Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

ঐকমত্য কমিশন: গতি ও কাঠামোগত সুশৃঙ্খলা জরুরি

অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক

অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:০২ পিএম

ঐকমত্য কমিশন: গতি ও কাঠামোগত সুশৃঙ্খলা জরুরি

ফাইল ছবি

ঐকমত্য কমিশন দেশের রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জুলাই বিপ্লব ছিল একটি গণতান্ত্রিক জাগরণ, যা একনায়কতন্ত্র, দমননীতি ও রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছিল জনগণের অভ্যুত্থান। এই প্রেক্ষাপটে একটি কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে কমিশনের কাজকর্মে স্পষ্টতা, গতি ও নীতিগত ভিত্তি থাকা অত্যাবশ্যক।

কমিশন ইতোমধ্যে কিছু ভালো উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ অন্যতম। তবে দুঃখজনকভাবে লক্ষণীয় যে, পুরো প্রক্রিয়াটি ক্রমশ ধীরগতির হয়ে উঠছে এবং অনেক ক্ষেত্রে এর কাজকর্ম মনে হচ্ছে পূর্বনির্ধারিত নিয়ম ও পরিকল্পনা ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। কোনো জাতীয় কমিশনের জন্য এটি কাম্য নয়।

ঐকমত্য কমিশনের সাফল্যের পূর্বশর্ত হলো একটি সুনির্দিষ্ট ‘Rules of Business’, যার মূল ভিত্তি হবে গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অর্থ এই নয় যে সব সিদ্ধান্তে শতভাগ ঐকমত্য লাগবে; বরং এর অর্থ হলো প্রতিটি ইস্যুতে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। বিশ্বের কোনো উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই শতভাগ সম্মতি অপেক্ষা করে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সম্ভব হয়নি। সুতরাং কমিশনের রুলস অব বিজনেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতকে গ্রহণযোগ্যতা দিতে হবে।

কমিশনের কাজ যদি কার্যকর ও ফলপ্রসূ হতে চায়, তবে প্রতিটি সংস্কার ইস্যুকে পৃথকভাবে গ্রহণ করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, প্রথমে একটি ইস্যু ধরা যাক, নির্বাচন সংস্কার। এরপর সেই বিষয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের লিখিত মতামত আহ্বান করা হবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা জমা দিতে বলা হবে। প্রথম সভায় সেই মতামতগুলো উপস্থাপন করা হবে, দ্বিতীয় সভায় দলগুলো নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে এবং তৃতীয় সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

এই পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে স্বচ্ছতা, গতি এবং দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার সুযোগ। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শুধু সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল নয়। বরং যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, তারাও যেন কমিশনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যবস্থা থাকা জরুরি। 

গণতন্ত্র মানে বৃহত্তর অংশগ্রহণ। ছোট দলগুলো বা নতুন উদীয়মান রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে উপেক্ষা করলে এটি প্রকৃত ঐকমত্য কমিশন হয়ে উঠবে না। ঐকমত্য কমিশন যদি সত্যিই দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করতে চায়, তবে তার উচিত হবে গতি বাড়ানো, কাঠামো নির্ধারণ করা এবং গণতান্ত্রিক নীতিমালায় অটুট থাকা। অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব, অস্পষ্টতা ও সিদ্ধান্তহীনতা জাতির প্রত্যাশাকে ক্ষুণ্ন করবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা সংকটের মুখে ফেলতে পারে।

এখনই সময় স্পষ্ট পথে অগ্রসর হওয়ার।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম