|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঈদ সব ধর্মপ্রাণ মুসলিমের জন্য একটি উৎসব। ঈদে সবাই আনন্দ করবেন, উৎসবে মেতে উঠবেন, ভালো পোশাক পরবেন, ঘরে ভালো রান্না হবে, পরিবার আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীদের নিয়ে খুশি উপভোগ করবেন- এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।
কিন্তু ঈদে সবাই কি ভালো পোশাক পরতে পারছেন, ভালো খেতে পারছেন? স্বচ্ছন্দে সবাইকে নিয়ে ঈদ উপভোগ করতে পারছেন? এমন প্রশ্ন এখন সর্বত্র। সামনে কুরবানির ঈদ। সামর্থ্যবানদের জন্য এ ঈদ আনন্দের হলেও অসামর্থ্যবানদের জন্য এটি নিশ্চিয়ই বেদনার।
একজন দরিদ্র দিনমজুরের ভাষ্য হচ্ছে- তার তো কুরবানি দেবার সামর্থ্য নাই। তাছাড়া দামের কারণে গরুর গোশত কিনতে পারি না। ঈদে ঘরে গোশত রান্না না হলে খুব খারাপ লাগে। বৌ-বাচ্চারা তো আর সামর্থ্যের বিষয়টি বুঝে না। তিনি বলেন- দাম যত বেশিই হোক ঈদের দিন যাতে ঘরে গোশত থাকে তার একটা ব্যবস্থা ঠিকই করতে হবে।
কুরবারি ঈদের দিনে যেসব দরিদ্র মানুষরা ঢাকায় থাকেন তারা অনেকে গোশত পেয়ে থাকেন। কুরবানি দাতারা তাদের গোশত দেন। দান অনুদানে পাওয়া এসব গোশতও তারা ঠিকমতো খেতে পারেন না। কারণ এই গোশতের যথেষ্ট দাম আছে। তাই সংসারের অন্য প্রয়োজন মেটাতে অনেকেনই সামান্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেন। তাদের কাছে গোশত ক্রয় করেন নিম্ন-মধ্যবিত্তসহ খেটে খাওয়া মানুষের দল। অনেক ছোটখাটো হোটেল মালিকরাও মাংস কিনে ফ্রিজে রেখে পরে তা কাজে লাগায় বলে জানা যায়।
গরিবের আনন্দ নিহিত ধনীদেও মানসিকতার ওপর। মহান আল্লাহ ধনীদের সম্পদের মাঝেই গরিবের সম্পদ রেখেছেন। গরিবের আনন্দকে তাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার মাঝেই ধনীদের প্রকৃত আনন্দ। ঈদের আনন্দ কেবল একা ভোগ করলে হবে না, গরিব-দুঃখী মানুষকে তাতে শামিল করতে হবে। এটিও ইসলামের শিক্ষা। অন্যান্য উৎসব থেকে ঈদের পার্থক্য হল- সবাই এর অংশীদার। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে তা হবে সবার জন্য কল্যাণকর। অথচ বর্তমানে সমাজের চিত্র কেমন জানি পাল্টে গেছে।
বর্তমানে গরীব-দুঃখীদের ঈদ আর ধনীদের ঈদ এক সমান নয়। ধনীদের ঈদে বড় ধরনের বাজেট থাকে। তাদের কেনাকাটার ধরন আলাদা, দামি দামি বস্ত্র। কে কার চাইতে মূল্যবান শাড়ি, কাপড়, পাঞ্জাবি পরিধান করতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে এমনকি ছেলে-মেয়েদের কেনাকাটার জন্য আলাদা আলাদা বাজেট রাখে। খাবারের ব্যবস্থা যে কত পদের তা হিসাবের বাইরে। মজার মজার খাবার তৈরি করা, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। কত আনন্দ, কত মজা, কত উল্লাস, কত খুশি। তার কোন শেষ নেই।
অথচ গরিবের ঈদ ভাঙাচুরা ঈদ। স্বল্প আয়, দুবেলা খাবার জুটে না ঠিকমতো পরিধানের পোশাক যোগান কঠিন হয়ে পড়ে। আর ঈদের আয়োজন কী করে করবে তারা? তাই এদের ভাগ্যে নতুন কাপড় জুটে না। পুরাতন কাপড় পরে ঈদগায় মাঠে উপস্থিত হতে হয়। সন্তানেরা মা- বাবার কাছে বারবার আবদার করে ব্যর্থ হয়। নিম্নমানের খাবার কিছু গুড়া দুধ আর সেমাই তাও ব্যবস্থা করতেও তাদের কত কষ্ট। এ ধরনের গরিব অসহায় মানুষদের প্রতি নজর দেওয়া বিত্তবান ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন।
বছর ঘুরে আসে ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। এ আনন্দ, এ খুশি সবার জন্য। এটাই জানা কথা, এটাই প্রসিদ্ধ। কিন্তু আসলেই কি ঈদ সবার জন্য, ঈদ এলে সত্যিই কি ধনী-গরিব সবার মধ্যে আনন্দ জেগে ওঠে, সবাই কি নতুন জামা-কাপড়, মজার খাবার পায়, সবাই কি মজতে পারে।
মহানবী (সা.)-এর যুগে ঈদ ছিল সত্যিকারের ঈদ। ধনী কি গরিব সবার জন্যই খুশির বার্তা নিয়ে আসত ঈদ। নবীজি ছিলেন অসহায়দের সহায়। তার অনুসারী সাহাবারাও ছিলেন তেমন। প্রিয় নবীর (সা.) জীবনেও ঈদ এসেছিল কিন্তু প্রিয় নবী কখনও একা ঈদ উপভোগ করেননি। বরং গরিব-দুঃখী, এতিম-অসহায়দের সঙ্গে নিয়ে ঈদ করেছেন।
লেখক:
হাসান আল বান্না,
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
