|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নারী হিসেবে না নিজেকে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে আমি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
তুমি সুন্দর চোখ দিয়ে দেখ -আমি নারী।
আমি মায়াবতী। আর কুৎসিত চোখে দেখ আমি আবেদনময়ী!
আমাদের জন্য প্রতিদিনই নারীর দিবস।
নারীর মতো দি বস দের দিবস বানায় দিলেন? নারী তো অলওয়েজ দি বস! (The Boss) কত্ত কাজ করে ঘরে বাহিরে...চোখ বন্ধ করে দেখুন ভাবুন না মিনিট দশেক।
নয়? ঘরে, বাইরে, চাকরি, পড়াশোনা এখনো কি আমরা সব জায়গায় খুব সহজ সাবলীলভাবে চলতে পারি? নাকি এখনো নীরবে যুদ্ধ করে নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে হয়? ভেতরে গিয়ে দেখুন, কত শত নারীর না বলা গল্প আছে, আছে কঠিন সংগ্রামের করুণ লম্বা ইতিহাস। ইচ্ছা প্রকাশের স্বাধীনতাটুকু আছে? নাকি কারো পারমিশনের অপেক্ষা লাগে? অনেক শিক্ষত নারীও এ সমাজে অবহেলিত, বঞ্চিত ও শোষিত...
সমাজ সভ্যতা নারী হিসেবে আমাকে শেখায়, কানে বাজিয়ে দেয়, মনে গেঁথে দেয়, অনেক কিছুই নাকি আমাকে, হ্যাঁ নারীকেই মেনে নিতে হয়, মুখ বুজে নাকি সহ্যও করতে হয়। তুমি এটা করো না, ওটা করো না, তুমি মেয়ে তোমার সম্মান যাবে, লোকে কি বলবে, বিয়ে হবে না, কেউ বিয়ে করবে না। এটা সেটা আরও কত কি...
মেয়ে মানুষ তো?
নাকি জড় পদার্থ?
হ্যাঁ, রক্ত-মাংসে গড়া তোমারই মতো মানুষ মেয়েরা
তাদেরও তো আছে একটি প্রাণ।
আছে একটি মন
আছে ভালো লাগা,
আছে মন্দ লাগা।
আছে রাগ, আছে অভিমান। নাকি এসব শুধু তোমাদের পুরুষদেরই মানায়! নারীদের সঙ্গে একদমই যায় না?
দুটো হাত দিয়ে ১২ রকম কাজ করি,
একজন হয়ে তিনজনের কাজ করি। তবে কেন আলাদা করি? কবে নারীকে মানুষ বলে ডাকব?
কবে নারী মানুষের মতোই হাঁটবে, ছুটবে, দৌড়োবে?
মানুষের মতোই ঘুরে বেড়াবে?
বাধাহীন স্বরে হা হা করে করে হাসতে পারবে?
নারী হাসলে হাসবে ফুল,
নারী হাসলে হাসবে পাখি,
নারী হাসলে হাসবে সকাল,
নারী হাসলে হাসবে গোটা জগত।
নারী, তুমি পৃথিবীতে আছো বলেই তার রূপ এতটা অপরূপ।
নারী দিবস নয় বরং নারী দি বস!
আচ্ছা, বিশ্ব ডিকশোনারি থেকে বিশ্রীভাবে বলা মেয়ে শব্দটা বাদ দেওয়া যায় না!মানুষ নামক শব্দটি যুক্ত করা যায় না? মন আর প্রাণ দিয়ে নারীকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা যায় না? নাকি হয় না?
আমি পথ চলি মানুষ হিসেবে,
মাথা উঁচু করে দাঁড়াই মানুষ হিসেবে,
অন্যায়ের প্রতিবাদ ও করি তাই ওই মানুষ হিসেবেই।
সহ্য করতে করতে মানুষের ছুটে চলার পা অবশ হয়ে গেলে, ভয়ঙ্কর রকম প্রতিবাদী হয়ে ওঠে সে।
অন্যায়ের শুরুতে যদি প্রতিবাদ করেন,
অন্যায়কারীকে শাস্তি দেন তবেই সেটা সমূলে ধ্বংস হয়, নতুবা অন্যায়কারী একদিন সীমা লংঘন করে ফেলে। বংশ বিস্তার করে। ডালপালা মেলে আপনার সমাজেরই চারপাশে।
বেড়ে উঠে আপনার দেশের কোণে।
নারীরা সব বাধা পেরিয়ে তার লক্ষ্যে পৌঁছে যাক স্বমহিমায়। এই নিষ্ঠুর বদ্ধ সমাজ ব্যবস্থার কড়া শেকল ভেঙে প্রতিবাদ করতে শিখুক হাত উঁচিয়ে। বন্ধ হয়ে যাক পুরুষশাসিত সব নারী সহিংসতা।
শ্রদ্ধা, প্রেম, স্বপ্নের নারীরা থাকেন মন্দিরে, স্বর্গে, আর ভারী ভারী সব বই পুস্তক বা পবিত্র গ্রন্থে।
মাটির নারীরা সেসব থেকে অনেক দূরে!
সেজন্যই কি নারী দিবস?
যেদিন আমরা নারী দিবস নয় বরং মানুষ দিবস পালন করতে শিখবো সেদিন আমরা পুরুষ থেকে সত্যিকারের মানুষ হব। পুরুষ আমার ভাই, পুরুষ আমার পিতা, কোনো এক পুরুষই হবে আমার প্রেমিক কিংবা স্বামী। আরেক পুরুষ হবে আমার অনাগত ছেলে। পুরুষ যার হাড় শক্ত হয়েছে নারীরই স্তন খেয়ে। (মা) ভালোবাসার এই বন্ধন থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই!
তবে কেন পুরুষ বিদ্বেষী হই?
কেনই বা নারী বিদ্বেষী হই?
চলুন আজ থেকে ভালো হয়ে যাই।
ভালো হয়ে জেগে রই।
কেন করি বিরোধিতা!
পারি না গড়তে সমতা?
নত, তুচ্ছ, নোংরা, ছোট ও নষ্ট পুরুষরাই নারীর প্রতি অসম্মান ছুড়ে দেয়। সৎ সাহসী, সুন্দর ও আসল পুরুষরাই নারীকে শ্রদ্ধা করে। কাপুরুষরা, অশান্তি, কষ্ট, ব্যথা, ব্যর্থতা, ঝরা, ক্লান্তি ও সকল দুঃখে প্রিয় নারীকে গালাগাল করে, প্রহার করে।
আর সুপুরুষরা এই সময়গুলোতে প্রিয় নারীকে পাশে চায়। তার সঙ্গ চায়। ভরসা চায়।
সবশেষে, আসুন আমরা মানুষ হয়ে উঠি।
মানুষকে মানুষ হিসেবে ভালোবাসি।
পরষ্পর পরষ্পরকে শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি, ভালোবাসি, অনুপ্রেরণা দিই
সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই...
যত্ন করি।
পাশে থাকি...পাশাপাশি হাঁটি জীবনের একই সরল রেখায়।
নারীঃ নিজেকে ভালোবাসুন। স্বাস্থ্যকর খাবার খান, ঘর ছাড়িয়া মাঝে মাঝে ঘুরতে বের হন, পরিমাণ মতো ঘুমান। ভালো বই পড়ুন ও পছন্দের গান শুনুন। সর্বোপরি, নিজের পছন্দ ও ভালো লাগার কাজগুলো করুন।
পুরুষঃ নিজের নারীকে জিতিয়ে দিন। ছোট ছোট উপহার দিন, প্রশংসা করুন, ঘুরতে নিয়ে যান, শাসন করুন ভালোবেসে... উপেক্ষা বা অশ্রদ্ধায় নয়! আপনি বহুগুণ বেশি জিতে যাবেন। যদি সে জিতে যায়। সব রকম মানুষকেই ভালোবাসুন।
এ পৃথিবীটা ভালোবাসায় বাসায় ভরে উঠুক।
হোক মানবিক আর আনন্দপূর্ণ।
‘প্রতিটি নারী একেকটি ফুলের মতো, আর এই ফুলগুলোকে নিয়ে মালা গাঁথার মাধ্যমে ও তাদের যত্ন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মাধ্যমে একটি সুন্দর, সুখী ও সমৃদ্ধশালী সমাজ নির্মাণ করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। নারীকে গালাগাল, প্রহার বা ছোট করে নয়! বরং নারীকে ভালোবেসে!
নিজে ভালো থাকি, আশে পাশের নারীকে ভালো রাখি। মেয়েটি মা, বোন, প্রেমিকা বা স্ত্রী যে নারীটি আপনার ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে নিজের সমস্ত ইচ্ছা আর ভালোলাগার কাজগুলো চোখের জলে ঢেকে হৃদয়ের গভীরে জলাঞ্জলি দিয়ে আপনাকে ভালোবেসে যাচ্ছে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত।
আপনি পুরুষ! শুধু তার হাসি মুখটাই দেখলেন। হৃদয়ের নীরব রক্তক্ষরণ কি দেখেছেন? কখনো কি একবার জানতে চেয়েছেন- একবার তার কি খেতে ভালো লাগে? কি করতে ভালো লাগে? কেমন চলতে ভালো লাগে? পড়েছেন একটি বারের জন্য তার মন? আছেন তো দেহের মাঝে ডুবে। মন বুঝবেন কী করে?
‘আপনি নারীদের ভালো ভাষা দিলে তারাও আপনাকে ভালোবাসা দিতে বাধ্য’
পুরুষ, আপনি জিতে যাবেন, যদি জিতে যায় নারী। সবাইকে মানুষ দিবসের শুভেচ্ছা।
লেখক: উদ্যোক্তা ও সমাজকর্মী
ইমেইল: jannatprome1@gmail.com>
