|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ একটি বীরের সংগঠন। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশের গঠনতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন ও জাতির ক্লান্তিকালে যুবলীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মাঠের তৃণমূল কর্মীরা অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে জাতির পিতা মুজিব সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের যুবসমাজকে একটি প্লাটফর্মে এনে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য আত্মনিয়োগ করাতে শেখ ফজলুল হক মনিকে যুবলীগ গঠন করার দায়িত্ব দেন।
এই জাতির বীরসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিব বাহিনীর প্রধান শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন পাক সামরিক জান্তার কাছে আতঙ্ক, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর গণআন্দোলন ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক। শেখ মনির বীরত্বের কথা অসীম সাহসিকতার গল্প বাঙালি জাতি আজও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল ৭১-এর রণাঙ্গনের বীর যোদ্ধাদের নিয়ে, ১৯৭২ সালে ১১ নভেম্বর শেখ ফজলুল হক মনিকে চেয়ারম্যান করে প্রতিষ্ঠিত সেই কমিটির প্রায় সবাই ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আর শেখ মনি তো ছিলেন এমন একজন বীর; যার খ্যাতি মুক্তিযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চর্চিত ছিল।
মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেবে উনার রণকৌশল সাহসিকতা যেমন প্রশংসিত ছিল তেমন ৩৫ বছরে ক্ষণজন্মে ৬ বছর কারাবাস, বার বার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও মাথা উঁচু করে হিমালয়ের মতো ছিলেন, কখনো মাথানত করেনি। গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, বঙ্গবন্ধুর সরকারকে নায্য কথায় এতটুকু ছাড় দেন নাই এই বীরসন্তান। তিনি বলেছিলেন- ‘মোনায়েমের আমলা দিয়ে মুজিবের সরকার চলতে পারে না।'
জাতির পিতা মুজিবের মতো সাহসী ক্যারিশমাটিক দক্ষ সংগঠকের দার্শনিকতা ছাপিয়ে শেখ ফজলুল হক মনির আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা আজও চির অম্লান হয়ে আছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা মুজিবকে সপরিবারে হত্যার নির্মম ট্র্যাজিডির পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছিল, আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা যখন খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিচ্ছিল, বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদরা বাসার ড্রয়িং রুম থেকে জাতির পিতা মুজিবের ছবি খুলে ফেলছিল— তখন যুবলীগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতা মৌলভী সৈয়দ জাতির পিতা মুজিবের হত্যার প্রতিশোধ নিতে গেরিলা বাহিনী গঠন করে প্রতিরোধ যুদ্ধ করেছেন। অস্ত্র আর গ্রেনেড নিয়ে একের পর এক সামরিক চৌকিতে হামলা করেন যুবলীগের বীরযোদ্ধা মৌলভী সৈয়দ। এক সময় ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে গেরিলা যুদ্ধের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ভারতে বঙ্গবন্ধুর শুভাকাঙ্ক্ষী ইন্দিরা গান্ধী নেতৃত্বহীন দল কংগ্রেস নির্বাচনে পরাজিত হলে তৎকালীন ভারত সরকার ময়মনসিংহ বর্ডার দিয়ে মৌলভী সৈয়দসহ অনেককে তৎকালীন সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি খুনি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে।
১৯৭৭ সালে ১১ আগস্ট জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে বিনাবিচারে মৌলভী সৈয়দকে হত্যা করা হয়। তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে আলোচিত মামলা চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলায় ও প্রধান আসামি করা হয় যুবলীগ নেতা মৌলভী সৈয়দকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে মৌলভী সৈয়দসহ যুবলীগের বীরসন্তানরা অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ যুদ্ধে নেমেছিলেন।
১৯৮১ সালে ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে দেশের গঠনতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে নিরলস আন্দোলন চালিয়ে গেছেন তার অন্যতম ভ্যানগার্ড বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। ১৯৮৭ সালের নভেম্বর ১০ তারিখ রাজধানীর সচিবালয়ের সামনে তৎকালীন নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্বৈরাচারবিরোধী বিশাল মিছিলের অগ্রভাগে ছিল যুবলীগ নেতা নুর হোসেন। যে নুর হোসেন ব্যানার লিখক ইয়াকুবের কাছে গিয়ে বলেছিল- ভাই আজ আপনি এমন জায়গা লিখবেন জীবনে কখনো এমন জায়গা লেখেন নাই— বলেছিল আমার বুকে লিখে দিন স্বৈরাচার নিপাত যাক আর পিঠে লিখে দিন গণতন্ত্র মুক্তি পাক। আজকের প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নুর হোসেনকে দেখে চমকে নেতাদের বলেছিলেন ওকে সরাও, ওরা ওকে মেরে ফেলবে। নুর হোসেন বলেছিল আপা আমি জানের মায়া করি না আমি আপনার যুবলীগের কর্মী। সেদিন পুলিশ শেখ হাসিনার চোখের সামনেই গুলি করে নুর হোসেনকে শহিদ করেছিল।
তৎকালীন ঢাকা মহানগরের ২০নং ওয়ার্ডের নেতা এই বীর সেনানীর আত্মত্যাগের ফলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বেগবান হয়েছিল এবং পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল। তেমনিভাবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন, কারাভোগ করেছেন ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন হাজার হাজার যুবলীগ নেতাকর্মী।
২০০১ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের সীমাহীন তাণ্ডবের প্রতিরোধ করেছিল যুবলীগ, যার পরিণামে জেল জুলুম হুলিয়া সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার যুবলীগের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার আজিজ মার্কা ইলেকশন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে সেদিন রাজপথে উত্তাল করেছিলেন তৎকালীন যুবলীগের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করার খালেদা জিয়ার দূরভিসন্ধি নানক-আজমের দুর্বার গণআন্দোলনের কাছে মাথানিচু করে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়। এক-এগারোর সময় মইন-উ-আহমেদ ও ফখরুদ্দিনের মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় নানক-আজমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
এক-এগারোর সময় শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। যুবলীগের এ প্রতিবাদের কারণে তৎকালীন এক-এগারো সরকারের রোষানলে পড়েন তৎকালীন আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম এমপি। তাদের রোষানল থেকে রক্ষা পেতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তাদের পালিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয়ও নিতে হয়। আত্মগোপনে থেকেও যুবলীগ নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে এয়ারপোর্ট হতে সুধাসদন পর্যন্ত যে জনতার ঢল নেমেছিল তার ওই নেপথ্যে ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে বিডিআর জওয়ান ও অফিসারদের জীবন বাঁচাতে গুলির মুখে সাদা পতাকা হাতে নিয়ে বিডিআর গেটে ছুটে গিয়েছিলেন তৎকালীন যুবলীগ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম। মহান মুক্তিযুদ্ধে, গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে এবং জাতির ক্রান্তিকালে যুবলীগ সবসময়ই বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যুবলীগ বীরের সংগঠন।
লেখক: শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল
সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
