Logo
Logo
×

বিচ্ছু

রম্যগল্প

ঘা সমাচার

Icon

সাদিকুল নিয়োগী পন্নী

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘা সমাচার

মুখের ঘা নিয়ে দারুণ সমস্যায় পড়েছে আবুল। ঠিকমতো খেতে পারে না। কথা বলার সময় দুই ঠোঁটের কিনারা দিয়ে আঠালো তরল পদার্থ গড়িয়ে পড়ে। প্রথম কিছুদিন কবিরাজি ওষুধ খেয়েছে। তাতে তেমন সুফল মিলেনি। অসুস্থার জন্য যে কদিন ছুটি নিয়েছিল তাও শেষ পর্যায়ের দিকে। এদিকে নতুন বস যোগদান করবেন কয়েকদিনের মধ্যে। তখন অফিসে থাকাটা তার খুব প্রয়োজন। বউয়ের পরামর্শে আবুল শহরের নামকরা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রিয়াজ সাহেবের চেম্বারের গেল।

ডাক্তার সব শুনে একটা ছোট টর্চ লাইট জ্বালিয়ে আবুলকে হা করতে বললেন। হা করতে গেলে আবুলের ঠোঁটের দুই পাশে টান লাগে। অনেক কষ্টে মুখ কিছুটা ফাঁকা করলে টর্চের আলোয় আবুলের মুখের ভেতরের অবস্থা দেখার চেষ্টা করলেন ডাক্তার।

‘মুখের অবস্থা বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। আর একটু বড় করে হা করেন।’

‘স্যার, হা করতে কষ্ট হয়।’

‘এই দেখেন আমি কেমন করে হা করছি।’ এই বলে ডাক্তার আবুলকে দেখালেন।

আবুল ডাক্তারকে অনুসরণ করে হা করল।

ডাক্তার আতঙ্ক কণ্ঠে বললেন, ‘সর্বনাশ! জিহ্বা থেকে গলা পর্যন্ত ক্ষত ছড়িয়ে পড়েছে। এমন অবস্থা করলেন কী করে?’

আবুল হা করে রইল। মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হলো না।

ডাক্তার বলল, ‘ঘা দেখে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। কোনো বদ অভ্যাস থাকলে বলেন।’

আবুল মুচকি হেসে বলল, ‘স্যার, রোগের কারণ আমি জানলে আপনার কাছে নিশ্চয়ই আসতাম না। নিজের চিকিৎসা নিজেই করে নিতাম।’

ডাক্তার তার আধপাকা চুল ভর্তি মাথায় ডান হাতের আঙুল দিয়ে চুলকাতে চুলকাতে বললেন, ‘বাচ্চাদের অনেকসময় এমন হয়ে থাকে। আপনার মতো মাঝ বয়সি লোকের কেন এমন হলো সেটাই তা বুঝতেসি না। রোগের উৎসটা জানতে পারলে চিকিৎসা করতে সহজ হতো।’

আবুল টিস্যু দিয়ে ঠোঁটের দু‘পাশের লালা মুছে নির্বাক হয়ে বসে রইল।

‘পান, জর্দার নেশা আছে?’ ডাক্তার ফের প্রশ্ন করলেন।

‘না স্যার।’

‘বিড়ি-সিগারেট?’

‘বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে চাপে পড়ে এক-দুই টান দিই। নিজে কিনে কোনোদিন খাইনি।’

‘আমার মনে হয় আপনি মাছ-মাংস, শাকসবজি, ডিম-দুধ কম খান।’

আবুল হাতের মাসল দেখিয়ে বলল, ‘আমাকে কী এমন মনে হয়?’

ডাক্তার বড় বড় চোখে আবুলের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওরে বাবা। পুরাই তো কুস্তির দেহ। এমন শরীরে এ রোগ বেমানান লাগে। আচ্ছা, আপনি সম্প্রতি দেশের বাইরে ভ্রমণ করেছেন? রোগের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানী হয়েছে।’

‘না স্যার, অনেক বছর ধরে দেশের বাইরে যাওয়া হয় না।’

‘বিদেশ ভ্রমণ করে এসেছে এমন কোনো বান্ধবীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে?’

‘জি না স্যার। বউয়ের প্যারায় জীবন যায় যায় অবস্থা! আবার বিদেশি বান্ধবী!’

‘মুখের রুচি কেমন? জিহ্বায় খাবারের স্বাদ টের পান?’

‘স্যার, জিহ্বার অনুভূতি অনেক বছর আগেই নাই হয়ে গেছে। তাই খাবার ভালো-মন্দ তেমন বুঝি না। সব একরকম লাগে।’

‘আমার মাথায় কাজ করছে না। রোগ নির্ণয়ের জন্য আপনার জিহ্বা ও মুখের ভেতরের মাংস পরিক্ষা করতে হবে।’ বললেন ডাক্তার।

এমন সময় আবুল বলল, ‘আচ্ছা স্যার, মানুষের হাতের আঙুলে কী ঘা হওয়ার মতো জীবাণু থাকে?’

‘হঠাৎ এ প্রশ্ন?’

‘স্যার, আমি ঘুমের মধ্যে প্রায়ই স্বপ্ন দেখি আঙুল চুষতেসি। ঘুম ভেঙে গেলে দেখি স্বপ্নের রেশ রয়ে গেছে। আঙুল আমার মুখের ভেতর।’

ডাক্তার হাসতে হাসতে বললেন, ‘আপনি বাচ্চা নাকি! এ বয়সে হাতের আঙুল চাটেন! হা হা হা...। অবশ্য হাত পরিষ্কার থাকলে এমন কিছু হওয়ার আশঙ্কা কম।’

‘স্যার, তাহলে পা বা পায়ের আঙুল চাটলে?’

‘আপনার মাথা খারাপ হয়েছে নাকি? এ কাজ করে কেউ!’

আবুল মাথা নিচু করে বলল, ‘আমি নিয়মিত অফিসের বসের...!’

রম্যগল্প

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম