাবে না-এ বিশ্বাস আজ লাখো মানুষের চোখে, মুখে, হৃদয়ে। মায়েরা দোয়া করছেন সন্তানের জন্য, তরুণরা অশ্রু সংবরণ করে শপথ নিচ্ছে-ওসমানের পথ ছেড়ে যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সারা দেশের শিক্ষাঙ্গন, রাজপথ, অলিগলিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে জুলাই বিপ্লবের সহযোদ্ধারা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তারা। কারণ, তিনি শিখিয়েছেন বিপ্লব মানে নৈতিক দৃঢ়তা, অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করা।
আজ হাসপাতালের করিডরে শুধু চিকিৎসার শব্দ নয়-শোনা যাচ্ছে মানুষের দীর্ঘশ্বাস, দোয়ার অনুচ্চ উচ্চারণ। অনেকেই তাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেনি, তবু তাকে নিজের মনে করছে। এটাই ওসমান হাদির শক্তি-তিনি ব্যক্তি নন, প্রতীক। তিনি জুলাই বিপ্লবের প্রতীক। জুলুম-নির্যাতনবিরোধী মিছিলের প্রতীক। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে আমরা দাঁড়াতে শিখেছি; তিনি কথা বলেছেন বলে আমরাও কথা বলতে পেরেছি। আমরাও প্রতিবাদ করতে পেরেছি।
হে ওসমান হাদি, তুমি লড়ে যাও। উঠে দাঁড়াও বিপ্লবের মন্ত্রে। কারণ তোমার ভেতরে যে আগুন, তাকে কেউ নেভাতে পারবে না। কাপুরুষ ঘাতকের বুলেট তোমার বিপ্লব এবং সাহসকে পরাজিত করতে পারবে না। তুমি জেগে ওঠো বিপ্লবের মন্ত্রে। আমরা আছি তোমার সঙ্গে, তোমার পাশে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে। এ দেশ তোমার অপেক্ষায়। তোমার কণ্ঠ আবার ফিরুক জনতার কণ্ঠ হয়ে, তোমার চোখে আবার জ্বলুক সেই আগুন, যে আগুনে পুড়ে ছারখার হয়েছে ফ্যাসিবাদের হিমালয় পর্বত। জুলাই বিপ্লবের সেনানায়ক হিসাবে তুমি শুধু ইতিহাসের পাতায় নও-তুমি আমাদের হৃদয়ে। আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করুন, সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন। আমিন।
আমিরুল ইসলাম কাগজী : সিনিয়র সাংবাদিক
